অনুবাদে ‘মনের মানুষ’ চিত্রনাট্য
অনন্ত যাত্রা
নদীর ওপর দিয়ে এগিয়ে চলেছে হাউসবোট, পিছনে বিস্তীর্ণ চর, জলের ওপর দিয়ে উড়ে যায় এক ঝাঁক বক। হাউসবোটের ভিতর বসে আছেন লালন, তাঁর স্কেচ করছেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। মনের মানুষ-এর এই প্রথম দৃশ্যটি হয়তো মনে আছে সকলেরই, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও লালনের কথোপকথনের মধ্যে দিয়েই গৌতম ঘোষ আস্তে আস্তে উন্মোচন করেছিলেন লালনের ফকির হয়ে ওঠার নানা পর্ব, সমাজ-প্রেক্ষিত। চিরাচরিত লালন-জীবনী নয়, মনের মানুষের সন্ধানে এক অনন্ত যাত্রার কথা তুলে আনতে চেয়েছিলেন গৌতম, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে। বলেছেন ‘চারদিকে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, সাংস্কৃতিক অসহিষ্ণুতা! সুনীলদা... লালনকে নিয়ে একটা উপন্যাসই লিখে ফেললেন। সেটা আবার আমায় একটু উসকে দিল।
... আমার মনে হয়েছিল লালনের এই কীর্তি কাহিনী মানুষের কাছে তুলে ধরার এই অস্থির সময়ে একটা প্রয়োজন আছে।’ লালন যেহেতু দুই বাংলার, ছবিটিও ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনা। এর আগে বাংলাদেশের তানভীর মোকাম্মেলও লালনকে নিয়ে ছবি করেছেন। গৌতমের মন্তব্য ‘লালনের মতো একটা বিষয় নিয়ে ২০টি ছবি নির্মিত হলেও এর আবেদন শেষ হবে না।’ সদ্য প্রকাশ পেল মনের মানুষ-এর ইংরেজি চিত্রনাট্য দ্য কোয়েস্ট (নিয়োগী বুকস, ১২৫০.০০), শংকর সেনের অনুবাদে। চমৎকার মুদ্রণ। পরিচালকের ভূমিকা-সহ কলাকুশলীদের পরিচয়, নির্বাচিত সমালোচনা। শুটিং-স্ক্রিপ্টের সঙ্গে প্রচুর স্থিরচিত্র (সঙ্গে তারই একটি)। বর্ণময় বইটি ওল্টাতে ওল্টাতে মনে হয় যেন ছবিটি ফের ফিরে দেখছি... সেই অরণ্যভূমি, সেই নদী, সেই উদার আকাশের নীচে সরল-প্রকৃতি মানুষের গানে-নাচে ঋদ্ধ এক অতীন্দ্রিয় জীবন— যে জীবন মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরকে খুঁজে বেড়ায়। বইটির পিছনের প্রচ্ছদে আছে গৌতম ঘোষের শিল্প-অভিপ্রায়ও: ‘দি ডেমোলিশন অব বাবরি মসজিদ (ওয়াজ) ফলোড বাই এক্সটেনসিভ কমিউনাল রায়টস... আই রিয়েলাইজড ইট উড বি আ রেসপন্সিবল অ্যাক্ট টু প্রোডিউস আ ফিল্ম অন আ নন-ইনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড নন-সেকটারিয়ান ওয়ারশিপার লাইক কবির অর লালন।’

রবীন্দ্রবীক্ষা
‘বিশ্বকবি’কে নতুন চোখে দেখা, বিশ্বেরই আঙিনায়। এই লক্ষ্যে প্রায় দেড় হাজার পৃষ্ঠার এক সংকলন প্রকাশিত হল সম্প্রতি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে। বরুণকুমার চক্রবর্তীর সম্পাদনায় রবীন্দ্রবীক্ষা (পারুল) নামের সেই সংকলনে সঙ্গীত, সাহিত্য, শিল্প, দর্শন নানা বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের অবদান বিচার করেছেন ইংরেজি-সহ ভারতীয় ভাষার নানা লেখক। আঠেরোটি উপবিভাগে নানা মত, নানা আলোচনা। সঙ্গে সুমুদ্রিত অনেক ছবি। বইয়ের সঙ্গে বিনামূল্যে ‘আ ডে উইথ গীতাঞ্জলি’ নামে একটি ডিভিডি-তথ্যচিত্র, পরিচালনায় অংশুমান বিশ্বাস।

