|
|
|
|
আর্সেনিক |
যাদবপুরের করা সমীক্ষা মানতে নারাজ পুরসভা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
যাদবপুরে গভীর নলকূপের জলে ফের আর্সেনিক মিলেছে। গত এক সপ্তাহে যাদবপুর-প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড সংলগ্ন অঞ্চলে ছ’টি গভীর নলকূপ পরীক্ষা করে প্রতিটির জলেই বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ’-এর। যার মধ্যে পাঁচটি নলকূপই কলকাতা পুরসভার। তবু ওই সমীক্ষা-রিপোর্টকে আমল দিতে নারাজ পুরকর্তারা।
সম্প্রতি যাদবপুর এলাকায় জলসঙ্কট মেটাতে আরও কিছু গভীর নলকূপ বসানোর পরিকল্পনা করেছে পুরসভা। এর থেকে বিপদ বাড়তে পারে বলে সরব হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বিভাগ। ফের নলকূপের জলে আর্সেনিক মেপে দেখতে চাইছে তারা। কিন্তু একমাত্র রাজ্যের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্স কোনও সমীক্ষা করলে, তবেই গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়েছে পুরসভা। অর্থাৎ, আপাতত নলকূপ বসানোর পরিকল্পনা বহাল রাখছে পুরসভা। কলকাতা পুরসভার ডিরেক্টর জেনারেল (জল সরবরাহ) বিভাসকুমার মাইতি বলেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সমীক্ষার কথা আমাদের জানা নেই। আর্সেনিক রোধ করতে সরকারের নিজস্ব টাস্ক ফোর্স আছে। তারা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। আমরা তাদের কথাই শুনব।”
তবে বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে পুরসভার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ। ওই বিভাগের অধিকর্তা (গবেষণা) দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “যাদবপুর এলাকায় পুরসভা যে সব নতুন গভীর নলকূপ বসাবে, তার জল তিন মাস অন্তর বিনামূল্যে পরীক্ষা করে দেব আমরা।” ওই গভীর নলকূপ বসানো হলে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থারও সুপারিশ করেছেন তাঁরা। সেগুলি হল,
(ক) ওই নলকূপ যতটা সম্ভব গভীর করতে হবে,
(খ) তিন মাস অন্তর তার জল পরীক্ষা করতে হবে,
(গ) একটি গভীর নলকূপ বসানোর আগে ওই এলাকার অন্যান্য নলকূপের জল পরীক্ষা করতে হবে এবং
(ঘ) এলাকার মানুষকে আর্সেনিক-দূষণ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
পুরসভা কিন্তু ওই সুপারিশও মানতে নারাজ। বিভাসবাবু বলেন, “ওরা আমাদের অনুমোদন নিয়ে সমীক্ষা করেনি। ওদের সুপারিশ মানতে যাব কেন? আর্সেনিক টাস্ক ফোর্স আমাদের সুপারিশ করুক। তা মানব।” তবে ওই সব গভীর নলকূপের জল তিন মাস অন্তর তারা নিজেরা পরীক্ষা করবে কি না, তা জানায়নি পুরসভা।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৩-এ প্রথম ওই অঞ্চলের পানীয় জলে আর্সেনিক আছে বলে রিপোর্ট পেশ করেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সেটিও অস্বীকার করেছিল কলকাতা পুরসভা। পরবর্তীকালে তারা এবং আর্সেনিক টাস্ক ফোর্স সমীক্ষা করে দেখে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যই ঠিক। ওই এলাকা যে আর্সেনিকপ্রবণ, তা স্বীকার করেন রাজ্যের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথও। পুরসভা ওই সমীক্ষাটি উড়িয়ে দিলেও কুমারজ্যোতিবাবু অবশ্য পুরোপুরি অস্বীকার করেননি রিপোর্টটি। তিনি বলেন, “যাদবপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা আর্সেনিক-প্রবণ। ১ লক্ষ ৫০ হাজার গভীর নলকূপে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, ২৫ শতাংশের জলই আর্সেনিকপ্রবণ। এ রকম কিছু নলকূপে পরীক্ষা চালালে কয়েকটিতে আর্সেনিক মিলতেই পারে।” তবে কুমারজ্যোতিবাবু জানান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমীক্ষার কথা তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, “ওরা কী পরামর্শ দিয়েছে, জানি না। তবে ওরা যোগাযোগ করতে চাইলে স্বাগত।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র বিশেষজ্ঞদের মতে, জলে আর্সেনিকের সহনমাত্রা প্রতি লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম। দীপঙ্করবাবুর দাবি, বিক্রমগড়ে একটি বহুতলের গভীর নলকূপের জলে প্রতি লিটারে ১৯০ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক মিলেছে। বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক-সহ পুরসভার অন্য নলকূপগুলি রয়েছে রাজেন্দ্রপ্রসাদ কলোনি, পদাতিক ক্লাব, বিশ্বাসপাড়া, ট্রাইডেন্ট ক্লাব এবং কমল কুটিরে। |
|
|
|
|
|