চেন্নাইতে ফাইনাল খেলতে নামার আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে তাঁর চলতি মরসুমের আইপিএল ব্যাটিংয়ের মতোই ঝোড়ো স্ট্রাইক রেট সমন্বিত সাক্ষাৎকার দিলেন গৌতম গম্ভীর। অফের বলকে অনে খেললেন। সুইচ-হিট মারলেন। একই সঙ্গে গভীর কৃতজ্ঞতা জানালেন কলকাতার মানুষকে। বললেন, ইডেন এখন তাঁর ঘর। কোটলা পরবাস।
প্রশ্ন: ফাইনালে কেকেআর হারুক বা জিতুক। তার অধিনায়ক মেরিট লিস্টে উঠেই গিয়েছেন। এমন একজন মানুষ হিসেবে যে একদা অভিশপ্ত টিমের সংস্কৃতি আর আভ্যন্তরীণ আবহাওয়াই বদলে দিয়েছে।
গম্ভীর: কাউকে না কাউকে বেড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধতেই হতো। বিশেষ করে প্রথম তিন বছরের পর কেকেআর যে দিকে যাচ্ছিল তাতে মোড় না ঘোরালে কোনও কিছুই সম্ভব ছিল না। আমার প্রথম লক্ষ্য ছিল এই থিমটা প্রতিষ্ঠিত করা যে, ব্যক্তির আগে দল। সব সময় দল। কিন্তু সেটা ক্যাপ্টেন তো একা প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। এর জন্য একটা দলগত অঙ্গীকার দরকার যে আমরা সবাই নিজের আগে দলকে রাখব। আমি খুব ভাগ্যবান ড্রেসিংরুমে বসে থাকা কিছু তারকা আমায় এই ভাবনাটা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে। জাক কালিসের কাছে আমার গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। নতুন সংস্কৃতি মানে ড্রেসিংরুমে নতুন পরিবেশ তৈরিও। কালিস একজন লেজেন্ড শুধু এই জন্যই নয় যে ওর প্রচুর রেকর্ড আছে। ও লেজেন্ড ওর মনোভাবের জন্য। সব সময় নিজের আগে দলকে রাখে। যখন যা বলি এক কথায় করে। দলের জন্য ওপেন করতে রাজি। পিছনে যেতে রাজি। নতুন বলে বল করতে রাজি। থার্ড চেঞ্জ আসতে রাজি। টিমের সুপারস্টার যদি এ রকম হয় তখন ক্যাপ্টেনের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়।
প্র: চেন্নাইতে এখন আপনাদের ঘিরে এত উত্তেজনা। অথচ কে মনে রেখেছে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহেই আপনারা ০-২ পিছিয়ে পড়েছিলেন। পুণের ঘোড়া ছুটছিল ২-০। ভেতরে ভেতরে তখন আপনার ঠকঠকানি হচ্ছিল না?
গম্ভীর: মিথ্যে কথা বলব না। একটা বেশ অন্ধকার সময়ের মধ্যে দিয়ে তখন যাচ্ছিলাম। নিজেদের মধ্যে তখন তীব্র সন্দেহ দানা বাঁধছিল, আমরা যথেষ্ট ভাল তো? নিজেকে তখন বোঝাতাম ষোলোটা ম্যাচ খুব লম্বা একটা ইনিংসের মতো। জানতাম একটা মোক্ষম ম্যাচ জিতলে হঠাৎ সব বদলে যাবে। বেঙ্গালুরুতে যখন যাই তখনও জানতাম স্রেফ একটা ম্যাচের অপেক্ষাসব কিছু ঘুরিয়ে দিতে। |
প্র: বেঙ্গালুরুতে আরসিবিকে হারানোটাই তা হলে টার্নিং পয়েন্ট?
গম্ভীর: ওটা একটা। আর একটা মুম্বইতে গিয়ে মুম্বইকে হারাতে পারা। টুর্নামেন্টে আমাদের দুটো টার্নিং পয়েন্ট। ওয়াংখেড়েতে জেতাটাও খুব জরুরি ছিল। ওখানে হেরে গেলে টানা তিনটে ম্যাচ হেরে জেতাম। আর টানা তিন ম্যাচ হেরে গেলে যে কোনও দলেরই ভেতরটা ঘেঁটে যায়। কনফিডেন্স পুরো চলে যায়।
প্র: টেস্ট ক্রিকেটে ক্যাপ্টেন আর কোচের সম্পর্ককে বলা হয় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। আইপিএলে তেমনি আসল সম্পর্কটা হল ক্যাপ্টেন আর ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের। একটু বলবেন শাহরুখ খান আর গৌতম গম্ভীরের সংসার সম্পর্কে?
