|
|
|
|
জনস্বাস্থ্য প্রকল্পের জল অমিল, সমস্যা উখড়ায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • অন্ডাল |
সরকারি প্রকল্পের আওতায় এলাকায় জলের কল রয়েছে প্রায় ২০০টি। কিন্তু জল পড়ে সপ্তাহে এক দিন। কোথাও আবার তাও মেলে না। ফলে কিনে খেতে হয় জল। উখড়া বাজার এলাকায় এক টিন জলের দাম কখনও পাঁচ টাকা, কখনও বা সাত। তা-ই কিনে খেতে বাধ্য হয়েছেন উখড়া বাজার এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় বিধায়ক সোহরাব আলি বলেন, “বিকল্প জলপ্রকল্পের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সরকারের আর্থিক অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হবে।”
উখড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ওই জলের সমস্যা বহু দিনের পুরনো। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে স্থানীয় নকশালপন্থী সংগঠনের সদস্যেরা জল সরবরাহের জন্য আন্দোলনে নেমেছিলেন। টানা ৩ দিন তাঁদের ধর্মঘটের জেরে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। |
|
—নিজস্ব চিত্র। |
উখড়া সিটিজেন ফোরামের সম্পাদক তথা উখড়া বণিক সংগঠনের সভাপতি মহাদেব দত্ত জানান, উখড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দার বাস। আগে হনুমানডাঙা ও সুভাষ কলোনিতে ইসিএলের ‘বোর হোল’ থেকে জল আনতেন ভারীওয়ালারা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সুভাষ কলোনি ধস প্রবণ হয়ে গিয়েছে। ফলে পাম্প বিকল হয়ে গিয়েছে। জল মিলছে না। বাধ্য হয়ে এক মাত্র হনুমানডাঙার ‘বোর হোলে’র উপরই নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, “এখন জলের উৎস-সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই গরমে হনুমানডাঙা ‘বোর হোল’ থেকেও ভারীওয়ালারা পর্যাপ্ত জল পাচ্ছেন না।” উখড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নকশাল সদস্য কালিয়া বাউড়ির আরও অভিযোগ, “২০০ টি বৈধ কলের সঙ্গে এলাকায় প্রচুর অবৈধ পাইপলাইন সংযোগ করা হয়েছে।”প্রাক্তন নকশাল নেতা তথা অধুনা তৃণমূলের শ্রমিক নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আন্দোলন করে জল নিয়ে এসেছিলাম, অথচ এখন জল কিনে খেতে হচ্ছে।”
মহাদেববাবু জানান, উখড়া বাজারে আড়াই হাজারের বেশি ব্যবসায়ী পরিবারের বাস। সপ্তাহে একদিনের বেশি জল মেলে না। বছরের প্রায় ৬ মাস বাধ্য হয়ে ৫ থেকে ৭ টাকা দিয়ে জল কিনে খেতে হয়। দৈনন্দিন প্রয়োজনেও জল কিনে ব্যবহার করতে হয় তাঁদের। নকশাল নেতা কালিবাবুও জানান, বয়েজ হাইস্কুল, চুনারি পাড়া, বর্মন পাড়া, মুসলিম পাড়া, ধীবর পাড়া, বড় পাড়া, শুকোপাড়া, বুরাচন হাটতলাতে কল রয়েছে। কিন্তু চার বছরে সেখান থেকে এক ফোঁটাও জল পড়েনি। মাধাইগঞ্জ রোড থেকে নতুন পোস্ট অফিস পর্যন্ত ১০টি কলে সপ্তাহে একদিনের জন্য ১০ মিনিট জল পড়ে। ডাঙালপাড়া ও শফিকনগরের নয়া বস্তিতে জলের লাইনই নেই। ইসিএল এতদিন পঞ্চায়েতগুলির মাধ্যমে ট্যাঙ্কারে করে জল দিচ্ছিল। ১৫ জুন সেই মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “যে সব জায়গায় কল আছে বা নেই, সর্বত্রই বাসিন্দাদের নাজেহাল অবস্থা।” সোমনাথবাবুও বলেন, “সরকারের বিভিন্ন মহলে চাপ তৈরি করে জল আনতে হবে। আমরা আবার আন্দোলনে নামব।”
অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা সিপিএমের দামোদর অজয় জোনাল কমিটির সদস্য বংশীধর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “সিপিএম ইটভাটার মালিকদের জল বিক্রি করে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলেছিলেন সোহরাব আলি। ভোটে জিতলে এক মাসের মধ্যে উখড়ার জলসমস্যা মিটিয়ে দেবেনও বলেছিলেন। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও একই অবস্থা রয়ে গিয়েছে। তিনি নিজে এখন কী করছেন, তা আমরা জানতে চাই।” বিধায়ক অবশ্য দাবি করেন, “৩৪ বছরের যে সমস্যা মেটেনি, তা এক মাসের মধ্যে মিটিয়ে ফেলতে পারব, এমন প্রতিশ্রুতি আমরা দিইনি।” তাঁর আরও দাবি, আসানসোলের কালাঝরিয়া প্রকল্প থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে উখড়ায় জল দেওয়ার পরিকল্পনাটাই ভুল। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলের পাইপলাইন ফুটো করে পুকুর ভরানো হচ্ছে। ইটভাটাও চলছে। তাঁর কথায়, “জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর অভিযান চালিয়ে অবৈধ জলের লাইনের সঙ্গে সংযোগ ছিন্ন করলেও সিপিএমের মদতপুষ্ট হয়ে অবৈধ কারবারিরা ফের তা করছে।” তিনি জানান, জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। প্রায় ১২ কোটি টাকার একটি বিকল্প জলপ্রকল্পের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের আর্থিক অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হবে। |
|
|
|
|
|