বিষয়: ক্রিকেট
মি খুব একটা ক্রিকেট-ভক্ত নই। তবে এটা জোর গলায় বলতে পারি যে, গত কয়েক বছরে ভারতে ক্রিকেট আর নিছক ব্যাট-বলের খেলায় আটকে নেই, ধর্মের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। চলো, ক্রিকেট নিয়ে তোমাদের কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাই।
• মহিলাদের ক্রিকেটে প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। পুরুষদের ক্রিকেট বিশ্বকাপের দু’বছর আগেই।
• ১৯২৮ সালে তৈরি হয় বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া, সংক্ষেপে বিসিসিআই। এর প্রথম সভাপতি ছিলেন রেমন্ড গ্রান্ট গোভান, এবং প্রথম সচিব ছিলেন অ্যান্টনি ডি মেলো।
• টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের প্রথম জয় আসে প্রথম টেস্ট খেলার কুড়ি বছর বাদে, ১৯৫২ সালে। প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় চেন্নাইয়ে (তখনকার মাদ্রাজ)।
• ১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিকে ফ্রান্সকে পরাজিত করে গ্রেট ব্রিটেন ক্রিকেটে সোনা জেতে।
• অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার ডেনিস লিলি এক বার একটি টেস্ট ম্যাচে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাট ব্যবহার করেন। ফল কী হয়েছিল জানো? আইন করা হয় যে, ক্রিকেট ব্যাট একমাত্র কাঠের তৈরি হতে হবে।
ক্রিকেট কথাটা যেমন অন্য ভাষা থেকে এসেছে, আম্পায়ার শব্দটির উৎসও তেমনই ইংরেজি নয়,
ফরাসি। মূল শব্দটির অর্থ ‘সমান নয়’, অর্থাৎ যে দুটি দলের কোনওটিরই সদস্য নয়, অর্থাৎ
‘নিরপেক্ষ’। ১৯৯২ থেকে আই সি সি ‘তৃতীয় আম্পায়ার’ প্রথা প্রবর্তন করেছে। টেলিভিশন রিপ্লে-র
ভিত্তিতে তৃতীয় আম্পায়ারের নেওয়া সিদ্ধান্তে যে ক্রিকেটার প্রথম আউট হন, তাঁর নাম সচিন তেন্ডুলকর।
জানো কি
• ক্রিকেট নামক খেলাটির জন্ম মধ্যযুগের শেষের দিকে, কিন্তু ঠিক কোন খেলা থেকে তার উদ্ভব, সেটা স্পষ্ট নয়। ইতিহাসবিদরা সে কালের কয়েকটি লোকায়ত খেলার কথা জানিয়েছেন, যেগুলির সঙ্গে ক্রিকেটের কিছুটা মিল আছে, যেমন স্টুল-বল, স্টাও-বল, এমনকী ক্লাব-বল, যে খেলাটিকে ইংল্যান্ডের রাজা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তবে ক্রিকেট নামটি ওল্ড ইংলিশ থেকে আসেনি, এসেছে ওল্ড ফ্লেমিশ থেকে।