ছোটদের নাটক
দেড় বছর হল চলে গিয়েছেন নাট্যকার রমাপ্রসাদ বণিক। ২০০১-এ তিনি এসেছিলেন নেহরু চিলড্রেন্স মিউজিয়ম-এ ছোটদের নাটকের প্রশিক্ষণ দিতে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তাঁরই পরিচালনায় শুরু হয়েছিল চিলড্রেন্স মিউজিয়াম নাট্যদলের নাট্য উৎসব। এ বছর তার নবম বর্ষ। পাঁচ দিনের উৎসব শুরু ১৮ জুন সন্ধে ছ’টায় আকাদেমি অব ফাইন আর্টস-এ। দেখানো হবে রমাপ্রসাদ রচিত ও নির্দেশিত তিনটি নাটক ‘পরিচয়’, ‘অনুভব’, এবং ‘লুক্সেমবার্গের লক্ষ্মী’। উৎসবের অন্য দুটি নাটক হল ‘নরঃ নরৌ নরাঃ’ এবং ‘রাজকোষ’।

হলিউড কমেডি
ম্যানহাটান স্ট্রিটের এক বহুতল বাড়ির বাইরের দেওয়ালে বিরাট একটা ঘড়ির কাঁটা ধরে ঝুলছেন হ্যারল্ড লয়েড, অনেক নীচে রাস্তায় মানুষজন যানবাহন। ১৯২৩-এর ছবি ‘সেফটি লাস্ট’। আবার ১৯৩৫-এ মার্ক্স ব্রাদার্সের ছবি ‘আ নাইট অ্যাট দ্য অপেরা’। নির্বাক-সবাক সিনেমার সন্ধিক্ষণ, হলিউড কমেডির স্বর্ণযুগ। ১৯৩৯-এ ‘নিনচকা’, ১৯২৫-২৬-এ পর পর চ্যাপলিনের ‘দ্য গোল্ড রাশ’ আর বাস্টার কীটনের ‘দ্য জেনারেল’ (সঙ্গের ছবি)। ‘শিল্পী হিসাবে বাস্টার কীটন চ্যাপলিনের চেয়ে কোন অংশে কম ছিলেন না, তবে তাঁর মেজাজ ছিল অন্যরকম। কীটন যেন আরো নৈর্ব্যক্তিক, আরও নিরাবেগ, আরও মননশীল। তাঁর ছবিতে চ্যাপলিনের মত চোখের জল ফেলার সুযোগ নেই।’ লিখেছেন সত্যজিৎ। এ রকমই আরও কিছু ছবি নিয়ে হলিউড কমেডির আসর নন্দন-এর উদ্যোগে, ২১-২৩ জুন। ‘বাবার পছন্দের কমেডিগুলিই দেখানো হচ্ছে এ বারে’, জানালেন সন্দীপ রায়। এ দিকে ২০ জুন সন্ধ্যা ৬টায় কুরোসাওয়ার ছবি ডস্টয়েভস্কি-র ‘ইডিয়ট’ দেখানো হবে গোর্কি সদনে, আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাবের উদ্যোগে।

