এ এক অদ্ভুত অবস্থা!
পশ্চিম দিকে তাপপ্রবাহ, বইছে গরম শুকনো হাওয়া। পূর্বে আর্দ্রতা বেড়ে তীব্র অস্বস্তি, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতেও তা কাটছে না। উত্তরে আবার ঘোর বর্ষা। পশ্চিমবঙ্গের তিন ভৌগোলিক এলাকায় এখন চলছে এই তিন ধরনের আবহাওয়া। আর কবে এই ‘অস্বাভাবিক’ পরিস্থিতির অবসান ঘটবে, তার কোনও আভাস পাচ্ছেন না আবহবিদরা।
ঘূর্ণাবর্ত এবং নিম্নচাপ অক্ষরেখার দৌলতে গত কয়েক দিন ধরে দক্ষিণবঙ্গে তীব্র তাপপ্রবাহ কিছুটা কমেছিল। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিও হচ্ছিল। সেই ঘূর্ণাবর্ত এবং নিম্নচাপ অক্ষরেখা এখনও আছে। কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়েছে।
কী ভাবে?
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা বেড়ে ফের তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সেখানে গরম হাওয়া বইছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। সেখানে অবশ্য ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ অক্ষরেখা জোরদার বৃষ্টি নামাতে ব্যর্থ।
অন্য দিকে, পূর্বের সমুদ্র ঘেঁষা জেলাগুলিতে তাপমাত্রা যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে আর্দ্রতা। তার ফলে চরম অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার যেমন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ফের উঠে গিয়েছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (যা এ সময়ের স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রার থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি)। অন্য দিকে, আপেক্ষিক আর্দ্রতা এতটাই বেড়েছে যে অস্বস্তি সূচক উঠে গিয়েছে ৬৯.৫ ডিগ্রিতে। যা এ সময়ের স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ১৫ ডিগ্রি বেশি। মাঝেমাঝে অবশ্য স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার বিকেলের পর থেকে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টি হওয়ায় অস্বস্তিকর, হাঁসফাঁস অবস্থা কিছুটা কমছে। কিন্তু বৃষ্টি থামলেই ফের অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।
কলকাতায় এ দিন বিকেলে আকাশ কালো করে মেঘ জমে। ঝড়-বৃষ্টি চলে বেশ খানিক ক্ষণ।
প্রবল হাওয়ার দাপটে এ দিন কলকাতায় এসেও নামতে পারেনি দু’টি বিমান। টাটা গোষ্ঠীর একটি বিমান এসেছিল জামশেদপুর থেকে। বিকেল পাঁচটায় সেটি সল্টলেকের দিক থেকে এসে নামতে যায়। কিন্তু, পিছন থেকে হাওয়ার ধাক্কা খেয়ে ফের উড়ে যায়। কলকাতার আবহাওয়া খারাপ দেখে বিমানটি জামশেদপুর ফিরে যায়। ওই একই সময়ে জেটলাইটের একটি বিমান গুয়াহাটি থেকে এসে সল্টলেকের দিক থেকে নামতে গিয়েও পারেনি। মিনিট কুড়ি আকাশে চক্কর দেওয়ার পরে সেটি মধ্যমগ্রামের দিক থেকে এসে নামে।
যদিও এ সবই স্থানীয় ভাবে তৈরি হওয়া বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে হওয়া ঝড়-বৃষ্টির জেরে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চলে এখন চলছে ঘোর বর্ষা। সেখানে বৃষ্টি থামছেই না।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক আবহবিদের কথায়, “এ রকম অস্বাভাবিক আবহাওয়া সচরাচর চোখে পড়ে না।”
কিন্তু কেন এমন ‘বিচিত্র’ আবহাওয়া, সে সম্পর্কে এখনও ধন্দে রয়েছেন আবহবিদদের অনেকেই। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের বিশ্লেষণ, “মৌসুমী বায়ু গোঁসা ঘরে খিল দিয়ে বসে থাকায় এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পশ্চিমে গোয়া এবং উত্তর-পূর্বে সিকিমে যে ভাবে গত তিন দিন ধরে মৌসুমী বায়ু থমকে আছে, তা আমাদের ভাবাচ্ছে। ওই অবস্থা থেকে মৌসুমী বায়ুকে সচল করার জন্য যে পরিস্থিতির দরকার, তার খোঁজ এখনও মিলছে না।”
গোকুলবাবু জানাচ্ছেন, মৌসুমী বায়ু ফের সচল না হলে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির থেকে মুক্তি মিলবে না। পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা বেড়ে তাপপ্রবাহ বইবে, কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় চরম অস্বস্তিকর আবহাওয়া হবে। পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টিও হবে। কিন্তু তাতে অস্বস্তির পাকাপাকি কোনও সুরাহা হবে না। আর উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়বে।
অর্থাৎ, রাজ্যের তিন অঞ্চলে তিন ভিন্নধর্মী আবহাওয়াই আগামী কয়েক দিন চলতে থাকবে। |