বারুইপুরে পুরোদস্তুর ‘আধুনিক’ ওয়াগন কারখানা চালু করল কলকাতার সংস্থা বেসকো (ফাউন্ড্রি ডিভিশন)। তিন বছরে সেখানে লগ্নি হবে ১২০ কোটি টাকা। ভবিষ্যতে সেখানেই যাত্রী-ট্রেনের কামরাও তৈরি করতে আগ্রহী সংস্থাটি। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই রাজ্যে বার্ন স্ট্যার্ন্ডার্ডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ওয়াগনের যন্ত্রাংশ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সেল)।
বারুইপুরে বেসকো গোষ্ঠীর পাঁচ দশকের পুরনো কারখানায় মূলত ওয়াগনের যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। বালিগঞ্জে গোষ্ঠীর মূল কারখানায় তৈরি হয় ওয়াগন। সংস্থার ডিরেক্টর সিদ্ধার্থ তাঁতিয়া জানান, পারিবারিক ব্যবসা ভাগাভাগির পরে বারুইপুরের কারখানাটি বছর ছয়েক আগে তাঁদের হাতে আসে। ওয়াগনের যন্ত্রাংশ ব্রাজিল, চিন ও রাশিয়ায় রফতানি করা হয়েছে। প্রথম থেকেই বাড়তি জমি হাতে থাকায় তাঁরা পুরোদস্তুর ওয়াগন তৈরির পরিকল্পনা নেন। বাণিজ্যিক উৎপাদন আগেই শুরু হলেও এ দিন কারখানাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বারুইপুরে মোট ৪২ একর জমির মধ্যে ১৪ একরে বার্ষিক ৩৬০০টি ওয়াগন উৎপাদন ক্ষমতার কারখানাটি তৈরি হয়েছে। সংস্থার এমডি অরুণ তাঁতিয়া জানান, আপাতত রেলের কাছ থেকে তাঁরা ২৫০টি ওয়াগনের বরাত পেয়েছেন। তারপর যাতে লগ্নির ভবিষ্যৎ নিয়ে সঙ্কট তৈরি না-হয় সে জন্য তাঁরা এ দিন শিল্পমন্ত্রীর মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেন্দ্রীয়
রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের কাছে নতুন বরাতের আর্জি জানান। |
উদ্বোধনে সুলতান আহমেদ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
সংস্থার দাবি, মূলত দু’টি ‘বৈশিষ্ট্য’ রয়েছে কারখানাটির। প্রথমত, রেল যে আধুনিক ‘জি১০৫’ মাপকাঠি তৈরি করেছে, তার ভিত্তিতেই এখানে ওয়াগন তৈরি হবে। বেসকো ছাড়া ভদোদরায় শুধুমাত্র জিন্দল গোষ্ঠীর এ ধরনের কারখানা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বারুইপুরেই প্রথম আধুনিক ‘রোবোটিক ওয়েল্ডিং’ পদ্ধতিতে ওয়াগন তৈরি হচ্ছে। ‘ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর’ হলে ওয়াগনের চাহিদা আরও বাড়বে বলেই আশা সিদ্ধার্থবাবুর। তাঁর দাবি, কারখানা সংলগ্ন এলাকাতেই সহযোগী যন্ত্রাংশ শিল্পের মাধ্যমে সব মিলিয়ে ওয়াগন তৈরির জন্য অন্তত ৭৫০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বর্তমানে ওয়াগন শিল্পে ব্যবসার পরিমাণ আট-দশ হাজার কোটি টাকা। সিদ্ধার্থবাবুর দাবি, পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করতে পারলে দু’বছরের মধ্যে সেই বাজারের অন্তত ১০% তাঁদের দখলে আসবে।
যন্ত্রাংশের মতোই ওয়াগনও রফতানি করতে চায় সংস্থাটি। এমডি জানান, চিন বা ব্রাজিলে যৌথ উদ্যোগে ওয়াগন পাঠানোর ভাবনা রয়েছে তাঁদের। সে ক্ষেত্রে যাত্রী-গাড়ির মতোই ওয়াগনের যন্ত্রাংশ পাঠানো (‘কমপ্লিটলি নকড্-ডাউন’) হবে। সেখানে তা জুড়ে তৈরি হবে পুরো ওয়াগন। ভবিষ্যতে বারুইপুরের কারখানায় যাত্রী-ট্রেনের কামরাও তৈরি করতে চান তাঁরা।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী ভারী শিল্পে এক সময়ে রাজ্যের সুনামের কথা উল্লেখ করে জানান, দেশের ১২টি ওয়াগন সংস্থার মধ্যে ন’টিই এ রাজ্যে থাকায় বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আগামী দিনে ব্যবসার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কর্মী প্রশিক্ষণে জোর দেন শিল্পমন্ত্রী। শ্রমিক অসন্তোষে যাতে শিল্পের চাকা থমকে না-যায়, সে জন্য উভয়পক্ষকেই উদ্যোগী হতে পরামর্শ দেন তিনি। তাঁর কথায়, “আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হলে যেমন মানুষ ভয় পান, অন্যত্র চলে যান, তেমনই শ্রমিক অসন্তোষ থাকলে শিল্প বাঁচে না। উন্নয়নও ব্যাহত হয়।” অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুলতান আহমেদ, রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র, ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা তোহা সিদ্দিকি প্রমুখও উপস্থিত ছিলেন। |