|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা
|
‘আলোহা’ |
কুকুর বলে কি... |
অত্রি মিত্র |
দুপুরে পিচ-গলা সল্টলেকের রাস্তায় জল নেই। মানুষের জন্য তা-ও খুঁজলে কল পাওয়া যেতে পারে। কিংবা রাস্তার ধারের দোকানের সফ্ট ড্রিঙ্কস বা মিনারেল ওয়াটার। কিন্তু ওদের জন্য কিছুই নেই।
অসহ্য গরম থেকে বাঁচতে ওরা যে একটু ছায়া দেখে নিরিবিলিতে শুয়ে ঘুমোবে, তারও উপায় নেই। রাস্তায় গাড়িঘোড়ার আওয়াজ। ছায়া খুঁজতে ফ্ল্যাট বা আবাসনের মধ্যে ঢুকে পড়লে নির্ঘাত জুটবে গেরস্থর তাড়া।
|
|
আগে তা-ও ডাস্টবিন ঘেঁটে একটু-আধটু খাবার ঠিক জুটে যেত। এখন পুরসভার গাড়ি ফি-সকালে বাঁশি বাজিয়ে ময়লা তুলে নিয়ে চলে যায়। খাবারও জোটে না।
সল্টলেকের রাস্তায় সারমেয়কুলের এই দুর্দশার কাহিনি সকলের চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল, এমনটা নয়। চোখে পড়েছিল সত্যেন্দ্রনাথ বসু গবেষণা কেন্দ্রের পদার্থবিদ্যার দুই গবেষকের। তমোঘ্ন দাস আর ঐন্দ্রিলা গঙ্গোপাধ্যায়। জয়নগরের তমোঘ্ন ছোটবেলা থেকেই পশুপ্রেমী। আর বেহালার ঐন্দ্রিলা বোন উপাসনার হাত ধরে পশুকে ভালবাসতে শিখেছেন।
২০০৮-এর শেষের দিকে নিছক শখ থেকেই দু’জনে হয়েছিলেন সারমেয়-বন্ধু। আর এই সম-ভাবনাই ওঁদের এক জায়গায় এনে ফেলেছিল। দু’জনে মিলে ইনস্টিটিউটের আশপাশের কুকুরদের দু’বেলা খাবার দিতেন। দুর্ঘটনা ঘটলে শুশ্রূষা করতেন। প্রয়োজনে নিয়ে যেতেন হাসপাতালেও।
‘দূরছাই’ কুকুরদের সুন্দর জীবন দেওয়ার শখেই অবশ্য ওঁরা আটকে থাকলেন না। ধীরে ধীরে বন্ধু খুঁজে পেলেন। ঐন্দ্রিলার সঙ্গে বোন উপাসনা তো ছিলেনই। তার সঙ্গে জুটে গেলেন রিক্শাচালক অশ্বিনী দাস আর তাঁর ছেলে আদর্শ। এখন পশুপ্রেম রূপ নিয়েছে আন্দোলনের। ওঁদের চার পাশের পৃথিবীটাকে সুন্দর করে তোলার আন্দোলন। যার পোশাকি নাম ‘আলোহা’।
হাওয়াইয়ান শব্দ ‘আলোহা’র অর্থের মধ্যেই রয়েছে ঐন্দ্রিলাদের লড়াইয়ের লক্ষ্য। চলতি কথায় হাওয়াইয়ান ভাষায় আলোহার অর্থ ‘হ্যালো’ বা ‘গুডবাই’। কিন্তু অন্তর্নিহিত অর্থ হল আমাদের চার পাশের পৃথিবীটাকে ভালবাসা, শ্রদ্ধা করা এবং তা অন্যকে শেখানো। সল্টলেকের রাস্তা থেকে শুরু করে সারা রাজ্যে ঠিক এই কাজটাই সফল ভাবে করতে চাইছেন তমোঘ্ন, ঐন্দ্রিলারা।
তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সল্টলেকের আইডি, আইবি, এইচবি, আইসি আর কেবিকেসি ব্লকে চার পাশের পশুপাখিদের জন্য জলের ব্যবস্থা করছেন ‘আলোহা’র কর্মীরা। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ছোট মাটির গামলায় জল রেখে দিচ্ছেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও বলছেন ওই গামলায় জল দিতে। তমোঘ্ন, ঐন্দ্রিলাদের কথায়, “কুকুরদের দেখাশোনা করতে গিয়েই চোখে পড়েছিল বিষয়টা। এই শহরে ওদের জন্য খাবার জল নেই। এখানে নলবনে অনেক পাখি আসে। জলের টানেই। সেই পাখিরাই যখন সল্টলেকের গাছপালায় এসে জড়ো হয় তখন আর জল পায় না। এ সব দেখার পরেই মনে হয়, আগে অন্তত ওদের জলের ব্যবস্থা করতে হবে। তার পরে খাবারের। তার পরে বাকি ভাবনা।”
রিক্শাচালক অশ্বিনী দাসের কথায়, “ওঁরাই প্রথমে বলেছিলেন। কাজটা ভাল লেগে গেল। এখন দু’বেলা কুকুরগুলোকে খেতে দিই। স্নান করিয়ে দিই। তাতে ওরাই শুধু ভাল থাকে না। আশপাশের আমরাও অনেক ভাল থাকি।”
পরিবেশের বাকিরা ভাল থাকলেই যে আমরা ভাল থাকব, সেটা বুঝেছেন অশ্বিনীরা। তাই ওঁরাও এখন জুড়ে গিয়েছেন ‘আলোহা’র সঙ্গে। এখানেই অবশ্য থামতে চায় না ‘আলোহা’। পুরো শহরকে প্রকৃতির ভারসাম্য বোঝানোর গুরুদায়িত্ব নিজেরাই কাঁধে নিয়েছে যে!
|
অলঙ্করণ: দেবাশীষ দেব |
|
|
|
|
|