সিনেমা সমালোচনা ২...
কয়েকটি মেয়ের বাজে গল্প
সুব্রত সেন পরিচালিত ‘কয়েকটি মেয়ের গল্প’ ছবিতে গড়পড়তা একটা গল্প খুঁজে না পাওয়াটাই ছিল সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়! এবং সে কারণেই ছবিটা সম্পর্কে সম্পূর্ণ হতাশ হয়েও বলতে বাধা নেই শিল্পভাষার দিক থেকে অতীত বর্তমানকে কোনও সূত্র না দিয়ে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে দর্শকদের সামনে এনে ফেলাটার মধ্যে একটা নতুনত্ব ছিল।
একটু ভেঙে বলি। প্রথম দৃশ্যে আমরা দেখলাম তনুশ্রী আর রাইমা অভিনীত চরিত্র দু’টি পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে। যাচ্ছে এক শিল্পপতিকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করতে। এই রাইমা ঝকঝকে একজন পেশাদার এসকর্ট। আবার কয়েক দৃশ্য পরেই আমরা দেখছি পার্নো মিত্র অভিনীত মলি চরিত্রটি লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে প্রথম দেখতে পাচ্ছে রাইমাকে। এই রাইমা অতি সাধারণ।
কয়েকটি মেয়ের গল্প
তনুশ্রী, পার্নো, রাইমা, লকেট, মমতাজ, শান্তিলাল
তার মধ্যে এসকর্ট-সুলভ চাকচিক্য একেবারেই নেই। তাকে নাকি লকেট লেকের ধার থেকে আত্মহত্যা করতে যাওয়ার মুহূর্তে ধরে ফেলে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। অথচ পার্নো এবং তনুশ্রী, দুজনেই পেশাদার এসকর্ট। তা হলে প্রশ্ন: প্রথম দৃশ্যে তনুশ্রী-রাইমা যদি একসঙ্গে থাকেন, তা হলে অনেক পরের দৃশ্যে কোনও সূত্র ছাড়াই রাইমাকে পার্নো প্রথম আবিষ্কার করছেন কী ভাবে? আসলে এইখানে গল্প পিছিয়ে যাচ্ছে। এবং দর্শককে বিন্দুমাত্র সূত্র না দিয়ে গল্প বারবার এ ভাবে এগিয়েছে-পিছিয়েছে।
কিন্তু এই সামান্য এক্সপেরিমেন্টটুকু বাদ দিলে কাহিনির যেখানে যেটুকু সুতো ঝুলছিল সেগুলো ছবির স্বার্থে ঠিক মতো ব্যবহারই করতে পারলেন না পরিচালক। মোটামুটি ভাবে যা বোঝা গেল তা হল মণি স্যার (শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়) অপরাধ জগতের একজন ‘ডন’। তার মূল কাজই হল ধনীদের ব্ল্যাকমেল করে অর্থ রোজগার। এই কাজে যে সব মেয়েকে মণি স্যার ব্যবহার করে তারা একাধারে পেশাদার ‘কলগার্ল’ এবং প্রায় গুন্ডা। আর এই মেয়েদের এই পেশায় যে টেনে এনে আশ্রয় দেয়, রক্ষণাবেক্ষণ করে, সে লকেট চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি চরিত্রকে খুঁজে পাওয়া গেল যেমন মণি স্যারের বউ এবং তার বোন।
এই বোন আবার সম্ভবত স্ক্রিৎজোফিনিয়া জাতীয় কোনও রোগের শিকার। সে নিজের কল্পনায় একটি মেয়েকে দেখতে পায়, যাকে সে ভালবাসে এবং কামনা করে। এই কল্পিত বান্ধবীর সঙ্গে এমন কী সে বাড়ি থেকেও পালায়। কিন্তু এত সব কিছুর পরও সুব্রত সেন এই কয়েকটি মেয়ের জগাখিচুড়ি পেকে যাওয়া আধা কমেডি গল্পের মধ্যে দিয়ে দর্শকদের ঠিক কোন বিপন্নতার কথা বলতে চাইলেন বোঝা গেল না। নাকি তিনি এটাই বোঝাতে চাইলেন যে সমাজ ব্যবস্থা এবং মূল্যবোধের এই আমূল পরিবর্তনের দিনে চূড়াম্ত কাটাছেঁড়ার পর মন এবং শরীর দুটোই আসলে সিনেমা বা সাহিত্যের মতো শিল্পমাধ্যমের কাছে শুধু স্যাটায়ার হয়ে গেছে। আর এসকর্ট সার্ভিস জাতীয় গল্প নিয়ে ছবি এখন তো ভাত-ডালের মতো ঘরোয়া এবং স্বল্পবৌদ্ধিক বিষয় হয়ে উঠেছে। পার্নো মিত্রর একটা নিজস্ব অভিনয়ের ধরন আছে, তাই মলির চরিত্রে তাঁকে বেশ সাবলীল লাগে। পার্নোর সঙ্গে সঙ্গে মমতাজ সরকারের অভিনয়ও বেশ স্বতঃস্ফূর্ত, প্রাণবন্ত বলা যায়। কিন্তু যতই তালগোল পাকানো হোক, তনুশ্রী অভিনীত চরিত্রটাই ছবিতে একমাত্র বসে দেখার। এর আগেও তনুশ্রী ‘বেডরুম’-য়ে অত্যন্ত ভাল অভিনয় করেছিলেন। তনুশ্রীকে আগামী দিনে একজন বহুমাত্রিক অভিনেত্রী হিসেবে পাওয়ার আশা রাইল। বাকি রাইমা সেন বা লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বেশি কিছু করার ছিল না।
কখনও, কখনও একটা দুর্বল ছবিকে শিল্প নির্দেশনা বা সুরক্ষেপণ দু’কদম এগিয়ে দেয়। এই ছবিতে সে পর্বগুলোও সমান্তরাল ব্যর্থতার শিকার। প্রেমেন্দু বিকাশ চাকির ক্যামেরাও শেষ সমুদ্রের দৃশ্যটি ছাড়া উত্তরণের আর কোনও পথ খুঁজে পায়নি।

পল্লবিত
ছবির নাম ‘জয়জয়ন্তী’। রিমেক নয়। আগের ‘জয়জয়ন্তী’র সঙ্গে কোনও মিলই নেই। পল্লবী চট্টোপাধ্যায় এখানে কলেজের অধ্যক্ষা। ফ্ল্যাশ ব্যাকে অর্জুন চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর মন দেওয়া নেওয়ার কিছু দৃশ্যও আছে। দ্বিতীয় ইনিংসে পল্লবী পর পর ছবি করছেন। “‘প্রেমের কথাকলি’, ‘চাল’, মৈনাক বিশ্বাসের ‘বেডরুম’ করেছি। অরিন্দম শীলের ‘আবর্ত’তেও আছি। সামনের মাসে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি ছবিতেও অভিনয় করার কথা,” বললেন পল্লবী।

ছবি: প্রদীপ আদক


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.