• একেবারে গোড়ার দিকে, ক্রিকেট যখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, সে আমলে ব্যাটগুলি দেখতে ছিল অনেকটা এখনকার হকিস্টিকের মতো। তখন বলটি ব্যাটসম্যানের দিকে গড়িয়ে দেওয়া হত। এই ভাবেই এল আন্ডারআর্ম বোলিং। এখন মনে হতে পারে বাচ্চাদের খেলা, কিন্তু ভাল বোলাররা ওই কায়দায় বল রীতিমত স্পিন করাতে পারতেন, ফলে ব্যাটসম্যান এবং বোলারের মধ্যে একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলত। বস্তুত, দক্ষ বোলারদের মোকাবিলা করতে গিয়েই ব্যাটের চেহারাও ক্রমশ বদলে গেল, এল আমাদের চেনা ক্রিকেট ব্যাট। এবং, ব্যাট যত উন্নত হতে লাগল, ক্রিকেট ততই ব্যাটসম্যান-প্রধান খেলা হয়ে উঠল। বোলিংয়ের আধুনিক কৌশল কী ভাবে এল, তা নিয়ে এক মজার গল্প আছে। কেন্ট-এর ক্রিকেট খেলোয়াড় জন উইলস-এর বোন ক্রিস্টিনা ক্রিকেট খেলতে নামলেন। তাঁর বল করার শখ, কিন্তু সে কালের রীতি অনুসারে স্কার্ট এমন ফোলানো-ফাঁপানো যে হাত নিচু করে বল গড়িয়ে দেওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। তিনি হাত ঘুরিয়ে বল ছোড়া শুরু করলেন। বোনের দেখাদেখি জনও রাউন্ড-আর্ম বোলিং ধরলেন। কিন্তু ক্রিকেটের কর্তারা পত্রপাঠ ওই ভাবে বল করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসকে আটকানো যায় না, ১৮২০’র দশকের মধ্যে হাত ঘুরিয়ে বল করার রীতিই সুপ্রচলিত হল। পরবর্তী কুড়ি-পঁচিশ বছরের মধ্যে প্রচলিত হল ওভার-আর্ম বোলিং। তত দিনে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এম সি সি) ক্রিকেটের নীতিনির্ধারক হয়ে উঠেছে। কিন্তু বোলার মাথার ওপরে হাত তুলতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারটা এম সি সি প্রথমে আম্পায়ারদের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছিল। নানা আম্পায়ারের নানা মত, স্বভাবতই বিভ্রান্তি চলল। শেষ পর্যন্ত ১৮৬৪ সালে এম সি সি কিছুটা বাধ্য হয়েই আইনকানুন সংশোধন করে জানাল, বোলার যে ভাবে খুশি বল করতে পারেন, কেবল (কনুই ভেঙে) বল না ছুড়লেই হল। একটা মজার খবর দিই। ১৯২১ সালে ইংল্যান্ডে তিনটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ট্রেভর মেলনি আন্ডারআর্ম বল করেছিলেন!

• অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ক্রিকেটের কেন্দ্রে ছিল হ্যাম্বলডন ক্লাব। ওই সময়েই টমাস লর্ড একটি মাঠ কিনলেন, সেটিই হয়ে উঠল এম সি সি’র ঘরের মাঠ। অষ্টাদশ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই এম সি সি হয়ে দাঁড়াল এই খেলার নীতিনির্ধারক তথা অভিভাবক। বস্তুত, বিশ শতকের গোড়া থেকেই এম সি সি ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দল গঠনের দায়িত্ব নিল এবং ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি অবধি সে দেশের জাতীয় ক্রিকেট দল এম সি সি’র টিম হিসেবেই খেলত। ‘ল’জ অব ক্রিকেট’-এর কপিরাইট এখনও এম সি সি’র হাতে, তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়মকানুন প্রণয়ন এবং সংশোধনের ব্যাপারে এখন শেষ কথা বলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আই সি সি)। টমাস লর্ড ক্রিকেট দুনিয়াকে যে মাঠটি উপহার দিয়েছিলেন, তার নাম লর্ডস!

• ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচটি হয়েছিল ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে, ১৮৭৭ সালে। এটিই ‘অ্যাশেস’-এর লড়াই হিসেবে প্রসিদ্ধ হয়েছে। তবে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছিল ১৮৪৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম কানাডা। নিউ ইয়র্কের একটি দলের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল প্রধানত টরন্টো শহরের খেলোয়াড়দের একটি দল। ম্যাচটি সফল হয়। চার বছর পরে কানাডার খেলোয়াড়রা আমেরিকায় আমন্ত্রিত হয়ে খেলতে যান এবং জয়ী হন। পরবর্তী দশকে দু’দেশের খেলোয়াড়রা নিয়মিত পারস্পরিক সফর করেছিলেন। ক্রিকেট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সে দেশে গৃহযুদ্ধের পরে এই জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে।