দশভুজা
কুমোরটুলির প্রতিমা-নির্মাতা স্বামী দুলালচন্দ্র পালের মৃত্যুর পর মেয়ে মালাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসার হাল ধরতে হয়েছিল আদতে কৃষ্ণনগরের মেয়ে মায়ারানিকে। কুমোরটুলির প্রথম মহিলা শিল্পী কামাখ্যাবালার আদর্শেই শুরু হয় সেই পথ চলা। তার পর কেটে গিয়েছে আড়াই দশকেরও বেশি সময়। মালা এখন নিজেই কুমোরটুলির প্রথম সারির মহিলা শিল্পী। মালার সঙ্গে মা মায়ারানি তো আছেনই, এখন মেয়ে বিউটিও যুক্ত হয়েছেন। তবে এখন আর শুধু প্রতিমা গড়ার কাজের মধ্যেই আটকে নেই মালাদেবী, কুমোরটুলির শিল্পী, বিশেষ করে মহিলা শিল্পীদের নিয়ে সংগঠনও তৈরি করেছেন তাঁদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্য। মালা পালের ওই বহুমুখী কর্মকাণ্ড এ বার দেখতে পাওয়া যাবে বিমলকৃষ্ণ সরকার প্রযোজিত ‘দশভুজা’ তথ্যচিত্রে। পরিচালক পার্থ সরকার। ২০ জুন, দুপুর তিনটায় নন্দন-৩ প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে ছবিটি।

সনজিদার গান
মানবাত্মার স্বাধীনতার অপর নাম রবীন্দ্রসংগীত। রবীন্দ্রগানকে সেই জায়গা থেকেই অন্তঃস্থ করেছিলেন সনজিদা খাতুন। পাক আমলে পূর্ব বাংলায় কোন চরম পর্যায়ে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রসংগীতকে, তা ভাবলে শ্রদ্ধায় নতশির হতে হয়। এক যুগেরও আগে তাঁর গানের একটি সিডি বেরিয়েছিল এই বাংলা থেকে। ২৪ জুন সন্ধে ৬ টায় জীবনানন্দ সভাঘরে বিহান মিউজিকের পক্ষ থেকে প্রকাশ পাবে তাঁর দশটি গানের সিডি অ্যালবাম। সেই সঙ্গে ‘একুশে’ প্রকাশ করবে কল্পলতা: প্রসঙ্গ রবীন্দ্রসংগীত নামক একটি সংকলন-গ্রন্থ। তাতে রবীন্দ্রসংগীত বিষয়ক প্রবন্ধ ছাড়াও থাকবে কিছু ব্যক্তিগত গদ্য, রবীন্দ্রসংগীতের অভিঘাতে রচিত কিছু কবিতা, ছবি আর ছোটগল্প। এই উপলক্ষে সে দিন শোনা যাবে গান ও কবিতাও। সিডি আর বই দু’টিই আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করবেন আঁকিয়ে-লিখিয়ে হিরণ মিত্র।

বিশ্ব সঙ্গীত দিবস
শুরু হয়েছিল ফ্রান্সে, তার পর থেকে নানা দেশে একুশে জুন পালিত হয় বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। মেলবোর্ন, কি কুয়ালালামপুরের মতো কলকাতায়ও দু’দিন আগেই ১৯ জুন জি ডি বিড়লা সভাঘরে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় উদ্যাপিত হবে ত্রিশতম বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। ঘটবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতের মেলবন্ধন। কৃষ্ণের প্রতি রাধার আকুতি যেমন ধরা পড়বে শিল্পী শান্তা দাসের কীর্তনে, তেমনই শিল্পী সুকন্যা ঘোষের কণ্ঠে পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীত অপেরার মাধ্যমে। ভারতীয় সিনেমার শতবর্ষ উপলক্ষে একই মঞ্চে নীপবীথি, সোমলতা, শ্রীরাধা, সৌম্যজিৎ শোনাবেন বেশ কিছু মাইলস্টোন হিন্দি গানের অংশবিশেষ, শুধুমাত্র পিয়ানোর সঙ্গে, বাজাবেন সৌরেন্দ্র। থাকবেন ফুটপাথের শিল্পীরাও— কেউ পার্ক স্ট্রিটে বাঁশি বাজান, কেউ লোকাল ট্রেনে অ্যাসবেসটস বাজিয়ে গান করেন, কেউ মন্দিরে কীর্তন করেন। শেষে শহরের বিশিষ্ট শিল্পীরা এক সঙ্গে গাইবেন ‘জনগণমন’, এ বছর এ-গানটিরও একশো বছর। অংশ নেবেন জার্মান লোকসঙ্গীত শিল্পী স্টেফান স্টপক। আয়োজনে ‘ইউ অ্যান্ড আই’।