গম্ভীর: শাহরুখ এত বড় একজন পারফর্মার হওয়াতে সম্পর্কটা বোধহয় সুবিধে পেয়েছে। ক্রিকেটের ব্যাপারটা ও পুরোপুরি আমার ওপর ছেড়ে দিয়েছে। প্রথম দিনই আমায় বলেছিল, গৌতম এটা তোমার টিম। ভাঙলে ভাঙো, গড়লে গড়ো। আমি দেখতেও আসব না। আর যা সিদ্ধান্তই নাও না কেন, আমি কখনও নাকও গলাতে যাব না।
ও কথা রেখেছে। এসআরকে কখনও আমার আর টিমের মধ্যে ঢোকেনি। আমার দিক থেকে বলতে পারি, ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক যদি প্রথম দিনই এসে আপনার ওপর এতটা বিশ্বাস দেখায় তখন সম্পর্কটা সহজ হয়ে যেতে বাধ্য। আমি নানান কাহিনি শুনেছি যে অতীতে ও নাকি মিটিংয়ে থাকত। নানান সাজেশন দিত। আমি খুব ভাগ্যবান আমার আমলে এ সব ঘটেনি। গত দু’বছরে ক্রিকেট নিয়ে ও একটা কথাও বলেনি। ও যা বলেছে ক্রিকেটের বাইরের কথা।
প্র: ওয়াংখেড়েতে যখন আপনার মালিকের সঙ্গে ফাটাফাটি হচ্ছিল তখন তো আপনি কাছেপিঠেই ছিলেন। তারপর তাঁর ওপর পাঁচ বছরের শাস্তিও হল। আপনি প্রতিবাদে মুখ খুললেন না কেন?
গম্ভীর: আমি মুখ খুলতে চাইনি। আপনি জিজ্ঞেস করছেন বলে বলছি, এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি। একেবারেই অবাঞ্ছিত। আমি দেখেছি শাহরুখ মানুষ হিসেবে অত্যন্ত ভদ্র। প্রত্যেককে সম্মান দিয়ে কথা বলে। কী সব ওরা বলল যে ও নাকি মাতাল ছিল। একদম বাজে কথা। ওর মধ্যে প্যাশন খুব বেশি। কিন্তু এ দেশের নামী লোকদের মধ্যে ওর ব্যবহার আর সৌজন্য যে মাত্রার, সেটা আমি খুব কম দেখেছি। নাকি দেখিইনি।
প্র: আপনার টিমে ইতিমধ্যে অনেকে বলতে শুরু করেছে মালিককে ঢুকতে না দিলে পরের বছর ওয়াংখেড়েতে আমরাও খেলতে যাব না। তা হলে কি আইপিএল ম্যাচ বয়কট?
গম্ভীর: এটা নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি। আমার মনে হয় না সে রকম কিছু হবে বলে। ব্যক্তির চেয়ে সব সময় গোষ্ঠী বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। মালিকের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই। কেকেআরের উদ্দেশ্য একটাই থাকে। ক্রিকেট মাঠে যখন নামবে তখন টিম জিতে ফেরার চেষ্টা করবে। অবশ্যই শাহরুখ থাকলে টিম একটা বাড়তি মনোবল পায়। কিন্তু না থাকলে সেটাকেও হ্যান্ডেল করতে হবে। তখনও জিততে হবে। টিমের জন্য। কলকাতার জন্য। অখুশি ড্রেসিংরুমে এলিয়ে থাকা হতাশ কিছু শরীরকে দেখার জন্য মাঠ থেকে ফেরার ইচ্ছে অন্তত আমার থাকে না।
প্র: আপনি দায়িত্বে এসে প্রথমেই কী ঠিক করেছিলেন? যা-যা ভুল আগের জমানায় হয়েছিল সেগুলো করবেন না?
