বাঁকুড়া উপনির্বাচন
না থেকেও অকাল ভোটে আছেন কাশীনাথ
দু’মাস হল তিনি নেই। নেই বলেই বাঁকুড়ায় অকাল-ভোট।
তবু তিনিই আছেন। আছেন পোস্টারে। আছেন হোর্ডিংয়ে-মিছিলে-স্লোগানে। তৃণমূলের প্রচারে আছেন। আছেন সিপিএমের বক্তৃতায়। টানাটানি চলছে দু’তরফে।
যাঁর মৃত্যুতে আগামী মঙ্গলবার বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচন, সেই কাশীনাথ মিশ্র এখনও পুরোভাগে। তাঁর ‘উপস্থিতি’ টের পাচ্ছেন বাঁকুড়ার মানুষ। যেমন তৃণমূল কর্মীরা টের পাচ্ছেন তাঁর অনুপস্থিতি।
স্বাভাবিক। বাঁকুড়া কেন্দ্র আর তার পাঁচ বারের বিধায়ক কাশীনাথ মিশ্র কার্যত সমার্থক!
যে জন্যই এই কেন্দ্রের উপ নির্বাচনের প্রার্থী বাছতে গিয়ে কাশীবাবুর স্ত্রী, অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা মিনতি মিশ্রের নাম তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের মাথায় প্রথম এসেছিল। গত বছর বিধানসভা ভোটের প্রচারে মিনতিদেবী ছিলেন স্বামীর পাশেপাশেই। যেমন অনেক রাজনৈতিক নেতার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। কিন্তু নিজেই যে কোনওদিন ভোটে দাঁড়াবেন, ভাবেননি। তা-ও কাশীবাবুর জায়গায়। তাঁর বদলে। মিনতিদেবীর কথায়, “এখন ওঁর অভাব খুব বুঝতে পারছি।”
প্রচারে থাকতেন স্বামীর পাশেই।
প্রচারে গিয়ে মিনতিদেবী স্বামীর নাম করেই ভোট চাইছেন। বলছেন, “আপনাদের দাদার পাশে যে ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, এ বার সে ভাবে আমার পাশেও দাঁড়ান। আপনাদের দাদার অসম্পূর্ণ কাজ আমি সম্পূর্ণ করতে চাই। আমায় সেই সুযোগ দিন।” কাশীবাবুর সতীর্থ, রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও নির্বাচনী সভার মঞ্চে মিনতিদেবীকে পাশে নিয়ে তাঁকে ‘কাশীবাবুর স্ত্রী’ বলেই জনতার সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন। নির্বাচনী বক্তৃতায় এক বছরে রাজ্যের উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তির সঙ্গে থাকছে কাশীবাবুর প্রসঙ্গও। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেমন প্রচারে বলেছেন, “বিধানসভায় বারবার বাঁকুড়ার নানা দাবি নিয়ে তিনি সরব হয়েছেন। তাঁর মনপ্রাণ জুড়ে ছিল বাঁকুড়া।”
এই ‘অদৃশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী’র সঙ্গে লড়তে হচ্ছে সিপিএমের তরুণ প্রার্থী, পেশায় আইনজীবী নীলাঞ্জন দাশগুপ্তকে। গত বছর যিনি কাশীবাবুর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন (এবং হেরেছিলেন), সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সেই সদস্য প্রতীপ মুখোপাধ্যায় এ বার আর দাঁড়াতে চাননি। গতবার সিপিএমের হারের ব্যবধান ছিল ২৯ হাজার ভোট, যা জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে সর্বোচ্চ। সিপিএমের অনেকেই তাই এ বার আর ভোটে দাঁড়াতে আগ্রহ দেখাননি। প্রচারে সিপিএম প্রার্থী বা অন্য নেতা-কর্মীরা সামগ্রিক ভাবে তৃণমূলের নামে নিন্দা করলেও কাশীবাবু নিয়ে নিশ্চুপ। প্রবীণ এবং প্রয়াত নেতার নামে কুৎসা করলে ভোটব্যাঙ্কে ‘বিরূপ’ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা!
নিজের জন্য দেওয়াল লিখনে ব্যস্ত প্রয়াত কাশীনাথ মিশ্রের স্ত্রী মিনতি মিশ্র।
গণতান্ত্রিক আইনজীবী সঙ্ঘের জেলা সম্পাদক নীলাঞ্জনবাবুর কথায়, “সহকর্মী হিসেবে কাশীবাবুকে (তিনিও আইনজীবী ছিলেন) দেখেছি। ব্যক্তিগত ভাবে তাঁকে শ্রদ্ধা করতাম। মিনতিদেবীকেও শ্রদ্ধা করি। ওঁদের নামে কিছু না-বললেও তৃণমূল এক বছরে রাজ্যকে কী ভাবে পিছিয়ে দিয়েছে, সে কথাই বোঝাচ্ছি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের কথায়, “কাশীবাবুকে নিয়ে অভিযোগ না থাকলেও, তৃণমূল সরকারের এক বছরের ব্যর্থতার কথা মানুষকে বলা হচ্ছে।”
কাশীবাবুর ‘প্রভাব’ এতটাই যে, গতবছর নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রবীণ তৃণমূল বিধায়ককে ডেকেও শেষ পর্যন্ত শপথ না-করানো নিয়ে বাঁকুড়াবাসীর ক্ষোভ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। এ ছাড়া সিপিএমের অবশ্য বিশেষ কিছু বক্তব্যও নেই। কারণ, বাঁকুড়ার অনুন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই তৃণমূল বলছে, ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে সিপিএম করেছেটা কী?
বাঁকুড়ার অকাল-ভোটে অতএব লম্বা হয়ে পড়েছে কাশীবাবুর ছায়া। শাসকজোটের সাম্প্রতিক আকচাআকচির সময়েও মিনতিদেবীর প্রচারের পোস্টারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি, কার্যকরী সভাপতির পাশাপাশি জেলা কংগ্রেস সভাপতি ব্রজবাসী বিশ্বাসের (তিনি কয়েকবার কাশীবাবুর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন) নাম রয়েছে। শুধু তাই নয়, গত বছর নির্বাচনী প্রচারে কাশীবাবুর ‘পাশে না-থাকা’ দলের একাংশও এই আবহে মিনতিদেবীর হয়ে পথে নেমেছেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-র দাবি, “কাশীবাবুর জনপ্রিয়তা এখনও অটুট। মিনতিদেবী যে বিপুল ভোটে জিতবেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।”
আশ্চর্য কী যে, বাঁকুড়াবাসী বলছেন, “এই ভোটটা সত্যি অন্যরকম। কাশীবাবু নেই। ভোটের তাপও নেই। তবু সব কিছুর মধ্যে তাঁরই ছায়া!”

ফাইল চিত্র, অভিজিৎ সিংহ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.