স্বপ্ন থেকে শপথ
নথি বলবে, ৩০ মে ২০১২ তাঁর প্রয়াণ। বন্ধুজনেরা জানেন, ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬-এ জন্ম নেওয়া ব্যারাকপুরের সোমনাথ দাস মাত্র পঁয়ত্রিশেই প্রয়াত বলা ভুল। দুঃসহ দারিদ্র, এবং রক্তে দুরারোগ্য ব্যাধি ছিল সঙ্গী। তারই ফাঁকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর, পিএইচ ডি-র জন্য আমৃত্যু প্রয়াস। কবিতা লিখেছেন, পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন, সম্পাদিত কাগজ পুরস্কৃতও হয়েছে। প্রকাশিত দু’টি কাব্যগ্রন্থ কালপুরুষের কাব্যকথা এবং পৃথিবীর প্রথম কমনরুম। সম্পাদনা করেছেন বিনায়ক সেনকে নিয়ে একটি সংকলন। দান করে গিয়েছেন দু’টি স্বপ্নময় চক্ষু। প্রকাশন সংস্থা ‘ডানা’র শীর্ষনামেও সেই স্বপ্নের ইশারা। রয়ে গেল সোমনাথকে নিয়ে নির্মিত অভ্র আইচের তথ্যচিত্র ‘কালপুরুষের কথা’। ‘প্রতিটি কোষের মৃত্যুকথা কেমোথেরাপি জানে’, অসহায় সংরাগে লিখেছিলেন তিনি। ভবিষ্যতে এমন আরও অনেক অসহায়তার পাশে দাঁড়াতে ‘লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি’-র উদ্যোগে গঠিত হয়েছে রেজিস্টার্ড সংস্থা ‘লিটল ম্যাগাজিনস লাইব্রেরি ইন নিড’ (১৮ এম টেমার লেন, ৯৮৩০৪৬৩৬৮৬)। সোমনাথকে বাঁচাতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু, একটি নিভে-যাওয়া স্বপ্ন থেকে জন্ম নিয়েছে শপথ। ২০ জুন বিকেল ৫-৩০-য় থিয়জফিক্যাল সোসাইটিতে তাঁর স্মরণসভা।

মন মজায়ে
সূচনা জয়দেবের গীতগোবিন্দ। পরে চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, গোবিন্দদাসের রচনা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে পদাবলিকে। ষোড়শ শতকে চৈতন্য মহাপ্রভুর হরিনাম সংকীর্তন পৌঁছে যায় ঘরে ঘরে। শুরু হল নতুন অধ্যায়— পদাবলি কীর্তন। আজও প্রাচীন এই গানের ধারা রয়ে গিয়েছে বাঙালি হৃদয়ে। কীর্তন প্রভাবিত করেছে দ্বিজেন্দ্রলাল, নজরুলকে। রবীন্দ্রনাথ লিখলেন ভানুসিংহের পদাবলি। আশ্রয় নিয়েছেন এ যুগের সুরকাররা। বিভিন্ন ছবিতে ঘুরে ফিরে এসেছে কীর্তন। কীর্তনের এই বিবর্তন ধরা পড়বে ২২ জুন জ্ঞান মঞ্চে ‘মন মজায়ে লুকালে কোথায়’ শীর্ষক নাচ, গান ও পাঠের নব্বই মিনিটের কোলাজে। পরিকল্পনায় শুভা পাল, বিশ্বজিৎ মতিলালের সঙ্গে পাঠেও আছেন তিনি। গানে চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত, শুভাশিস মজুমদার প্রমুখ। উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন অনুপ মতিলাল। আয়োজনে প্রয়াস।

