‘মযার্দার লড়াই’য়ে মন্ত্রী ব্যস্ত
ভোট কাটাকাটির অঙ্ক কষায়
ন্ত্রী ব্যস্ত অঙ্ক কষায়। মন্ত্রী ব্যস্ত প্রচারে।
এখনও পর্যন্ত ভোটে হারেননি। তাই তাঁর কাছে ‘চ্যালেঞ্জ’ ধূপগুড়ি পুরভোট। তিনি মন্ত্রী। তিনি তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যানও বটে। তিনি গৌতম দেব।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে এটা গৌতমবাবুর ‘মর্যাদার লড়াই’ও। গত এক বছরে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকর্মের চেষ্টার কতটা প্রভাব উত্তরবঙ্গের জনতার মধ্যে পড়েছে, সেটা মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তুলে ধরার ‘দায়’ও আছে। রয়েছে উত্তরবঙ্গে একক ভাবে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা প্রতিষ্ঠার ‘স্বপ্ন’।
গৌতমবাবু ধূপগুড়ি চষে ফেলছেন। প্রচারের ধকল নিতে দিনে গড়ে চার প্যাকেট করে ‘ওআরএস’ খাচ্ছেন। দলীয় সতীর্থদের নিয়ে মাঝরাতেও ‘ভোট কাটাকাটির’ হিসেব কষছেন।
ধূপগুড়িতে পুরভোটের প্রচারে অভিনেত্রী জুন মালিয়া। ছবি: রাজকুমার মোদক
লড়াই তো শুধু সিপিএমের সঙ্গে নয়। কংগ্রেস, বিজেপি-ও আলাদা লড়ছে। গৌতমবাবুর সামনে রয়েছে ‘শিলিগুড়ি-মডেল’। ২০০৯-এ নিজের শহরে সমান আসন জেতার পরে বামেদের সমর্থনে কংগ্রেস শিলিগুড়ির পুরবোর্ড গড়ায় নানা ‘অস্বস্তিকর’ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল গৌতমবাবুকে। তাই এ বার ‘মর্যাদার লড়াই’য়ে মন্ত্রী প্রচারে খামতি রাখতে নারাজ। সুব্রত বক্সী, শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা ধূপগুড়ি ঘুরে গিয়েছেন। আসছেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। নেতা থেকে অভিনেতা বাদ নেই। রবিবার সাতসকালে অভিনেত্রী জুন মালিয়াকে নিয়ে গিয়ে সবক’টি ওয়ার্ডে ‘রোড-শো’ করালেন গৌতমবাবু। বললেন, “উত্তরবঙ্গে পুরোপুরি তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা উপহার দিতে চাই মুখ্যমন্ত্রীকে। ধূপগুড়ির লড়াইকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। সব হিসেব মাথায় রেখেই এগোচ্ছি।”
১০ বছর আগে গঠিত ১৬ আসনের ধূপগুড়ি পুরসভায় গোড়া থেকেই ক্ষমতায় বামেরা। গত পুরভোটে সিপিএম পায় ১১টি আসন (মোট ভোটের ৫৩ শতাংশ)। কংগ্রেস-তৃণমূল-বিজেপি-র ‘অলিখিত’ জোট পেয়েছিল ৫টি (তৃণমূল ৩, কংগ্রেস ও বিজেপি ১টি করে) আসন। জোট-প্রার্থীদের পক্ষে ভোট পড়েছিল
৪৬ শতাংশ। তৃণমূল একক ভাবে ২৫ শতাংশ। কংগ্রেস ৬ এবং বিজেপি ১৫ শতাংশ। এ বার জোট নেই। লড়াই চতুর্মুখী। সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস দিয়েছে ১১টি আসনে। দু’টি আসনে ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল ও একটিতে সিপিএমের এক প্রাক্তন কাউন্সিলরের স্ত্রী নির্দল হিসেবে লড়ছেন। ১৬টি আসনে প্রার্থী ৬২ জন।
পুর-এলাকায় বামেদের ভোট কমেছিল গত বিধানসভায়। সেই ফলাফলের নিরিখে ৮টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। তাদের পক্ষে ভোট পড়ে প্রায় ৪০%। কিন্তু বিধানসভায় আবার বিরোধী জোট ছিল। এ বার কংগ্রেসের ভোট বাদ দিয়ে হিসেব চলছে। আলোচনায় আসছে বিজেপি-ও। গত বিধানসভায় বিজেপি ধূপগুড়িতে প্রায় ১৯ হাজার ভোট পেয়েছে। বিধানসভা ভোটে পুর-এলাকা থেকে কিছু ভোট গিয়েছিল কামতাপুর পিপলস পার্টির ঝুলিতে। তৃণমূল নেতাদের মাথায় রয়েছে সেটাও। তবে যে পাঁচটি আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি, সেখানে কংগ্রেসকর্মীরা তৃণমূলের হয়ে খাটছেন এমনই দাবি করে গত বারের কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা টাউন-ব্লক কংগ্রেস সভাপতি অজয় পাল বলছেন, “এখানে যে একেবারে জোট হয়নি, তা বলা যায় না। তবে সামগ্রিক ভাবে হলে আরও ভাল হত।”
জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসু, বিজেপি-র ধূপগুড়ি টাউন যুব মোর্চার সভাপতি কৃষ্ণ দেবরায়রা একক ভাবেও তাঁদের দল ভাল ফল করবে বলে প্রত্যয়ী। কিন্তু ভোট কাটাকাটির এই অঙ্কই ‘পরিবর্তনে’র বাজারেও আশায় রেখেছে সিপিএমকে। দলীয় সূত্রের খবর, ‘পরিবর্তনে’র রেশ এখনও রয়েছে বুঝেই ১০ বছরের পুরপ্রধান সত্যরঞ্জন ঘোষকে এ বার প্রার্থী করা হয়নি। কিন্তু পুরবোর্ড কী কী কাজ করেছে, তার ছাপানো পুস্তিকা বিলি করার মাঝেই কংগ্রেস-বিজেপি-র ঝুলিতে কত ভোট যেতে পারে, সেই হিসেব কষছেন অনেক বাম নেতা-কর্মী। সিপিএমের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় মুখে বলছেন, “ভোট কাটাকাটি নয়। বর্তমান রাজ্য সরকারের কাজকর্মেই মানুষ বীতশ্রদ্ধ। তার ভিত্তিতেই ধূপগুড়িতে যথেষ্ট ভাল ফলের আশা করছি।”
মর্যাদা, স্বপ্ন, অঙ্ক, দায়। ‘চ্যালেঞ্জে’র চতুর্ভূজে ব্যস্ত মন্ত্রী। ব্যস্ত অঙ্ক কষায়। ব্যস্ত প্রচারে।

(সহ প্রতিবেদন: অনির্বাণ রায় ও নিলয় দাস)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.