যুঝতে পারব ভেবেই মার খেয়ে গেলাম
স্টেশন ম্যানেজারকে যে অপহরণ করবে, তা ওরা জানিয়েই গিয়েছিল।
পরনে জিন্স আর গেঞ্জি, মুখে হিন্দি বুলি রেললাইনের পাশে জঙ্গল থেকে হঠাৎই বেরিয়ে এসেছিল সাত জন। না ছিল জলপাই পোশাক, না আগ্নেয়াস্ত্র। হাতে স্রেফ লাঠি।
সময়টাও রাতবিরেত নয়। সকাল ১০টা। ঝাড়খণ্ডের শিমুলতলার কাছে নিশ্চিন্ত মনেই রেললাইনে কাজ করছিলেন ১৬ জন কর্মী। লোকগুলো এসে যখন তাঁদের মোবাইল ছিনিয়ে নিচ্ছে, তখনও তাঁরা বোঝেননি ওরা কারা।
মোবাইল কেড়ে নিয়ে লোকগুলো চেঁচিয়ে বলেছিল, ‘কাম বন্ধ করো’। কিন্তু ওঁরা তা মানবেন কেন? “প্রথমে তো বুঝিনি! ভেবেছিলাম, সাধারণ দুষ্কৃতী। হাতে বন্দুক-টন্দুক নেই। বরং আমাদের কাছেই শাবল, গাঁইতি, কোদাল। সংখ্যাতেও আমরা বেশি। ভাবলাম, যুঝে নিতে পারব” আসানসোল রেল হাসপাতালে শুয়ে বৃহস্পতিবার বলেন বছর চল্লিশের অমর ঠাকুর। “ভুল যখন ভাঙল, ততক্ষণে ওদের মারে বাঁ হাত ভেঙে গিয়েছে।”
কাতরাচ্ছিলেন যন্ত্রণায়। কিন্তু ওরা রেয়াত করেনি। অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও টেনে-হিঁচড়ে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। আর তখনই প্রথম তাঁরা আঁচ করেন, মাওবাদীদের খপ্পরে পড়েছেন। লোকগুলো অবশ্য পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। শুধু জানিয়ে দেয়, ওরা এসেছে রেল আটকাতে। আর সে কারণেই তুলে আনা হয়েছে তাঁদের।
রেল হাসপাতালে অমর ঠাকুর। ছবি: শৈলেন সরকার
“ওরা আমাদের জঙ্গলে বসিয়ে রেখে মোবাইল ফেরত দেয়। কিন্তু চালু করতে বারণ করে। হুমকি দেয়, ৪০ মিনিটের আগে যেন জঙ্গল ছেড়ে না বেরোই।” বাঁ হাতে প্লাস্টার আর সারা গায়ে যন্ত্রণা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে চলেন অমরবাবু “যাওয়ার আগে ওরা বলে যায়, এ বার ঘোড়পারন স্টেশনের ম্যানেজারকে অপহরণ করা হবে।”
বাকিটা ইতিমধ্যেই সকলের জানা। বুধবার ওই ঘটনার পরেই, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘোড়পারনের স্টেশন ম্যানেজার বিজয় কুমার ও দুই পোর্টারকে অপহরণ করা হয়। যাওয়ার সময়ে লোকগুলো বলে, লাইনে মাইন পোঁতা আছে। ট্রেন চালালেই উড়িয়ে দেওয়া হবে।
অমরবাবুরা অবশ্য তখনও সে সব জানেন না। তখনও তাঁরা জঙ্গলে ভয়ে সিঁটিয়ে। কাছাকাছি থাকতে পারে লোকগুলো। তাই মোবাইল খোলার সাহসটুকু পাননি। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে দলের দু’এক জন মুখ বাড়িয়ে উঁকিঝুঁকি দেন। কাউকে দেখতে না পেয়ে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসেন রেললাইনের কাছে।
ওই জায়গা থেকে ঘোড়পারন স্টেশন প্রায় কিলোমিটার আড়াই। সাহসে ভর করে লাইন ধরেই হাঁটা দিয়েছিলেন ১৬ জন। যখন পৌঁছলেন, স্টেশন ম্যানেজার নেই, লোকগুলোও নেই। লাইন পরীক্ষা করে মাইন মেলেনি। বিকেলে জঙ্গল থেকে তিন জনকে উদ্ধার করে নিরাপত্তাবাহিনী। রাতে অমরবাবুকে আসানসোল রেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেই থেকে রেলকর্তারা অনেকেই হাসপাতালে অমরবাবুকে দেখতে এসেছেন। আসানসোলের ডিআরএম জগদানন্দ ঝা বলেন, “ওঁকে সুস্থ করে তুলতে আমরা সব ব্যবস্থা নিয়েছি।” শিমুলতলা, ঘোড়পারন, নরগঞ্জ ও লাহাবন্ধে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
বিকেল পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ায় অমরবাবুর বাড়িতে কিন্তু খবর দেওয়া হয়নি। গত কয়েক বছর তিনি আসানসোল ডিভিশনেই কর্মরত। বাড়িতে আছেন মা-স্ত্রী-ছেলে। তাঁদের জানানোর কথা শুনলেই তিনি হাঁ-হাঁ করে উঠছেন, “শুনলে ওরা দুশ্চিন্তা করবে। ওদের বলবেন না প্লিজ!”
ভাঙা হাত জোড়া লাগা পর্যন্ত চেপে রাখতে পারবেন কি, অমরবাবু?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.