দুর্গাপুজো নয়, তারিক্ষা মাতার মহাপুজোর জন্যই সারা বছরের সব আনন্দ জমিয়ে রাখে মন্তেশ্বরের তারাশুশনা গ্রাম। পুজো উপলক্ষে আশপাশের গ্রাম থেকে ভক্তসমাগম হয় গ্রামে। বসে মেলাও। রবিবার থেকে শুরু হয়েছে সেই পুজো। দেবীর সেবাইতদের তরফে অমিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই পুজো এখন উৎসবে পরিণত।” তাঁর দাবি, দুর্গাপুজো নয়, গ্রামবাসীরা সারা বছরের আনন্দ তুলে রাখেন তারিক্ষা পুজোর জন্য।
বাঘাসন পঞ্চায়েতের তারাশুশনা গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, প্রায় চারশো বছর ধরে তারিক্ষা মাতার পুজোর চল গ্রামে। প্রথমে মাটির মন্দিরেই দেবীর আরাধনা হত। পরে কংক্রিটের মন্দির তৈরি করা হয়। তাঁরা জানান, এলাকার জমিদার দেবেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের আমলে পুজোর রমরমা শুরু হয়। বর্ধমানের রাজা তেজচন্দ্রের আমলে পুজোর জন্য ২৫২ বিঘা জমি দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন সে জমি নেই। মন্দিরের ভিতর রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসন। |
জনশ্রুতি, ওই আসনে বসেই তারা নামে এক সাধক প্রথম দেবীর পুজো শুরু করেছিলেন। বাসিন্দারা জানান, সারা বছর গ্রামের মুখোপাধ্যায় ও চট্টোপাধ্যায় পরিবারের তত্ত্বাবধানে দেবীর পুজো হয়। জৈষ্ঠ্য মাসের চম্পক চতুর্দশীতে হয় মহাপুজো। পুজোর আগের দিন হয় দেবীর অধিবাস। প্রতি বছর অধিবাসের সন্ধ্যায় পুজোয় হাজির থাকতে হয় স্থানীয় হোসেনপুর গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যদের। অনেকে বলেন, ওই পরিবারের এক সদস্য এক সময়ে বর্ধমানের রাজপরিবারের সভাপণ্ডিত ছিলেন। শনিবার ছিল সেই অধিবাস। মূলমন্দিরের খানিক দূরে রয়েছে একটি জলাশয়। তারিক্ষা দিঘি নামেই পরিচিত সেটি। রেওয়াজ মেনে পুজোর দিন ওই দিঘির পাড়ে এক মন্দিরে আনা হয় দেবীকে। সারাদিন চলে পুজো। পরে দেবী ফিরে আসেন মূল মন্দিরে। পুজোর দ্বিতীয় দিন দেবীকে চতুর্দোলায় চড়িয়ে ঘোরানো হয় গোটা গ্রাম। গ্রামবাসীরা বাড়ির সামনে তৈরি করেন বেদি। শুধু তারাশুশনা গ্রাম নয়, প্রতিবার নিয়ম করে পাশাপাশি সিংহলি, হাটগাছা, বাঘাসন, কালুই, কুলি, সামন্ত, নারাগোয়ালিয়া গ্রামের কুমার সম্প্রদায়ের বিশেষ পুজো আসে দেবীর মন্দিরে। |