সম্পাদকীয় ১...
ভারত ও মায়ানমার
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের তিন দিনের মায়ানমার সফরের দুইটি মুহূর্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এক, সেই দেশের নূতন এবং ‘নির্মিত’ রাজধানী নেপিদ’য় প্রেসিডেন্ট থাইন সুইয়ের সহিত আলাপ; দুই, দেশের ভূতপূর্ব রাজধানী এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, ঐতিহাসিক শহর ইয়াঙ্গনে বিরোধী নেত্রী আঙ সান সু চি-র সহিত তাঁহার কথোপকথন। উভয়েই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে সাদর উষ্ণতায় আতিথ্যে বরণ করিলেন। অন্য সব সফরকারী রাষ্ট্রপ্রধান যেখানে সু চি-র হ্রদের ধারের বাড়িতে গিয়া তাঁহার সাক্ষাৎপ্রার্থী হন, সেখানে মনমোহনের সাক্ষাৎপ্রার্থী হইতে সু চি নিজেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর হোটেলে চলিয়া আসেন। পরিবর্তিত এবং পরিবর্তমান মায়ানমারের দুই প্রধান নেতা ও নেত্রীর সহিত প্রধানমন্ত্রীর এই সাক্ষাৎ প্রতীকী। সামরিক শাসন এবং কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার দীর্ঘ ইতিহাস হইতে মায়ানমার যখন ক্রমশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্ব মঞ্চে অবতীর্ণ হইতে চলিয়াছে, সেই ক্রান্তিকালে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ানমার কেবল ভারতের প্রতিবেশী নহে, উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে তাহার অবস্থান এবং চিনের সহিত তাহার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে এই দেশটি ভারতের বিদেশ নীতিতে তাহার আয়তনের অনুপাতে অনেক বড় ভূমিকা লইতে চলিয়াছে।
ভারত নূতন মায়ানমারের উন্নয়নে সর্বতোভাবে সাহায্য করিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। জঙ্গি শাহির স্বৈরতন্ত্র গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু করার আগে হইতেই নয়াদিল্লি ইয়াঙ্গনের পাশে দাঁড়াইয়াছে। নরসিংহ রাওয়ের ‘পুবের দিকে তাকাইবার’ নীতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শিল্পোন্নত দেশগুলির সহিত বাণিজ্যিক নৈকট্য বাড়াইতে মায়ানমারের নির্ণায়ক ভূমিকার কথা আগেই স্বীকৃত ছিল। মনমোহন সিংহও সড়কপথে মায়ানমার হইয়া তাইল্যান্ড ও অবশিষ্ট ‘আসিয়ান’ গোষ্ঠীর দেশগুলির সহিত সংযোগ দৃঢ় করার উপর জোর দিয়াছেন। এই মর্মে চুক্তিও স্বাক্ষরিত হইয়াছে। আপাতত পঞ্চাশ কোটি ডলারের যে ঋণসাহায্য মায়ানমারকে দিতে ভারত প্রতিশ্রুত, তাহা এই যোগাযোগ বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক পরিকাঠামো নির্মাণ, পরিবহণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে লগ্নি হওয়ার কথা। মনে রাখা দরকার, মায়ানমারের সহিত ভারতের স্থলপথে অভিন্ন সাধারণ সীমান্তের দৈর্ঘ্য ১৬০০ কিলোমিটার। উত্তর-পূর্ব ভারতের জনজাতীয় রাজ্যগুলিতে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাস চলিয়াছে, তাহার অনেকগুলি ঘাঁটিই আবার সীমান্তপারের মায়ানমারের দুর্গম অরণ্যপ্রদেশে অবস্থিত। মায়ানমারের কাচিন গেরিলারাও ভারতে পালাইয়া আশ্রয় লইয়া থাকে। দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগে এই সমস্যার মোকাবিলা মসৃণ করিতে দুই দেশ পরস্পরের সহিত আরও নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখিবে।
এ সব সত্ত্বেও অন্য প্রতিবেশী চিনের তুলনায় মায়ানমারের সহিত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত নিশ্চিতভাবেই পিছাইয়া আছে। চিনই একমাত্র দেশ যে ফৌজি শাসনের কালেও মায়ানমারের সহিত সম্পর্ক ছিন্ন করে নাই, এমনকী শিথিলও করে নাই। বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তাহার একাকিত্ব ও স্বেচ্ছানির্বাসনের সুযোগ লইয়া এককভাবে মায়ানমারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সুহৃদের ভূমিকা পালন করিয়াছে। আজ মায়ানমারের বিপুল তৈল সম্পদ ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার যে নিষ্কাশন ও আংশিকভাবে ব্যবহারের সুযোগও একা চিনই হস্তগত করিয়া লইতে পারিয়াছে, তাহার পিছনে চিনা কমিউনিস্টদের স্বৈরতন্ত্র-প্রেমের ভূমিকা আছে। ভারত এ ক্ষেত্রে স্বভাবতই পিছাইয়া পড়িয়াছে। মায়ানমারে গণতন্ত্রের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়া নিজের বিদেশনীতির স্বার্থকে বিসর্জন দেওয়ার কালিদাসি হঠকারিতার খেসারত তো দিতে হইবেই। তবে এমন নয় যে, মায়ানমার ভারতের প্রতি বিরূপ। বরং মনমোহন সিংহের তিন দিনের সফরে সে দেশের প্রশাসক ও জনসাধারণের ভারতপ্রেমই উচ্চারিত হইয়াছে। প্রধানমন্ত্রী এমনকী মায়ানমারের গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রক্রিয়াতেও ভারতের ছয় দশকের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান লইয়া সাহায্য করিবার প্রস্তাব দিয়াছেন। সেই সঙ্গে ভারতস্থ ঐতিহ্যশালী বৌদ্ধ তীর্থগুলিকে মায়ানমারের পর্যটকদের জন্য আরও অবাধ, আকর্ষণীয় ও অভ্যর্থনামুখী করিয়া তোলা দরকার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.