কথায় গানে
কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটকের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ আশি বছরের জীবনে গান লিখেছেন দু’হাজারেরও বেশি। ১৮৭৩-এ, মাত্র এগারো বছর বয়সে ব্রাহ্মসমাজের প্রার্থনাসঙ্গীত হিসেবে গুরু নানকের একটি ভজনের অনুসরণে ‘গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বলে’ গানটি দিয়ে তাঁর গান রচনা শুরু, আর ১৯৪১-এ, নিজের শেষ জন্মদিনের কয়েক দিন আগে লেখা ‘হে নূতন, দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ’ তাঁর শেষ গান। প্রেম, প্রকৃতি, পূজা, নাট্যগীতি, স্বদেশ সহ বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত সেই সব গান নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অর্থানুকূল্যে ২৩-২৪ জুন বিকেল চারটে থেকে পরিষৎ সভাগৃহে আলোচনা ও সংগীতসভার আয়োজন করেছে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ। উদ্বোধন করবেন রামকুমার মুখোপাধ্যায়, থাকছেন বিশিষ্ট শিল্পী ও গবেষকরা।

নটীর পূজা
১৯৩২-এ চিত্রা সিনেমাহলে মুক্তি পেয়েছিল ‘নটীর পূজা’, রবীন্দ্রনাথ পরিচালিত একমাত্র চলচ্চিত্র। তার শুটিং হয়েছিল নিউ থিয়েটার্সে, রবীন্দ্রনাথ যাকে বলেছিলেন ‘দ্বিতীয় শান্তিনিকেতন’। তবে ১০ চণ্ডী ঘোষ রোড, আগের ৩০ নম্বর টালিগঞ্জ-এ রবীন্দ্রস্মৃতি আজ আর প্রায় কিছুই নেই। ১৯৪০-এই নিউ থিয়েটার্স স্টুডিয়োয় আগুন লেগে অনেক ছবির সঙ্গে ‘নটীর পূজা’র নেগেটিভও পুড়ে যায়। তবে তার একটি আংশিক ১৬ মিলিমিটার ফিল্ম রাখা আছে শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রভবন সংগ্রহে। ‘নটীর পূজা’ চলচ্চিত্রায়ণের ৮০-তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে উত্তরপাড়া বেঙ্গল স্টুডিও প্রদর্শকক্ষে এখন চলছে চলচ্চিত্রটির অভিনয়-ইতিহাস নিয়ে একটি স্থিরচিত্র প্রদর্শনীর। ‘নটীর পূজা’র বহু দুর্লভ ছবি ও মূল পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি নিয়ে প্রদর্শনীটির পরিকল্পক অরিন্দম সাহাসর্দার।

চাণক্য
দিল্লির মঞ্চে চাণক্যই এখন খবরের কেন্দ্রে। রাইসিনা হিলসকে কেন্দ্র করে তোলপাড় যখন তখনই কলকাতার মঞ্চেও শনিবার নামলেন ইতিহাসের সেই চাণক্য বিষ্ণুগুপ্ত। ১৯১১-য়, ভারতের রাজধানী যখন কলকাতা থেকে সরে দিল্লির পথে তখন মিনার্ভা থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’। চাণক্য চরিত্রে অভিনয় করেন দানীবাবু। মিনার্ভা এই নাটককে কেন্দ্র করেই বিখ্যাত হয়েছিল। সেই ইতিহাস মনে রেখে এবং দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সার্ধশতবর্ষে মিনার্ভা রেপার্টরির নতুন নাটক ‘চন্দ্রগুপ্ত’-র প্রথম দুটি অভিনয় হয়ে গেল মিনার্ভায়, শনি ও রবিবার। এ নাটকের পুরোটাই অবশ্য ডি এল রায়ের নয়। ডি এল রায়ের নাটক ও জি পি দেশপাণ্ডের ‘চাণক্য বিষ্ণুগুপ্ত’ মিলে তৈরি হয়েছে এ নাটক। সে কালের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে মিশে গিয়েছে এ কালের ভারতের রাজনীতিও। দানীবাবু, শিশিরকুমার ভাদুড়ীর অভিনীত সেই চরিত্রে অভিনয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন কৌশিক অধিকারী, চন্দ্রগুপ্ত চরিত্রে কৌশিক কর। নির্দেশনায় কৌশিক চট্টোপাধ্যায়। আগামী অভিনয় ২৩ ও ২৪ জুন।

