নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে টেন্ডার ছাড়াই হুগলি জেলা পরিষদের কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ওষুধ কেনার মামলায় তদন্ত করবে সিআইডি। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিআইডি-র ডেপুটি সুপার তাজ মহম্মদকে। এত দিন জেলা পুলিশই এই মামলার তদন্ত করছিল, সাহায্য করছিল সিআইডি। কিন্তু তাতে তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় স্বরাষ্ট্র দফতর সরাসরি সিআইডি-র হাতে দায়িত্ব দিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
ঘটনার সূত্রপাত ২০০৯-এ, হুগলির তৎকালীন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) ভূষণ চক্রবর্তীর অভিযোগের ভিত্তিতে। চুঁচুড়া থানায় ভূষণবাবু লিখিত জানান, সরকারি বিধি না মেনে ও তাঁকে কিছু না জানিয়ে জেলা পরিষদের তৎকালীন সভাপতি অসিত পাত্র কয়েক কোটি টাকার ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনেছেন। সে সময়ে জেলার সরকারি হাসপাতালগুলিতে ওষুধ ও সরঞ্জাম কেনার যে ‘পারচেজ কমিটি’ ছিল, সিপিএম নেতা অসিতবাবুই পদাধিকার বলে তার প্রধান ছিলেন। নিয়মিত সরবরাহ ছাড়াও বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতিতে ওষুধ কেনার বিশেষ ক্ষমতা তাঁর ছিল। তিনি সেই ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করেছেন বলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরেও লিখিত ভাবে জানান ভূষণবাবু।
সেই সময়ে অর্থ দফতরের নির্দেশে ভিজিল্যান্স কমিশন এবং অর্থ দফতর আলাদা ভাবে গোটা ঘটনার তদন্ত করে। জেলা পরিষদের অর্থ দফতর বেশ কয়েক জন অফিসার ও কর্মীকে সাসপেন্ড করে। আলিমুদ্দিনের নির্দেশে জেলা সভাধিপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন অসিতবাবু। গত মার্চে হুগলির জেলাশাসককে রিপোর্ট পাঠিয়ে ভিজিল্যান্স কমিশন জানায়, প্রাথমিক তদন্তে তারা বেশ কয়েক লক্ষ টাকার গরমিল পেয়েছে। অসিতবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করেন ভিজিল্যান্স কমিশনের যুগ্মসচিব।
ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই গত ১৭ এপ্রিল হুগলির ভারপ্রাপ্ত জেলাশাসক আর আলিয়াস ভেজ চুঁচুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সরকারি টাকা আত্মসাৎ, সই জাল, অপরাধ চেপে যাওয়া এবং আর্থিক দুর্নীতির মামলা রুজু হয়। পুলিশ সুপারের কাছেও পাঠানো হয় ভিজিল্যান্স কমিশনের রিপোর্ট। ওই রাতেই পুড়শুড়ার জঙ্গলপাড়ার বাড়ি থেকে অসিতবাবু গ্রেফতার হন। তদন্তের স্বার্থে তাঁকে ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় চুঁচুড়া আদালত। কিন্তু অসিতবাবু ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়ায় ১২ দিন ইমামবাড়া হাসপাতালেই কেটে যায় তাঁর। পরে ফের আদালতে তোলা হলে তাঁকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখনও তিনি সেখানেই।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, সিআইডি-র সাহায্য নিয়ে প্রায় দু’মাস তদন্ত চালিয়েছে জেলা পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় সিআইডি জানিয়ে দেয়, এ বার সরাসরি তারাই তদন্ত করবে। প্রাথমিক তদন্তে সিআইডি কর্তারা জেনেছেন, ওই সময়ে জেলায় অত ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার প্রয়োজন ছিল না। বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়েছিল। তন্তুজ-সহ কয়েকটি সংস্থা থেকে কেনা হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার মশারি। বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে কেনা হয়েছিল ব্যান্ডেজ, তুলো ইত্যাদি। জেলা পরিষদ ও স্বাস্থ্য দফতরের বেশ কয়েক জন পদস্থ কর্তা ও কর্মীর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। সে সময়ে যে অফিসারেরা সাসপেন্ড হয়েছিলেন, তাঁদের নামেও মামলা রুজু করা হতে পারে। |