এক কলেজে পুলিশের সাহায্য নিয়ে ভর্তির ফর্ম বিলি হল। অন্য কলেজে আজ, শনিবার পুলিশ মোতায়েন করে ভর্তির ফর্ম বিলি হবে বলে ঠিক হয়েছে। প্রথমটি উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর কলেজ। এদিন অস্থায়ী কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে নামলে ইসলামপুর কলেজেও মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুবিমল পালের নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী মোতায়েন করে ছাত্র ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়।
অন্যটি রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ। বৃহস্পতিবার ছাত্র আন্দোলনের জেরে রায়গঞ্জ কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে ঠিক হয়েছে আজ, শনিবার থেকে ফের ভর্তির ফর্ম বিলি করা হবে। কেন কলেজে পুলিশ মোতায়েন করে ভর্তির ফর্ম বিলি করতে হবে তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে অভিভাবক মহলে। কলেজ কর্তৃপক্ষের যুক্তি, নিরাপত্তার কারণেই পুলিশ মোতায়েন করে ভর্তির ফর্ম বিলির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে তাঁদের।
উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “জেলা প্রশাসন ভর্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন কলেজ চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ কর্মী মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কলেজে প্রশাসনিক নজরদারি থাকবে। কলেজে পুলিশ ক্যাম্প করা যায় কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে শুক্রবার রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শত্রুঘ্ন সিংহের নেতৃত্বে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল জেলাশাসক পাশাং নরবু ভুটিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে কলেজ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কলেজে পুলিশ মোতায়েনের উপরে জোর দেওয়া হলে জেলাশাসক সেই ব্যবস্থা করতে সন্মত হন। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কলেজে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প তৈরির প্রস্তাবও দেওয়া হয়। কলেজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীদের নজরদারির অভাবেই কলেজে বার বার আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকদের একাংশ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, “জেলাশাসকের আশ্বাসে শনিবার থেকে স্নাতক স্তরে ভর্তি প্রক্রিয়ার কাজ ফের শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।” আগামী ২০ জুন পর্যন্ত সরাসরি ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে।
উচ্চ মাধ্যমিকে যে সমস্ত পড়ুয়া কলা বিভাগে ৬৫ শতাংশ ও বিজ্ঞান বিভাগে ৭৫ শতাংশের ওপর নম্বর পেয়েছেন তাঁদের বৃহস্পতিবার থেকে সরাসরি ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। স্নাতক স্তরে সরাসরি ভর্তি প্রক্রিয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শত্রুঘ্ন সিংহকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে একদল পড়ুয়া। এই ঘটনার পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ আইন শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তুলে ও নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে শুক্রবার ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেন। ছাত্র পরিষদ নেতা নব্যেন্দু ঘোষ বলেন, “সরাসরি ভর্তি প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে বৃহস্পতিবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদ জানানো হয়। কলেজে কেউ বিশৃঙ্খলা ছড়ায়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষ ফের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা খুশি।” অন্যদিকে, এদিন ইসলামপুর কলেজে পুলিশ মোতায়েন করে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, কলেজে ২০০৯ সাল থেকে আন্দোলন চলছে। কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেননি। অস্থায়ী কর্মচারীদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা ১১-১২ বছর ধরে কাজ করছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি উদাসীন। কলেজের অস্থায়ী কর্মচারীদের প্রতিনিধি দিবাকর দে বলেন, “কলেজে প্রায় ১৬ টি বেশি স্থায়ী পদ খালি রয়েছে। সেখানে এখনও পর্যন্ত স্থায়ী কর্মী নিযুক্ত হয়নি। অধ্যক্ষ আলোচনায় বসার আশ্বাস দিলে দুপুরে কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হয়।” এদিন ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে অস্থায়ী কর্মচারীদের সমর্থনে অধ্যক্ষকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। কলেজের অধ্যক্ষ উতথ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলেজে ভর্তির সমস্যা মিটে গিয়েছে। ফর্ম দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।” তবে সমস্যা না মিটলে আজ, শনিবার থেকে ফের কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালনের হুমকি দিয়েছেন। |