স্বামীকেই জয় উৎসর্গ মমতা ভুঁইয়ার
তুন মুখ, অ-রাজনৈতিক মানুষকে প্রার্থী করা, দলীয় কোন্দল যাবতীয় ‘ফ্যাক্টর’ দূরে সরিয়ে দাসপুর উপ-নির্বাচনে জয়ী হল তৃণমূল কংগ্রেস। সিপিএম প্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায়কে ১৮,৯১৯ ভোটে হারিয়ে জিতলেন প্রয়াত বিধায়ক অজিত ভুঁইয়ার স্ত্রী মমতা ভুঁইয়া। প্রথাগত রাজনীতির আঙিনায় প্রথম পা রেখে মমতাদেবীর প্রতিক্রিয়া, “আমি এই জয় প্রথমে স্বামীকে উৎসর্গ করলাম। তারপর দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দল তো রয়েইছেন।”
দাসপুরে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিজয়-উল্লাস।
বাপের বাড়িতেও রাজনীতির চর্চা ছিল। আদ্যপান্ত রাজনৈতিক একটি মানুষকে বিয়ে করায় শ্বশুরবাড়িতে এসেও সেই পরিবেশ পেয়েছিলেন। তবে সংসার ধর্ম পালন করতে গিয়ে রাজনীতির দুনিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন মমতা ভুঁইয়া। ছিলেন আটপৌরে গৃহবধূ। স্বামীর অকাল প্রয়াণে রাজনীতির গুরুভার চাপল তাঁর কাঁধে। শুক্রবার গণনা শুরুর বেশ খানিকটা আগেই দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ঘাটাল কলেজের গণনাকেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছিলেন মমতাদেবী। সঙ্গে ছিলেন ছেলে কুমারেশও। গণনাকেন্দ্রে ঢুকেই দেখা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের সমরবাবুর সঙ্গের। দু’জনে সৌজন্য বিনিময় করেন। প্রথম রাউন্ডে মমতাদেবী এগিয়ে ছিলেন মাত্র ৩৫ ভোটে। খবরটা শুনে কিছুটা মুষড়েও পড়েন। পরে ক্রমাগত ব্যবধান বাড়তে থাকায় মুখে হাসি ফেরে। জয় যখন প্রায় নিশ্চিত, তখন মমতাদেবীর চোখে জল। চোখ মুছতে মুছতেই বলেন, “এখন আমার সব থেকে মনে পড়ছে স্বামীর কথা। তাঁর দেখানো পথেই চলব। স্বামীর সততা এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তি যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সে কথা ছেলেকেও বলব।” বলেই ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন। ফল ঘোষণার পর ঘাটাল থেকেই তৃণমূলের মিছিল শুরু হয়। চড়া রোদ উপেক্ষা করেই কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকের মিছিল দীর্ঘ ৮ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে দাসপুরে পৌঁছয়।
সৌজন্য। গণনাকেন্দ্রে মমতা ভুঁইয়া ও সমর মুখোপাধ্যায়।
অজিত ভুঁইয়ার প্রয়াণে দাসপুর বিধানসভা আসনটি ফাঁকা হয়েছিল। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণাতেই উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী করা হয় অজিতবাবুর স্ত্রী মমতাদেবীকে। দলের মধ্যেই অনেকে এই প্রার্থী নির্বাচন মানতে পারেননি। গোটা দাসপুর জুড়ে শুরু হয়ে যায় দলীয় কোন্দল। কারণ, প্রার্থীর দৌড়ে অনেকেই ছিলেন। কোন্দলের প্রভাব পড়ে প্রচারে। রাজ্য স্তরের নেতারা দাসপুরে এলেও কোনও সমাধান হয়নি। কলকাতাতেও বৈঠক হয়। ভোটের দিন কয়েক আগে প্রচারে আসেন মুকুল রায়। তিনি বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। কোন্দল দূরে সরিয়ে শুরু হয় পুরোদমে প্রচার।
দাসপুর বরাবরই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। তবে সিপিএমও এ বার কোমর বেঁধেই নেমেছিল। প্রার্থীর ভাবমূর্তি থেকে বাড়ি বাড়ি প্রচার, পথসভা, মিছিল সবই হয়েছে। তৃণমূলের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি অনুকূলে আনার চেষ্টাও করেছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। হেরে গিয়ে সিপিএম প্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায় বলেন, “ব্যবধান কমাতে পেরেছি, এটাও তো কম নয়। তা ছাড়া, অনেক জায়গায় নীরব সন্ত্রাস হয়েছে। এখনও বহু মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। মানুষের রায় মেনে নিয়েই আমরা মানুষের স্বার্থে কাজ করে যাব।”
তৃণমূল প্রার্থীকে নিয়ে বিজয় মিছিল দাসপুরে।
এই উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন চার জন প্রার্থী। সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি ছাড়াও প্রার্থী দিয়েছিল রাষ্ট্রীয় জনাধিকার সুরক্ষা পার্টি। মোট বৈধ ভোট পড়ে ১ লক্ষ ৮২ হাজার ৩৮টি। তার মধ্যে তৃণমূলের মমতা ভুঁইয়া পেয়েছেন ৯৪ হাজার ৮৬০টি (৫২.১১%) ভোট, সিপিএমের সমর মুখোপাধ্যায় পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৯৪১টি (৪১.৭১ %) ভোট, বিজেপি প্রার্থী অশোক মালের প্রাপ্ত ভোট ৭ হাজার ৯৮০টি (৪.৩৫%)। রাষ্ট্রীয় জনাধিকার সুরক্ষা পার্টির সমর প্রধান পেয়েছেন ৩ হাজার ২৫৬টি ( ১.৮৯ %ভোট) ভোট। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের (৮২%) তুলনায় এ বার ভোট পড়েছিল কম (৭৪%)। স্বভাবতই তৃণমূল ও সিপিএমের প্রাপ্ত ভোটও কমেছে। গত বার তৃণমূলের অজিত ভুঁইয়া পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ৯ হাজার ৪৮টি (৫৪.৭৬ %) ভোট আর সিপিএমের সুনীল অধিকারী পেয়েছিলেন ৮৪ হাজার ১২১টি (৪২.২৪) ভোট। জয়ের ব্যবধান কমা প্রসঙ্গে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “আমরা আরও বেশি ব্যবধানে জিততাম। কিন্তু এ বার ভোটই কম পড়েছে। আমাদের বহু সমর্থক কাজের জন্য বাইরে রয়েছেন। তবু আমাদের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য দাসপুরের মানুষকে অভিনন্দন।”

ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.