• প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আই সি সি আম্পায়ারের ভূমিকায় কিছু পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। তৃতীয় আম্পায়ারের রীতি ভাল ভাবে স্বীকৃত হওয়ার পরে আই সি সি আরও এক ধাপ এগিয়ে ‘আম্পায়ার ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম’ (ইউ ডি আর এস) চালু করে। ২০০৯ সালে নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তানের মধ্যে টেস্ট ম্যাচে এই নিয়ম আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রবর্তিত হয়।
এই ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দলগুলি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানাতে পারে, তবে একটি ম্যাচে ক’টি সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা চাওয়া যাবে, তার একটি ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারিত থাকে। এই পুনর্বিবেচনার জন্য খেলার সংশ্লিষ্ট অংশটি তৃতীয় আম্পায়ারকে বিশেষ ভাবে ফিরিয়ে দেখানো হয় এবং তাঁকে নানা ধরনের প্রযুক্তিগত সাহায্য দেওয়া হয়, যেমন বল-ট্র্যাকিং, ইনফ্রা-রেড রশ্মির সাহায্যে খতিয়ে দেখা বলটি কোথায় লেগেছিল, ‘স্নিকোমিটার’ ব্যবহার করা, যাতে ছবি এবং শব্দ যাচাই করে দেখা হয় ব্যাটে-বলে হয়েছিল কি না। আই সি সি দাবি করেছে, এই ব্যবস্থাগুলি প্রায় ত্রুটিহীন, কিন্তু বর্তমান এবং ভূতপূর্ব ক্রিকেটাররা অনেকেই এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন। বস্তুত, ভারতীয় ক্রিকেট কর্তারাও ইউ ডি আর এস ব্যবহারের পক্ষপাতী নন।

• এখন ক্রিকেটে ওভার মানেই ছ’টি বল, অবশ্যই নো-বল বা ওয়াইড না ধরে। এই বাঁধাধরা নিয়মটা কিন্তু বেশ নতুন। টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম যুগ থেকে ইংল্যান্ডে নানা মাপের ওভার ছিল, কখনও চার বলের ওভার খেলা হত, কখনও পাঁচ, কখনও আট। ১৯৪৬ সালে ইংরেজরা ছ’বলের ওভার বেঁধে দেয়। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডেও এক কালে চার, পাঁচ বা ছ’বলের ওভার নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চলেছে, তার পর ১৯৭৮-৭৯ অবধি আট বলের ওভার চালু ছিল।

• ১৯৬২ সালে ইংল্যান্ডে দর্শক টানার জন্য সীমিত ওভারের ক্রিকেট চালু হয়। ১৯৬৩ সালে প্রথম শ্রেণির দল নিয়ে পুরোদস্তুর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। তরুণদের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, ব্যবসায়িক সাফল্যও আসে। ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার একটি টেস্ট ম্যাচ বৃষ্টি জন্য পণ্ড হয়ে গেলে বিকল্প হিসেবে একটি সীমিত ওভারের ম্যাচ খেলানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক স্তরে সেটিই প্রথম এক দিনের ক্রিকেট ম্যাচ। সেটিও দারুণ জনপ্রিয় হয়। আর তারই পায়ে পায়ে আসে ১৯৭৫ সালে পুরুষদের প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ।

• জনপ্রিয় সংস্কৃতির দুনিয়ায় ক্রিকেট রীতিমত গুরুত্বপূর্ণ। এই খেলাটিকে কেন্দ্র করে অনেক উপন্যাস লেখা হয়েছে, অনেক চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। এমন কয়েকটি ভারতীয় ছবি হল লগান, ইকবাল এবং পাটিয়ালা হাউস। সেই ১৮৩৬ সালে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত পিকউইক পেপার্স উপন্যাসে চার্লস ডিকেন্স এক ক্রিকেট ম্যাচের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছিলেন। দুটি দলের নাম ছিল অল-মাগ্লটন এবং ডিংলি ডেল। প্রসিদ্ধ ব্রিটিশ লেখক পি জি উডহাউস যাঁদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন জে এম ব্যারি এবং আর্থার কনান ডয়েল।
বলো তো
১ কোন খেলোয়াড় প্রায় ৩১ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছিলেন?
২ এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে কোন পিতাপুত্র প্রথম তাঁদের প্রথম ওভারে উইকেট নিয়েছিলেন?
৩ এক দিনের আন্তর্জাতিকে কোন ব্যাটসম্যান প্রথম ৯৯ রানে আউট হন?
৪ কোন ভারতীয় ক্রিকেটার জীবনের প্রথম টেস্টে এক ইনিংসে শতরান এবং অন্যটিতে শূন্য করেছিলেন?
৫ ২০০৩ সালে কোন ক্রিকেটার ‘খেল’ নামের একটি সিনেমায় অভিনয় করেন?
৬ ভারতের কোন ক্রিকেট মাঠে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা হয়েছে?
উত্তর
১) উইলফ্রেড রোডস ২) সুনীল ও রোহন গাওস্কর ৩) জেফ্রি বয়কট
৪) গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ ৫) অজয় জাডেজা ৬) ইডেন গার্ডেনস।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.