গম্ভীর: একেবারেই না। আগে যে সব জায়গায় ভুল হয়েছিল সে সব এলাকায় আমি ঘেঁষিইনি। আমার কাছে জীবন হল সামনের দিকে মোশনে যাওয়ার। অতীত নিয়ে অনর্থক খোঁড়াখুঁড়ি নয়। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল। টিম যেন একটা নির্দিষ্ট স্টাইলে খেলে। যেখানে মনোজ তিওয়ারির যে দিন লাগবে, সে দিন ও রান করবে ব্যাটে ঠিকমতো লাগাতে না পারা গম্ভীরের জন্য। যে দিন ইউসুফ রান করবে, বলবে মনোজের জন্য খেললাম। বেচারি কয়েকটা ম্যাচে রান না পেয়ে মুষড়ে আছে। আমার কাছে এই হল টিম সংস্কৃতি। |
প্র: শুধু তো প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো সামলানো নয়। আপনাকে কলকাতায় খেলতে হয়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধেও। অথচ ব্যক্তিগত ভাবে শুনেছি আপনাদের ভাল সম্পর্ক। সৌরভের মূল্যায়ন কী ভাবে করবেন?
গম্ভীর: আমি আগেও বলেছি যে সৌরভ এমন একটা টিম তৈরি করেছিল যা যুগান্তকারী। আমি গ্রেট ক্যাপ্টেনের থিওরিতে বিশ্বাস করি না। গ্রেট ক্যাপ্টেন বলে কিছু হয় না। হয় গ্রেট টিম। যারা ক্যাপ্টেনকে বড় করে দেখায়। রেকর্ড অনুযায়ী গ্রেটেস্ট ক্যাপ্টেন তো রিকি পন্টিং। তা হলে ম্যাকগ্রা-ওয়ার্ন রিটায়ার করার পর অস্ট্রেলিয়া নাগাড়ে হারছিল কেন? গ্রেটেস্ট ক্যাপ্টেনের তো জিতিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। আমার বিশ্বাস আঁকড়ে রেখেও বলব, সৌরভ ইন্ডিয়ান টিমের মনোভাবটা বদলে দিয়েছিল। ও একটা বিশ্বাস আনে যে আমরা বিদেশেও যে কোনও মাঠে জিততে পারি। খুঁজে খুঁজে টিমের জন্য প্লেয়ার আনে। যারা পরবর্তীকালে এক-একজন স্টার হয়েছে। হরভজন। যুবরাজ। সহবাগ। আমার তো মনে হয় বাড়িতে বসে টিভিতে সৌরভ যখন ওদের খেলতে দেখে, ওর বুকের ভেতরটা নিশ্চয়ই আনন্দে ভরে যায়।
প্র: পুণে ওয়ারিয়র্স টিমে শোনা যাচ্ছে আইপিএলোত্তর কিছু অশান্তির খবর। কিছু তরুণ ক্রিকেটার নাকি অধিনায়ক সম্পর্কে তাদের অশ্রদ্ধার কথা ফ্র্যাঞ্চাইজিকে জানিয়েছে।
গম্ভীর: আমি অন্য কোনও টিম, কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি এ সব নিয়ে আলোচনায় ঢুকতে চাই না। আমার পুরো মনঃসংযোগ থাকে কেকেআর নিয়ে। শুধু একটা কথা বলতে পারি। সৌরভের কাছে গিয়ে কোনও তরুণ খোলাখুলি কথা বলতে চাইলে ও সাড়া দেবে না বলে আমি বিশ্বাস করি না। আমি অন্তত যখনই কথা বলতে চেয়েছি ওর দরজা খোলা পেয়েছি।
প্র: কলকাতার মানুষের একটা অংশের কাছে আপনি প্রথমে ছিলেন সৎ মায়ের ছেলে। সৌরভের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী। এখন কিন্তু সবাই আপনাকে ভালবাসে। ক্রমেই হয়ে গিয়েছেন মায়ের পেটের ছেলে। সৎ মা ট্যাগ উধাও।
গম্ভীর: ওঁরা যদি সত্যিই এখন আমাকে নিজের ছেলে মনে করেন, খুব সম্মানিত বোধ করব। আমি কলকাতার মানুষের কাছে খুব কৃতজ্ঞ। ওঁরা টানা এত বছর ধরে দলকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। বিনিময়ে টিম ওঁদের কিছুই দিতে পারেনি। তবু ওঁরা দলের সঙ্গ ছাড়েননি। এটাই তো কী দারুণ! আমরা ক্রমাগত নিজেদের টিম মিটিংয়েও আলোচনা করি যে ঢিলে দেওয়ার সামান্যতম অধিকার নেই আমাদের। কলকাতাবাসীর জন্য, ওঁদের ভালবাসার মর্যাদা রাখার জন্য আমাদের জান লড়িয়ে দিতেই হবে।
প্র: মনে হয় না যে ভারতীয় নির্বাচকেরা আপনাকে ধোনির ডেপুটি পদ থেকে হটিয়েছেন তাঁদের লজ্জিত করার জন্য আইপিএলে আপনি যথাসাধ্য করেছেন?
