|
|
|
|
পুরকথায় পাঁশকুড়া ১ |
বাড়ি-বাড়ি নলবাহিত জল অমিলই |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
পঞ্চায়েত থেকে পুরসভায় উন্নীত হওয়ার ১০ বছরের মধ্যেই পাঁশকুড়ায় জনসংখ্যা বেড়েছে ব্যাপক হারে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জলের চাহিদা। আর এই জলের চাহিদা ও জোগানের ফারাকই পাঁশকুড়ায় পুরভোটের অন্যতম ইস্যু এ বার। বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে প্রার্থীরা প্রচারে বেরিয়ে সাব-মার্সিবল পাম্প বসিয়ে আসছেননির্বাচনী বিধির তোয়াক্কা না করেই।
প্রথম বার পুরবোর্ডে ক্ষমতায় এসে বামেরা বাড়ি-বাড়ি পানীয় জল সরবরাহের জন্য ৬টি পাম্প হাউস তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল। তার মধ্যে একটি তৈরিও করে ফেলে তারা। কিন্তু দ্বিতীয় পুর-নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পরে কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোটের পুরবোর্ড সেই প্রকল্প আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। পাম্প বসলেও বিদ্যুতের সংযোগ আসেনি। পাইপলাইনের মাধ্যমে বাড়ি-বাড়ি জল সরবরাহ তো দূরের কথা। সেই টাকায় একের পর এক সাব-মার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে। তৃণমূলের পুরপ্রধান আব্দুল হাকিম খানের দাবি, “আমরা পুরবোর্ডে এসে ৭০টিরও বেশি সাব-মার্সিবল পাম্প বসিয়েছি। এতে জলের চাহিদা প্রায় ৯০ শতাংশ মিটেছে।” বিরোধী বামেদের অবশ্য অভিযোগ, আপাত সুবিধা করে দেওয়ার জন্য অপরিকল্পিত ভাবে যত্রতত্র সাব-মার্সিবল পাম্প বসানোয় আখেরে ক্ষতিই হচ্ছে। জলস্তর নেমে যাচ্ছে। পুর-পরিষেবার অন্যতম অঙ্গ বাড়ি-বাড়ি জল সরবরাহের পরিকল্পনা এখন বিশ বাঁও জলে।
প্রচণ্ড গরমে ১৭ ওয়ার্ডের ছোট্ট পুরএলাকা পাঁশকুড়ার অন্যতম প্রধান চাহিদা পানীয় জল। প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দার চাহিদা মেটাতে পুরসভার ভরসা একশোরও বেশি সাব-মার্সিবল পাম্প। প্রতিটি ওয়ার্ডেই গড়ে ৮-১০টি সাব-মার্সিবল পাম্প আছে। পাম্পের তোলা জল পাইপলাইনের মাধ্যমে ট্যাপকলে পৌঁছয়। সেখান থেকে জলসংগ্রহ করেন বাসিন্দারা।
জলের জোগান বাড়লেও তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয় বলেই দাবি পুরবাসীর। পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা স্টেশন বাজারের বধূ বীণা মাইতির অভিযোগ, “সাব-মার্সিবল পাম্প দিয়ে সারা দিনে দু’বার জল তোলা হয়। কিন্তু সেই সময় অনেকেই বাড়ির মেশিন চালিয়ে ওই জল ভরে নেয়। ফলে পাইপলাইনের ট্যাপকল দিয়ে জল পড়ে সরু সুতোর মতো। আমাদের খুবই অসুবিধা হয়।” আর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাইমা বিবি বলেন, “পুরসভার বঞ্চনায় পাড়ায় একটি মাত্র ট্যাপকল। তা দিয়েও জল পড়ে না বিশেষ। জলসংগ্রহ নিয়ে খালি ঝগড়ঝাটি হয় পাড়ার লোকেদের মধ্যে।”
পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের নকুল চাউলিয়ার অভিযোগ, “পাম্পহাউসের কাজ না করে মোটা টাকা দিয়ে সাব-মার্সিবল পাম্প বসানোয় জলের সমস্যা রয়েই গিয়েছে পাঁশকুড়ায়।”
কিন্তু পাম্পহাউসের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করা হল না-ই বা কেন?
পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই প্রকল্পের জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে ওই টাকা দিয়ে সাব-মার্সিবল পাম্প বসিয়ে সমস্যার আপাত-সামাধান করা হয়েছে। পুরপ্রধান আব্দুল হাকিম খানের আশ্বাস, “পুরসভায় জলের চাহিদার স্থায়ী সমাধানের জন্য ৪টি ওভারহেড জলাধার ও পাম্পহাউস-সহ নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৩৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে চলতি আর্থিক বছরে। শীঘ্রই ওই কাজ শুরু হবে। এই প্রকল্প রূপায়ণ হলে বাড়ি-বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়া যাবে।” |
|
|
|
|
|