৩০ মে-র আনন্দবাজার পত্রিকার দশ পাতা আয়তনের মধ্যে ২২টি ছোট-বড় ছবি, বিভিন্ন মুহূর্তের। উপলক্ষ, আই পি এল জয়ী টিম কে কে আর-কে রাজ্য সরকার আয়োজিত সংবর্ধনা। দৈত্যাকার ছবিগুলোতে নাইট রাইডার্স মালিকের বিভিন্ন উন্মাদনার মুহূর্ত। মাঝারি ছবিগুলোতে মুখ্যমন্ত্রী-সহ অন্যান্য খেলোয়াড়ের আবেগঘন শট। কোথাও বা রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান মঞ্চের দিকে যাওয়ার ছবি। আর কলকাতা ক্রোড়পত্রে শহরের ধাবমান জনতা। ‘ইডেনের উচ্ছ্বাসে তৃপ্ত শাহরুখ, মমতা’, রবীন্দ্রনাথের লাইনকে ধার করে, ভিন্ন ভাবে, ‘ওই যে তাঁরা, ওই যে পথে...’ বা ‘বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস সামলাতে হিমশিম পুলিশ...’ সব মিলিয়ে জমজমাট খবর। গরিব রাজ্যের পক্ষে যে যৎসামান্য আয়োজনের কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর হিসেবকে কি পাল্টে দিল কলকাতাবাসী? দূরদূরান্তর থেকে ছুটে এসেছিলেন তাঁরা। বিনি পয়সার ক্রিকেটের নন্দনকাননে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছিলেন দিদি। কড়ায় গণ্ডায় তা উসুল করে নিয়েছে উদ্বেল পাবলিক। |
কোনও প্রয়োজন নেই রাজ্যপালের বিতর্কিত (!) মন্তব্য নিয়ে জল ঘোলা করবার। হাজরা মোড় থেকে যদুবাবুর বাজার ছুঁয়ে, এক্সাইড মোড় হয়ে মহাকরণ অবধি যে বিজয় মিছিল, তার সবিস্তৃত ধারাবিবরণী পেশ করেছেন পত্রিকার তথ্য সংগ্রাহকরা। ইডেনে যে অপেক্ষমাণ হাজার হাজার জনতা। সকালে অফিস যাওয়ার পথেই মালুম হয়েছিল মেট্রোর ভিড়ে। নিত্যদিনকার অফিসযাত্রীদের সঙ্গে ফারাকটা যাদের বয়সের, বডি ল্যাঙ্গোয়েজের। কী হতে যাচ্ছে, সে ছবি অবশ্য দৃশ্য হল রাতে টিভি-র দৌলতে। চ্যানেলে চ্যানেলে নন্দিত কিং খান, তাঁর দলের ছেলেরা এবং অবধারিত ভাবে বাংলার বর্তমান কর্ণধার। সর্বত্রই তখন ‘প্রাণে খুশির তুফান’ লাগার বিলম্বিত, ক্যামেরা-ধৃত ছবিতে ছয়লাপ। এবং পর দিন সংবাদপত্র তো শুধু একটি খবরেই মাতোয়ারা।
আই পি এল থেকে কী পেলাম বা কী পাইনি তার হিসেব আমজনতার খুব একটা কাজে লাগে না। নিন্দুকদের বক্তব্য, কোটি কোটি টাকার লেনদেন বা ব্যবসা কি কালো টাকাকে সাদা করার প্রক্রিয়া? ও সব না-হয় স্রেফ সমালোচনা। ভালকে না-দেখতে পারার প্রবণতা।
তবু কিছু প্রশ্নের হাত থেকে রেহাই নেই। প্রশ্নগুলো এ রকম:
কলকাতার আবেগকে মূলধন করে, বলিউডি বাদশার জনপ্রিয়তাকে মনে রেখে যে এলাহি ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছিল, তা কি একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতকে স্পষ্ট করে না? নাচা-গানা বিনোদনে মাতিয়ে দাও পাবলিককে, যাতে তারা গনগনে দ্বিপ্রহরেও কিং খানের মৌতাতে মজে থাকে।
সমর্থন করায়ত্ত করে, বুদ্ধির গোড়ায় নুড়ো জ্বেলে, যুবশক্তিকে দেদার ফুর্তির মোচ্ছবে কুপোকাত অবস্থায় নিয়ে গেলে সব প্রত্যাশার বার্তা বারংবার ঝালিয়ে যাওয়া যায়, তার একটা ছবি কি আমরা পেয়ে গেলাম না?
বহিরঙ্গকে ঝাঁ-চকচকে করে, বিরোধী শক্তিকে পাত্তা না-দিয়ে এই উৎসবে টলিউডকে শামিল করে আরও এক বার বুঝিয়ে দিতে পারলেন, শাহরুখ-সংস্পর্শ পাওয়ার কী অদম্য আকাঙ্ক্ষা তাদের!
সব সত্যকথন সর্বদা মান্যতা পায় না। এখন তো শুধু পরিবর্তনের হাওয়া, যা সর্বসমক্ষে স্বীকার করেছেন রাজ্যপাল। আমাদের সাহস কোথায় তাকে রুখে দেওয়ার।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচী। কলকাতা-১২৫
|
• তিন দিন (২৮-৫, ২৯-৫ এবং ৩০-৫) ধরে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় শুধুই কে কে আর-এর বিজয় উৎসবের বিভিন্ন ছবি দেখে ক্লান্ত বোধ করছিলাম। ৩১-৫ প্রথম পাতায় বিশ্বনাথন আনন্দের বিশ্বজয়ের খবর ও তার মুখখানি দেখে তৃপ্তিলাভ করলাম। যদিও সে দিনও প্রথম পাতার নীচের দিকে পুনরায় শাহরুখ খানের আই পি এল ট্রফি হাতে ছবি ছাপা হয়েছে। উল্লেখ্য, যারা এই ট্রফি জয়ের আসল কারিগর সেই খেলোয়াড়দের তুলনায় তাদের দলের মালিকের ছবিই বিগত তিন দিনই পত্রিকার প্রায় সত্তর শতাংশ জায়গা জুড়ে প্রবল ভাবে বিদ্যমান।
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। আড়িয়াদহ, কলকাতা-৫৭ |