শতবর্ষে
বছর পঁচিশ আগে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী লিখেছিলেন, ‘সাগরদাদা আপনি বুড়ো হলেন না বিলকুল, পঁচাত্তরেও তরতাজা মন, ভ্রমরকৃষ্ণ চুল’। অতঃপর, আড়াই দশক পেরিয়ে শতবর্ষে সাগরময় ঘোষ আর সশরীরে নেই, কিন্তু স্মৃতি এবং কর্মকৃতির মধ্যে তিনি গভীর ভাবে জীবন্ত। জন্ম ২২ জুন ১৯১২; বহুবিধ ঘনঘটায় কেটেছে জীবন। রবীন্দ্র-সান্নিধ্য, সিটি কলেজ, কারাবরণ, সরকারি চাকরি, বেঙ্গল ইমিউনিটি এবং দু-একটি পত্রিকায় কিছুকাল কাজের পরে ১৯৩৯-এ তিনি এলেন ‘দেশ’ পত্রে। একটি সার্থক সাহিত্যপত্র এবং এক কিংবদন্তি সম্পাদকের যোগসূত্রের সেই শুরু। ঝড়ঝঞ্ঝা এসেছে, সাগরময়ের সম্পাদক সত্তা তিলমাত্র টলেনি। সুবোধ ঘোষের ‘তিলাঞ্জলি’ থেকে সমরেশ বসুর ‘বিবর’, ‘প্রজাপতি’— বিতর্ক উঠেছে বার বার, বিভিন্ন কারণে। সাগরময় অবিচল। ১৯৭৬ থেকে তিনিই দেশ পত্রের সম্পাদক রূপে বৃত। ‘দেশ’-এর সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়েছে তাঁরই হাত ধরে, অথচ জরা সেই কাগজকে স্পর্শ করতে পারেনি। দশকের পর দশকে নিজেকে আশ্চর্য ভাবে সমকালীন রেখেছে যে কাগজ, তার ছোটোখাট, রাশভারী সম্পাদকটিও মেজাজে চির-নবীন। নিজে অন্তরালে থেকে পত্রিকা এবং লেখকদের পাদপ্রদীপের আলোয় আনাই তাঁর আনন্দ। নিজের লেখা স্বল্পসংখ্যক, কিন্তু স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। সম্পাদকের বৈঠকে, হীরের নাকছাবি, দণ্ডকারণ্যে বাঘ, একটি পেরেকের কাহিনী পাঠ করে সুহৃদ ও অনুজদের আক্ষেপ, সম্পাদক সত্তার আড়ালে হারিয়ে গেলেন আশ্চর্য গদ্যশিল্পী! শতবর্ষেও সেই দুঃখ বাতাসে ভাসবে, নিশ্চিত। বেঁচে থাকলে সাগরময় ঘোষ তা নিজস্ব হাসিতে উড়িয়ে দিতেন হয়তো। হয়তো গুনগুনিয়ে ধরতেন গান। তাঁর শেষ পারানির কড়ি। একদা নিজেই লিখেছিলেন, ‘আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে এই পৃথিবীতে জন্মে তুমি কি পেলে? আমার উত্তর রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ আর রবীন্দ্রনাথ।’ রবি ঠাকুরের সার্ধশতে সেই রবীন্দ্রানুরাগী সাহিত্য-সম্পাদকের শতোত্তর পরিক্রমণ শুরু হল।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.