মুলায়মেরও মন রাখতে প্রার্থী নয় কন্নৌজে
সনিয়ার নির্দেশে ‘একলা চলা’ নিয়ে মুখে কুলুপ
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আসন্ন। তার আগে মুলায়ম সিংহের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক বাড়াতে আজ বার্তা দিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। পাশাপাশি, রাজ্যে পুরভোটের ফল প্রকাশের পর তৃণমূল নেতা মুকুল রায় ‘একলা চলার’ বার্তা দিলেও সনিয়ার নির্দেশে তা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে বিরত থাকল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।
চিকিৎসার জন্য আজ রাতে সনিয়ার ফের বিদেশ যাওয়ার কথা। তার আগে উত্তরপ্রদেশে কন্নৌজ লোকসভার উপ-নির্বাচনে মুলায়ম সিংহের পুত্রবধূ ডিম্পল যাদবের বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এটা ঠিক যে, কংগ্রেস প্রার্থী দিলেও তাঁর জয়ের বিশেষ কোনও সম্ভাবনা ছিল না, কিন্তু প্রার্থী না-দিয়ে সমাজবাদী পার্টিকে একটা বার্তা দেওয়া গেল। সনিয়ার এই সিদ্ধান্তে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি হবেন মুলায়ম সিংহ যাদব।
দশ জনপথ সূত্রে বলা হচ্ছে, আজ পশ্চিমবঙ্গের পুরভোটের ফলাফলের রিপোর্টও পর্যালোচনা করেছেন সনিয়া। ফল প্রকাশের পর তৃণমূলের বিভিন্ন নেতার মন্তব্য সম্পর্কেও তাঁর কাছে রিপোর্ট যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় যেমন বলেছেন, “আবার প্রমাণিত বাংলার মাটিতে একক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তৃণমূল। ভবিষ্যতেও এই দল একক ভাবে লড়াই করে জিতবে।” কিন্তু সনিয়ার নির্দেশে এ নিয়ে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। ঘরোয়া আলোচনায় তাঁরা এটুকুই বলেন যে, দু’বছরের মধ্যে লোকসভা বা বিধানসভার মতো কোনও ভোট নেই। ফলে মুকুল রায়ের ‘একলা চলার’ কথা বলার প্রয়োজন কেন পড়ল, সেটাই আশ্চর্যের। রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট আসন্ন ঠিকই। কিন্তু পুরসভা বা পঞ্চায়েত ভোট তো একেবার স্থানীয় বিষয়ের ভিত্তিতে হয়। সেখানে জোট হবে কি হবে না, তা স্থানীয় নেতারাই স্থির করেন।
কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মন্তব্য না করলেও রাজ্য নেতৃত্ব কিন্তু চুপ করে নেই। মুকুলের মন্তব্যকে কটাক্ষ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূল যদি একক ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নেয়, আমাদের তাতে কোনও অসুবিধা হবে না। এ রাজ্যে কংগ্রেস কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ওদের সঙ্গে আর থাকা যাবে না।” কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও বলেন, “জোটের কথা না ভেবে কংগ্রেস শুরু থেকেই একা লড়লে আরও ভাল ফল করত।” যে কথা কার্যত মেনে নিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। কিন্তু সনিয়ার মতে, নিচুতলায় জোট হলে যে উভয়েরই ভাল হত, তা আজকের ফলাফলে প্রমাণিত।
ভোট ময়দানে
কন্নৌজে লোকসভা উপনির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার আগে ডিম্পল যাদব। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রে ইউপিএ-র স্থায়িত্ব ও তাকে মজবুত রাখার প্রশ্নে হাইকম্যান্ডের আজকের সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূল নেতিবাচক মন্তব্য করলেও কংগ্রেস এখনই সম্পর্ক তিক্ত করতে চায় না। আগ বাড়িয়ে সম্পর্ক ভাঙতেও চায় না। কংগ্রেস মনে করে যে, লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের সময় তৃণমূলই জোট চাইবে। তবে এটা যেমন ঠিক, তেমনই হঠাৎ করে যদি কোনও কারণে জোট ভেঙে যায় সে জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখতে চাইছেন সনিয়া। তাই দ্বিতীয় ইউপিএ-র তৃতীয় বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে মুলায়মের উপস্থিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে যে নতুন সম্পর্কের সূচনা হয়েছে, তা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি।
যার জেরে ডিম্পলের বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত। অথচ মাত্র তিন বছর আগে, মুলায়মের উপরে কংগ্রেসের নির্ভরতা যখন তুলনায় কম, ফিরোজাবাদ লোকসভা আসনের উপ নির্বাচনে ডিম্পলের বিরুদ্ধে রাজ বব্বরকে প্রার্থী করেছিল কংগ্রেস। ডিম্পলকে হারিয়েও ছিলেন রাজ বব্বর। ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে কন্নৌজ ও ফিরোজাবাদ দু’টি আসনেই জিতেছিলেন মুলায়ম-পুত্র অখিলেশ। ফিরোজাবাদ আসনটি তিনি ছেড়ে দেওয়ায় সেই বছরই উপ-নির্বাচন হয়েছিল। এ বার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর কন্নৌজ আসনটিও ছেড়ে দিয়েছেন অখিলেশ। তাই সেখানে উপ-নির্বাচন হচ্ছে। আজ সেখানে মনোনয়নপত্র পেশ করেন ডিম্পল। আর তার কয়েক ঘণ্টা আগে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে কংগ্রেস।
প্রকাশ্যে অবশ্য মুলায়মের মন পাওয়ার চেষ্টার কথা স্বীকার করছেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব। উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, “২০০৯ সালে লোকসভা ভোটেও কন্নৌজে প্রার্থী দেয়নি কংগ্রেস। তাই এর মধ্যে অন্য কোনও অর্থ খোঁজা নিষ্প্রয়োজন।” কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা বলছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীকে জেতাতে মুলায়মকে পাশে পাওয়া একান্ত দরকার। তা ছাড়া অর্থনৈতিক সঙ্কটের পরিস্থিতিতে মুলায়মকে পাশে নিয়ে কিছু সংস্কার কর্মসূচিতে হাত দিতে চাইছে সরকার। এই সিদ্ধান্ত এই দুই কাজেই সহায়ক হতে পারে।
তবে দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, মুলায়মকে পাশে রাখার চেষ্টা মানেই তৃণমূলকে দূরে সরিয়ে দেওয়া নয়। কারণ তৃণমূলকে দূরে সরালে কংগ্রেসের বিকল্প সীমিত হয়ে যাবে। মুলায়মের উপর কংগ্রেসের নির্ভরতা বেড়ে যাবে। কে বলতে পারে তখন মুলায়ম কী আচরণ করবেন! তাই মুলায়মকে একটা বিকল্প হিসেবে রেখে যতদূর সম্ভব সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টাই চালিয়ে যাবে কংগ্রেস। সংস্কারের বিষয়গুলি নিয়ে তৃণমূলকে বোঝানো হবে। যেমন কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ আজ সনিয়ার সঙ্গে দেখা করে বলেন, বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ব্যাপারে একমাত্র তৃণমূলই আপত্তি জানাচ্ছে। সূত্রের খবর, বিমানমন্ত্রীকে সনিয়া জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন। যাতে সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.