শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশে আজ সকালে বহু অনুগামী, সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে দিলখুশা গেস্ট হাউসে আসেন জগন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস সাংসদ শবনম হরি এবং দুই কংগ্রেস বিধায়ক নানি ও রঙ্গা রাও। জগন আসার খানিক আগে তাঁর আইনজীবী অশোক রেড্ডিকে নিয়ে পৌঁছে যান মামলার অপর অভিযুক্ত বিজয় সাই রেড্ডি। গত দু’দিনও জগনকে প্রায় আট ঘণ্টা জেরা করে সিবিআই। আজ জেরার পরে সন্ধ্যে সওয়া সাতটায় তাঁকে পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়। সিবিআইয়ের বক্তব্য, ভিএএনপিআইসি প্রকল্পে বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনের অসঙ্গতি সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি জগন।
উপনির্বাচনে ভাল ফলের আশা করছিলেন জগন। কিন্তু তার আগেই তাঁকে গ্রেফতার করায় কী হতে পারে, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। জগন-ঘনিষ্ঠ নেতা এম ভি মাইসুরা রেডিডর কথায়, “সরকার চাপ দিয়ে এটা করিয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে হার নিশ্চিত জেনেই কংগ্রেস চক্রান্ত করেছে।” জগনের দলের নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, গ্রেফতার হওয়ার পর এ বার জগনের জনপ্রিয়তা আগের থেকেও বেড়ে যাবে।
জগনের গ্রেফতারি নিয়ে কংগ্রেস নিজেও কিছুটা দ্বিধায়। কংগ্রেসের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারির কথায়, “বিচারাধীন বিষয় সম্পর্কে আমরা কোনও মন্তব্য করতে চাই না।” রাজ্য কংগ্রেসের একটা অংশের আশঙ্কা, জগন হয়তো আমজনতার সহানুভূতি পেয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে আসন্ন উপনির্বাচনে বেশ কয়েকটি আসন বাগিয়ে নিতে পারে তাঁর দল। তাতে কংগ্রেস এখনই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হারালেও বেশ খানিকটা দুর্বল হয়ে পড়বে। আরও একটি আশঙ্কা রয়েছে রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের। এমনিতেই রাজ্যে কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই জগনের প্রতি সহানুভূতিশীল। এঁরা সকলেই রাজশেখর রেড্ডির অনুগামী ছিলেন। জগন শক্তিশালী হয়ে উঠলে বেশ কয়েক জন কংগ্রেস বিধায়কও তাঁর দলে যোগ দিতে পারেন। তেমনটা হলে অন্ধ্রে পরের নির্বাচনে বড় ধাক্কা খেতে পারে কংগ্রেস। প্রসঙ্গত গত লোকসভা নির্বাচনেও কংগ্রেসকে সবচেয়ে বেশি আসন দিয়েছে অন্ধ্র। কংগ্রেসের অন্য একটা অংশ অবশ্য আশাবাদী। তারা মনে করছে, সিবিআই তদন্তের মাধ্যমেই জগনের দুর্নীতি সামনে আসছে। তাতে মানুষের ভুল ভেঙে যাবে। তবে সত্যিই কংগ্রেসের লাভ হল না ক্ষতি, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে ১২ জুনের নির্বাচনে।
রাজশেখর রেড্ডির বিরুদ্ধেও একাধিক বার দুর্নীতি ও আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তাঁর প্রবল জনপ্রিয়তা এবং নানান জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির সামনে যাবতীয় অভিযোগ উড়ে গিয়েছিল। বাবার জনপ্রিয়তাকে হাতিয়ার করেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি জগনের। রাজশেখরের মৃত্যুর পরে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি জানিয়েছিলেন জগন। কংগ্রেস রাজি হয়নি। সেই থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর বিরোধের শুরু। ২০১০-এর নভেম্বরে কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করে নতুন দল তৈরি করেন জগন। তাঁর দলে যোগ দেন কংগ্রেসের ১৬ জন বিধায়ক। কিছু দিন আগে এক টিডিপি নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত সিবিআইকে জগনের হিসেব-বহির্ভূত সম্পত্তি সম্পর্কে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
|
সম্পত্তির গেরোয় |
মার্চ, ২০০৭
রঘুরাম সিমেন্টসকে ৪৮৭ একর জমি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ। জগন্মোহন ওই সংস্থার এক ডিরেক্টর।
জুলাই, ২০১১
জানা গেল তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৩৬৫ কোটি টাকা। কী ভাবে, হাইকোর্ট তদন্তের নির্দেশ দিল সিবিআইকে।
অগস্ট, ২০১১
হায়দরাবাদ, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু কলকাতায় জগন্মোহনের সম্পত্তি ও অফিসে সিবিআই তল্লাশি।
মার্চ, ২০১২
চার্জশিট পেশ। বাবা রাজশেখর রেড্ডি মুখ্যমন্ত্রী থাকা কালে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল বেআইনি সম্পত্তি করার অভিযোগ।
|
কী কী অভিযোগ |
• ফৌজদারি ষড়যন্ত্র (১২০বি) • প্রতারণা (৪২০)
• নথি জাল করা (৪৭৭এ)
• ফৌজদারি চুক্তিভঙ্গ (৪০৯)
• দুর্নীতি (দুর্নীতি দমন আইন ১৩ (১) ডি, ১৩(২)।
|
কংগ্রেস বনাম জগন্মোহন |
নভেম্বর, ২০১০
• সনিয়া, মনমোহন ও কংগ্রেসকে আক্রমণ জগন্মোহনের টিভি চ্যানেলে।
• কংগ্রেস এর সমালোচনা করলেও জগনের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নয়।
• রোসাইয়ার ইস্তফার পরে মুখ্যমন্ত্রী করা হল কিরণ কুমার রেড্ডিকে।
• কংগ্রেস ছাড়লেন জগন্মোহন।
ফেব্রুয়ারি, ২০১১
• ওয়াইএসআর কংগ্রেস নামে আলাদা দল গড়লেন জগন্মোহন।
ডিসেম্বর ২০১১
• অনাস্থা প্রস্তাবে সরকারের বিরুদ্ধে ভোট জগন্মোহনের সমর্থক ১৬ বিধায়ক। |
|