বিজ্ঞানের উন্নতি এবং দেশের মানুষের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নয়া বিজ্ঞান-নীতি তৈরি করবে কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি পূর্ণ শক্তিতে মদত জোগাবে দেশের বিজ্ঞানের ভাঁড়ার আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস-এর সাধারণ সভাপতি হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে শনিবার কলকাতায় এই কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
প্রধানমন্ত্রী এ দিন জানান, ভারত সরকার এখন বিজ্ঞানে এমন হারে বিনিয়োগ করছে, যা আগে কখনও করেনি। অনেক কাল ধরে এ দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিকাঠামো স্থবির হয়ে ছিল। উৎকর্ষকেন্দ্র কিছু কিছু গড়া হয়েছিল। কিন্তু দেশের উন্নয়নে যতটা মদত জোগানোর কথা ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির, ততটা মদত পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবর্ষপূর্তি মাথায় রেখে এ দেশে গবেষণার ভাবমূর্তি উন্নয়নে সরকার এ বার বিজ্ঞান প্রযুক্তির ২০০৩ সালে প্রণীত নীতি ঢেলে সাজবে। “বিজ্ঞানে অন্য সব জায়গায় কী কী হচ্ছে এবং ভারতবাসীরা কী কী চান, সে সব মাথায় রেখে ওই নীতি তৈরি হবে,” বলেন প্রধানমন্ত্রী। এই লক্ষ্যে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে দেশে বিজ্ঞানের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এ দিন শহরে পৌঁছে প্রথমে সল্টলেকে বোস ইনস্টিটিউটের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও গবেষকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, দেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের সুবিধার জন্য বিদেশ থেকে বিনা শুল্কে গবেষণার যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক আমদানির চেষ্টা চলছে। |
একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা
নজরে বিজ্ঞান |
• নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতি
• ১০০ বছরের ১০০টি সেরা আবিষ্কার নিয়ে স্মারক-গ্রন্থ
• ইন্টারনেটে ভারতীয় বিজ্ঞানের ‘হল অফ ফেম’
• বিজ্ঞান কংগ্রেসে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় স্মরণে বিশেষ বক্তৃতা
• সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে ১০০ পিএইচডি
• আশপাশের দেশের ২৫ তরুণ-তরুণীকে পিএইচডি |
|
এ দেশে পিএইচডি-র কাজ শেষ করেই অনেক গবেষক বিদেশে চলে যান। এই প্রবণতা ঠেকাতে বিনা শুল্কে যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক আমদানির বিষয়টিকে কেন্দ্রীয় সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দু’টি প্রকল্পের কথা এ দিন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক এবং বণিকসভা সিআইআই-এর যৌথ পরিচালনায় বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে এখন থেকে ফি-বছর ১০০টি পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হবে। দ্বিতীয় প্রকল্পটিও পিএইচডি দেওয়ার। তবে এ ক্ষেত্রে ডিগ্রি পাবেন যে ২৫ জন ছাত্রছাত্রী, তাঁরা আসবেন ভারতের বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশ থেকে।
বোস ইনস্টিটিউট থেকে প্রধানমন্ত্রী যান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে শতবার্ষিকী ভবনে বিজ্ঞান কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে মনমোহন সিংহ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখ প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি যে অভিনব, তা বুঝিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল বলেন, “এই প্রথম বিজ্ঞান কংগ্রেসের সাধারণ সভাপতির পদে কাউকে এ ভাবে বরণ করে নেওয়া হল।” পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কংগ্রেসের কাউন্সিল সদস্যরা আমাকে সাধারণ সভাপতি নির্বাচন করলে প্রথমে ভেবেছিলাম, সাধারণ মানুষ হিসেবে বিজ্ঞানের মতো জটিল ক্ষেত্রে আমার নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা সীমিত। কিন্তু যা ভেবে আমি দায়িত্ব নিতে রাজি হলাম তা হল, এ কাজে এগোলে দেশের মানুষকে একটা বার্তা দিতে পারব। বার্তাটি হল, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা দশকে সরকার ভারতীয় বিজ্ঞানকে পূর্ণ শক্তিতে মদত জোগাতে চায়।”
বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবর্ষপূর্তি উৎসবের সূচনা হবে আগামী জানুয়ারিতে এ শহরেই, যেখানে ওই সংগঠনের জন্ম হয়েছিল স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। সেই সংগঠনের শতবর্ষ স্মরণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সভায় প্রধানমন্ত্রী এ দিন বলেন, “আশা করছি, বিজ্ঞান কংগ্রেসের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের শতবর্ষপূর্তিকে সম্মান জানাতে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।” এই উপলক্ষে বর্ষব্যাপী নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। আগামী বছর কলকাতায় বিজ্ঞান কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন ছাড়াও দেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণে আরও ৩টি অধিবেশন হবে। কলকাতার বার্ষিক অধিবেশনের ‘থিম’ ভবিষ্যতের ভারত গড়তে বিজ্ঞান। সেখানে স্যার আশুতোষকে সম্মান জানাতে তাঁর নামে বিশেষ বক্তৃতার আয়োজন করা হবে। প্রকাশিত হবে বিশেষ স্মারক-গ্রন্থ। গত ১০০ বছরে দেশে বিজ্ঞানের ১০০টি প্রভাবশালী আবিষ্কার স্থান পাবে বইতে। ইন্টারনেটে ‘পোস্ট’ করা হবে ‘হল অফ ফেম।’ উদ্দেশ্য, বিজ্ঞানে ভারতের অবদান বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বিজ্ঞান পড়তে তরুণ-তরুণীদের উৎসাহ জোগানো আগামী জানুয়ারির বিজ্ঞান কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশে একটি ‘সায়েন্স অ্যাকাডেমি ফর দ্য ইয়ং’ গড়ার যে প্রস্তাব অনেক দিন ধরেই আছে, তা এ বার আরও জোর পাবে। “তরুণ-তরুণীদের উৎসাহ দিতে আগামী জানুয়ারিতে কলকাতার অধিবেশনে ৪৫ বছরের কম বয়সী প্রথম সারির ভারতীয় বিজ্ঞানীদের আমন্ত্রণ জানাব বিশেষ বক্তৃতা দিতে,” বলেন প্রধানমন্ত্রী। |