বেজায় গরম। দু’চার ফোঁটা বৃষ্টিতে কষ্ট তো কমছেই না, অস্বস্তি বাড়ছে। সকাল-সন্ধে ঘেমেনেয়ে ওষ্ঠাগত প্রাণ। তবু দাদার বিয়ে বা বন্ধুর এনগেজমেন্টে জমিয়ে সাজার সাধ জাগে। কিন্তু জমকালো পোশাক, গয়না, মেকআপ দেখলেই চোখে জল আসার উপক্রম!
দু’দিন ধরে কাঠফাটা রোদের তেজ একটু কমেছে। তবে গুমোট গরমের বিকেল আর ঘামঝরা সন্ধ্যা পিছু ছাড়ছে না। তাই বিয়েবাড়ি-পার্টিতে হাল্কা সাজের পরামর্শ দিচ্ছেন শহরের ডিজাইনার ও রূপ-বিশেষজ্ঞরা। ডিজাইনার অভিষেক দত্ত যেমন এ মরসুমে ভারী কাজের বদলে হাল্কা কাজের পোশাক বাছতেই পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “বিয়েবাড়ি বা পার্টিতে হাল্কা লহেঙ্গার সঙ্গে পরা যায় চোলি-কাট ব্লাউজ, নেটের দোপাট্টা। শাড়িই চাইলে হাল্কা জর্জেট বাছুন। লম্বা ঝুলের আনারকলি ড্রেসও আরামদায়ক হবে। এই গরমে সাদার উপরে সোনালি বা রুপোলি কাজের পোশাক, সরু লাল পাড়ের পুরো সাদা শাড়ি, আইভরি রঙা পোশাকে ভাল দেখায়। আর ছেলেরা পরুন বন্ধগলা, শর্ট কুর্তা, লিনেনের কুর্তা, কাউলওয়ালা জোহেইব প্যান্ট। তবে সকলেরই পোশাক যেন হয়ে সুতি, লিনেনের মতো হাল্কা ফ্যাব্রিকের।”
গরম মানেই পোশাক হোক সাদা বা হাল্কা রঙের, এমনটা অবশ্য বলছেন না ডিজাইনার চৈতালী দাশগুপ্ত। তাঁর মতে, প্যাস্টেল বা নীলের শেড পরা যেতেই পারে। বিয়েবাড়ি মানেই যাঁদের কাছে শাড়ি বা পাঞ্জাবী, তাঁদের চৈতালীদেবীর পরামর্শ, “ফুলিয়ার তাঁত বা নানা রঙের ডিজাইনার সুতির শাড়িতে দিব্যি ঝলমলে লাগে। সিল্ক, তসরের শাড়ি, জরি-চুমকির ভারী পোশাক তোলা থাক অন্য সময়ের জন্য। পুরুষরাও পরুন সুতির পাঞ্জাবী। ঠাসা কাজের বদলে হাল্কা কাজই ভাল।”
বিয়েবাড়ি হোক বা পার্টি, গয়না ছাড়া চলে? এখানেও ‘ভিলেন’ সেই গরম। অভিষেক বলছেন, “ভারী সোনা-রুপোর বদলে স্লিক গয়না পরাই ভাল। হিরের গয়না পরা যায়। কিংবা গলায়-কানে-হাতে পুরো সেট না পরে যে কোনও একটা নজরকাড়া গয়নাও পরা যায়। একটা ভাল নেকপিস বা জমকালো দুল অথবা হাতে চোখধাঁধানো কিছু। আর সঙ্গে চুলটাকে উঁচু করে বাঁধুন। গরমও কম লাগবে, সাজটাও ভাল দেখাবে।”
এই গরমে রূপটানও যথেষ্ট ঝক্কির। ঘামে মেক-আপ গলে একাকার হলে গোটা সাজটাই মাটি। রূপ-বিশেষজ্ঞ রীতা মোহন তাই বলছেন, যে কোনও অনুষ্ঠানে চাই হাল্কা মেকআপ। তাঁর পরামর্শ, “ওয়াটার বেসড মেকআপ ত্বকে আর্দ্রতা ফেরাবে। কমপ্যাক্ট শুষে নেবে বাড়তি আর্দ্রতাটুকু। ঘামে মেক-আপ নষ্ট হওয়ার ভয়ও কম থাকবে। সঙ্গে হাল্কা রঙের লিপস্টিক। ন্যাচারাল বাদামি শেডের আইশ্যাডোর সঙ্গে পোশাকের মানানসই সোনালি-রুপোলির ছোঁয়া থাকুক। সঙ্গে থাক ওয়াটারপ্রুফ আইলাইনার ও মাসকারা। কাজল স্মাজ করলেও ভাল দেখাবে।”
তবে ভাল দেখানোটা নির্ভর করে তরতাজা ত্বক ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের উপরেও। তাই রোদে পোড়া চেহারা আর রুক্ষ চুলগুলোর বাড়তি যত্ন নিতে হবে, মনে করালেন রীতাদেবী। তাঁর কথায়, “সপ্তাহে এক বার স্ক্রাবিং, মুখে যে কোনও ফল চটকে মাখা বা কাঁচা দুধে কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে মাখলে ত্বক ভাল থাকবে। সপ্তাহে এক বার চুলে তেল দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার রাখাটা জরুরি। খুসকির সমস্যায় টক দই মেখে শ্যাম্পু করা যায়। এ ছাড়া, এ সময়টায় রোদে ঘুরে, ঘাম বসে চুল রুক্ষ আর জট হয়ে যায়। কন্ডিশনার দিলে জটহীন, মোলায়েম চুলে ফিরবে ঝলমলে ভাব।”
এই গরমে তাই হাল্কা সাজ আর ঝকঝকে চেহারা বিয়েবাড়ি হোক বা পার্টি, নজর কাড়ছেন আপনিই। |