উচ্চ মাধ্যমিকেও সাফল্যের সারিতে জায়গা করে নিল বাঁকুড়ার ছেলে-মেয়েরা। পুরুলিয়াও সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখল। জেলার মধ্যে সেরা তো বটেই রাজ্যের মধ্যে ষষ্ঠ হয়েছেন খাতড়া হাইস্কুলের দীপাঞ্জন কুণ্ডু। কলা বিভাগ থেকে তিনি ৪৬৯ নম্বর পেয়েছেন।
অষ্টম স্থানে রয়েছেন বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের অনুপম মণ্ডল। তাঁর বাবা-মা শিক্ষকতা করায় বাড়িতে ছিল পড়াশোনার পরিবেশ। সেই সঙ্গে প্রতিটি বিষয়েই ছিল গৃহ শিক্ষক আর টানা পাঁচ-ছ ঘন্টার দৈনিক পড়াশোনা। এতেই এই সাফল্য বলে দাবি অনুপমের। অনুপম বলেছে, “জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছি। মফস্সল এলাকায় চিকিৎসা করতে চাই।”
ছেলের সাফল্যে গর্বিত বাবা-মা অমৃত মণ্ডল ও রীতা মণ্ডল। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হারাধন মণ্ডল বলেন, “অনুপম বরাবরই ক্লাসে প্রথম হয়ে এসেছে। ভাল ফল করবে জানতাম।” এই স্কুলের নাম উচ্চ মাধ্যমিকে আগে চারবার রাজ্যের সেরা দশের তালিকায় উঠেছে।
|
জয়েন্ট্র এন্ট্রাসে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েও অবশ্য ডাক্তার হতে চান না উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে নবম স্থানাধিকারী সিমলাপাল মদনমোহন হাইস্কুলের সুমন সিংহ মহাপাত্র। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৬৮। সুমন বলেন, “ডাক্তারি নয়, অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে আমি পড়াশোনা করে গবেষণা করতে চাই।” স্থানীয় চাকড়াশোল গ্রামে তাঁর বাড়ি। তাঁর বাবা ব্যবসায়ী স্বপন সিংহ মহাপাত্রও বলেন, “আমরা পড়ার ব্যাপারে কখনও ওকে চাপ দিইনি। ওর সাফল্যে আমরা খুশি।” পদার্থ বিদ্যা তাঁর প্রিয় বিষয় হলেও নেশা ছবি আঁকা।
রাজ্যের মেধা তালিকায় ১৩ স্থানে থাকা বাঁকুড়া জেলার মেয়েদের মধ্যে সেরা রুচিরা প্রতিহার অবশ্য পরীক্ষার ফল নিয়ে মোটেই খুশি নন। দু’বছর আগে মাধ্যমিকে তৃতীয় স্থান দখলকারী বাঁকুড়া গালর্স হাইস্কুলের এই ছাত্রী বলেন, “বাংলা ও ইংরেজিতে আশানুরূপ নম্বর পাইনি। নম্বর কমে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারছি না।”
তাঁর মা পেশায় শিক্ষিকা নন্দিনীদেবী বলেন, “ওই দু’টি বিষয়ের নম্বর না কমলে উচ্চ মাধ্যমিকেও রুচিরা রাজ্যের প্রথম দশে চলে আসত। আমরা ওই দু’টি খাতা পুর্নমূল্যায়নের জন্য আবেদন জানাব।” রুচিরা জানিয়েছেন, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ভবিষ্যতে ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’ নিয়ে গবেষণা করতে চান। |
|
|
|
নিরভ্র মণ্ডল |
গার্গী পাণ্ডা |
সম্প্রীতি মুখোপাধ্যায় |
|
পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ প্রত্যাশামত ভাল ফল করেছে। জেলার সম্ভাব্য সেরা হয়েছে এই স্কুলের নিরভ্র মণ্ডল। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৫৬। দক্ষিণ ২৪ পরগণার সরিষার বাসিন্দা এই কৃতী জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিংয় পড়ার সুযোগ পেয়েও সেখানে যাচ্ছেন না। গণিতে ১০০ ও সংখ্যা তত্ত্বে ৯৯ নম্বর পাওয়া নিরভ্র বলেন, “সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করাই লক্ষ্য।”
ছেলেবেলায় তাঁর বাবা ও মা মারা গিয়েছিলেন। তাই এ দিন তাঁদের কথা নিরভ্রের বড় মনে পড়ছিল। অবসরে আঁকতে ভালবাসা ছেলেটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি প্রতিকৃতি এঁকেছেন। ইচ্ছা, সুযোগ হলে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তা তুলে দেবেন। বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ স্বামী আত্মপ্রভানন্দ বলেন, “নিরভ্র ভাল ছাত্র। তাঁর সাফল্যে আমরা খুশি।”
অন্যদিকে, ছাত্রীদের মধ্যে জেলায় সম্ভাব্য শীর্ষ তালিকায় যুগ্ম ভাবে উঠে এসেছেন পুরুলিয়া রাষ্ট্রীয় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের গার্গী পাণ্ডা ও পুরুলিয়া শান্তময়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সম্প্রীতি মুখোপাধ্যায়। দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৪৫১। শিক্ষক দম্পতির মেয়ে গার্গী ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যালে পড়ার সুযোগ পেলেও তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়েই পড়াশোনা করতে চান। সম্প্রীতি অবশ্য রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে এক জন দক্ষ প্রশাসক হতে চান। |