পারদ চড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। ঘটছে মৃত্যুর ঘটনাও। ১০০ দিনের কাজ করতে গিয়ে সোমবার বেলিয়াতোড়ের পটাশপুর গ্রামে এক বধূর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ওই এলাকায় প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দল যায়। সন্ধ্যায় বাঁকুড়া সদরের মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “গরমেই ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।” রাস্তায় পড়ে গিয়ে এ দিনই বাঁকুড়া শহরের সতীঘাটে ও ওন্দায় দুই মধ্যবয়ষ্ক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গরমের কারণেই তাঁদের মৃত্যু বলে প্রাথমিক ভাবে প্রশাসনের ধারণা। পুরুলিয়া শহরেও এ দিন দুই ব্যক্তির মৃত্যু একই কারণে হয়েছে বলে স্থানীয় ভাবে দাবি করা হয়েছে। সোনামুখী শহরেও সোমবার রাতে এক পুরুষ ও মহিলার মৃত্যু হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত গরমে সাধারণ মানুষ যেখানে নাজেহাল, সেখানে স্বাভাবিক ভাবে ১০০ দিনের কাজেও কিছুটা ঘাটতি পড়েছে বলে প্রশাসনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। |
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মণিকা রায় (৪০) নামের বেলিয়াতোড় থানার পটাশপুরের বাসিন্দা সোমবার গ্রামের একটি পুকুরে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করছিলেন। কাজের নামার ঘণ্টা খানেক পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বেলিয়াতোড় স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থানান্তর করা হয়। বিকেলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। অন্য দিকে সোনামুখী শহরের রথতলা বস্তি এলাকার শ্রীকান্ত বাউড়ি (৫৫) ও বৈকুন্ঠপুরের বস্তির মঙ্গলা বাউড়ি (৪২) নামের দুই জনমজুর সোমবার রাতে বাড়িতেই মারা যান। সোনামুখীর পুরপ্রধান কুশন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওদের বাড়িতে বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই। অত্যাধিক গরমেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।” এ দিন দুপুরে বাঁকুড়ার সতীঘাট বাসস্টপে ও ওন্দায় যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁদের পরিচায় পাওয়া যায়নি। বাঁকুড়া সদরের মহকুমাশাসক জানিয়েছেন, “গরমে মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দেহগুলির ময়নাতদন্ত করতে বলা হয়েছে।” মঙ্গলবার পুরুলিয়া শহর থেকে কাশীপুরের খাপলাডি গ্রামের বাড়িতে ফেরার পথে বাসের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুন্দ সোরেন (৬০)। বাসের যাত্রীরা তাঁকে হুড়া গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক শর্মিষ্ঠা দত্ত বলেন, “সহযাত্রীরা বলছিলেন বাসে গরম হাওয়া লেগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মনে হয়, সে কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।” সোমবার দুপুরে পুরুলিয়ার ছররা স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে বাড়ি ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে মারা যান মফস্সল থানার বাঁধগড় গ্রামের বিভূতি দাস (৩৭)। পুরুলিয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সদানন্দ দাস বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে অসহ্য গরমে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।” |
এ দিন বাঁকুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আপেক্ষিক আদ্রতা ১৯ শতাংশে নেমে আসায় গরম বাতাসের ছোবলে বাড়ির বাইরে থাকা মানুষজন কাহিল হয়ে পড়েন। সোমবারেও এ তাপমাত্রা ছিল। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল শেষবার পারদ এই উচ্চতায় উঠেছিল। পুরুলিয়ার উপ কৃষি অধিকর্তা অশ্বিনী কুমার কুণ্ডু জানান, এ দিন পুরুলিয়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রবল গরমের জেরে দুই জেলাতেই ১০০ দিনের প্রকল্পের বিভিন্ন কাজে প্রভাব পড়েছে। মঙ্গলবার বেলায় হুড়া ব্লকের দলদলি পঞ্চায়েতের ভাগাবাঁধ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি পুকুর সংস্কারের কাজ চলছে। রোদ মাথায় কাজ করছিলেন বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও মহিলারা। পঞ্চায়েতের প্রধান নারায়ন মুদি বলেন, “প্রচণ্ড গরমের জন্য কাজে শ্রমিক কম আসছেন।” ওই কাজের সুপারভাইজার ফটিক কর্মকার বলেন, “এখানে শ্রমিকদের জন্য পানীয় জল, ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু যা গরম পড়েছে, তাতে কাজ করাই দুসাধ্য। তাই শ্রমিক কমে গিয়েছে।”
একই ছবি বাঁকুড়া জেলাতেও। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মার্চ মাসে এই প্রকল্পে জেলায় ৭৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। এপ্রিল মাসে সেই খরচ কমে দাঁড়ায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকায়। এক আধিকারিক জানান, এই গরমের জন্য মানুষ সকাল ও বিকেল ছাড়া কাজে যোগ দিতে চাইছেন না। এর জেরে সে ভাবে টাকা খরচ করা যাচ্ছে না। বড়জোড়া পঞ্চায়েত প্রধান অলোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “গরম থেকে বাঁচতে আমার এলাকার ১০০ দিনের শ্রমিকদের ভোর থেকে বেলা ১১ টা ও তারপর বিকেল ৫টা থেকে ফের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি।” |