ক্লাব নয়, দেশই তাঁর কাছে আগে। সব সময়।
লিওনেল মেসির মতোই এত দিন তাঁর নামে বদনাম ছিল যে, ক্লাবের জার্সিতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো যতটা ঝলমলে দেশের জার্সিতে ততটা নন। কিন্তু ইউরোয় নেদরাল্যান্ডসের বিরুদ্ধে রোনাল্ডোর একজোড়া গোল আপাতত সে সব সমালোচনাকে আস্তাকুঁড়েতে ছুড়ে ফেলেছে। ‘সি আর সেভেন’ পরিষ্কার জানাচ্ছেন, দেশের হয়ে নামার মাধুর্যটা আলাদা। এ তাঁর হৃদয়েরই কথা। “ক্লাবের পরিবেশের সঙ্গে দেশের কোনও তুলনা হয় না। দু’টো আলাদা ব্যাপার। জাতীয় দলে আমার প্রচুর বন্ধু-বান্ধব। একই ভাষায় কথা বলি। একই সঙ্গে লড়ে যাই দেশের সম্মানের জন্য। ক্লাবে রোজ সতীর্থদের সঙ্গে দেখা হয়। যোগাযোগটা থাকে নিয়মিত। হৃদয় থেকে বলছি, দেশের হয়ে খেলাটা আমার বরাবরই বেশি পছন্দের। দেশই আমার কাছে আগে,” চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে নামার আগে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন রোনাল্ডো। যাদের তিনি শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবেই মনে করেছেন। রোনাল্ডোর কথায়, “কঠিন ম্যাচ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। চেকদের অবস্থাটা আমাদের মতোই। প্রথম ম্যাচের পর আস্তে আস্তে ফর্মে ফেরা। ম্যাচ পঞ্চাশ-পঞ্চাশ। আশা করছি, ভাল ভাবে কোয়ার্টার ফাইনালটা শুরু করতে পারব।” |
আর পর্তুগালের ‘ভাল শুরু’-র মানে তাঁর শুরুটা ভাল হওয়া দরকার। শুধু তাঁর দেশ নয়, গোটা দুনিয়া জানে রোনাল্ডো ফর্মে থাকলে পর্তুগাল ছুটবে, নইলে মুখ থুবড়ে পড়বে। পর্তুগিজ মহাতারকা মানছেন না। বরং বলছেন, “তা কেন? আমি যখন গোল পাচ্ছিলাম না, তখন অন্যেরা গোল করে ম্যাচ জিতিয়েছে। আমাদের টিমে কেউই অপরিহার্য নয়। সবাই চেষ্টা করে কী ভাবে নিজের সেরাটা দেওয়া যায়।” একই সঙ্গে জানিয়েছেন, কেন তিনি ইউরোর প্রথম দু’ম্যাচে গোল পাননি। “ইউরোর প্রথম দু’ম্যাচে আমি চেষ্টা কম করিনি। কিন্তু গোল পেলাম না। তবে ব্যাপার হচ্ছে, আপনাকে নিজের এবং টিমের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। কিন্তু দেখুন গ্রুপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গোল পেয়ে গেলাম। যা আমার এবং টিমের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।”
রোনাল্ডোর মুখে এখন আমি নয়, আমরা। অধিনায়ক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা করছেন টিমমেটদের সুযোগ-সুবিধে বুঝে নিতে। “আমি চেষ্টা করি ওদের কাজটা সহজ করে দেওয়ার। ওদের যে কোনও সমস্যা মেটাতে পুরোদমে ঝাঁপাই। একজন অধিনায়কের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, টিমের সঙ্গে যোগাযোগটা ঠিক রাখা। আমার সেটা আছে। সবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল।”
ইউরোতে এখনও পর্যন্ত তাঁর সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ মনে হয়েছে জার্মানদের। রোনাল্ডো বলছেন, “গ্রুপের প্রথম ম্যাচটাই সবচেয়ে কঠিন ছিল। আমরা হেরেছিলাম। পরে ফিরেও এসেছিলাম ঠিক। ডাচদের বিরুদ্ধে আমরা প্রায় নিখুঁত ম্যাচ খেললাম। বলের দখল হারিয়েছি অনেক বার, কিন্তু হাল ছাড়িনি। বরং লড়ে ফিরে এসেছি। আর সেটাই আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনালে।” ‘সি আর সেভেন’ বলতে পারছেন না, আর ক’টা ইউরো খেলবেন। শুধু বলছেন, “কী ভাবে বলব? আগামী পাঁচ বছরে আমার হয়তো এ রকম গতি থাকবে না। যা-ই হোক, এখন আমি আমার ফুটবল উপভোগ করতে চাই। নিজের সেরাটা দেব, এটুকু বলতে পারি।” |