গম্ভীর: (চোখ দপ করে জ্বলে উঠল, পরক্ষণেই শান্ত হয়ে গেল) আমার কাউকে কিছু প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। আমাকে একমাত্র প্রমাণ দিতে হয় কেকেআর ড্রেসিংরুমকে। ওখানে যে ছেলেগুলো বসে আছে তাদের কাছে নিজের দায়ভার দেখাতে হয়। প্রতি বার আমি যখন মাঠে খেলি তখন যে চোদ্দো জন বাইরে বসে আছে তাদের জন্যও খেলি। একটা টিমে এগারো জনই খেলতে পারে। কিন্তু তার বাইরে যারা থাকে তাদের দুঃখ আমি বুঝি। বাদ দেওয়ার পরে এদের প্রত্যেককে দুঃখপ্রকাশ করি। আমার প্রমাণ করার জায়গা এটা। আপনি যাদের নাম তুললেন তাদের কাছে নয়।
প্র: ক্যাপ্টেন এবং এত বড় তারকা হয়েও আপনি সব সময় টিমে কমন ম্যানের কথা বলেন। অনবরত কমন ম্যানের কথা আপনার মনে থাকে কী করে?
গম্ভীর: কারণ আমি নিজেই তো একজন কমন ম্যান। নাগাড়ে যে দুঃখ আর হতাশার মধ্যে দিয়ে গেছি তাতে বুঝি যারা বাইরে বসে আছে তাদের দুঃখ কতখানি। আমি ইন্ডিয়ান টিমে ঢুকেছি এবং বাদ গেছি। আজ হয়তো আমাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কিন্তু একটা সময় গেছে যখন দিল্লির বাড়িতে একটা বন্ধ ঘরের মধ্যে যাবতীয় হতাশা আর ব্যর্থতাকে সঙ্গী করে আমি নিজেই একলা বসে থেকেছি। মনে হতো অন্ধকূপে বসে আছি। যেখানে কোনও আলো নেই, কোনও উদ্ধার নেই। কেউ একটা ফোন করেও জানতে চায়নি তুমি কেমন আছ? কী ভাবে আবার জীবনে ফিরবে? কমন ম্যানের দুঃখ আমি হাড়ে-হাড়ে বুঝি।
প্র: নাইট ম্যানেজমেন্টের কেউ কেউ আপনার প্রেমে এখন এমনই আচ্ছন্ন যে তাঁরা চান খেলা ছাড়ার পরে আপনিই হয়ে যান ক্রিকেট অপারেশন্সের অধিকর্তা!
গম্ভীর: দেখুন আমি বিশ্বাস করি যে দিন আমি কনট্রিবিউট করতে পারব না প্লেয়ার হিসেবে, সে দিন নিজেই বসে যাব। কথার কথা নয়। জেনুইন বসে যাব। বললাম তো আমার একটাই লক্ষ্য। টিম তৈরি করা। যেখানে কোনও বড়-ছোট নেই। যেখানে সবাই দলের পেছনে। একটা জিনিস বুঝতে হবে যে ক্রিকেট টিম চালানো আর ব্যবসায় লগ্নি করা এক জিনিস নয়। আপনি একটা এনএসসি সার্টিফিকেট কিনলে বা এফডি করলে নির্দিষ্ট ইন্টারেস্ট কয়েক বছর পরে পাবেন। স্পোর্টসে এ রকম নির্দিষ্ট রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট নেই। কিন্তু তারই মধ্যে টিমটাকে তৈরি রাখতে হয় যাতে সব রকম পরিস্থিতিতে লড়তে পারে।
প্র: এই আইপিএলে কিছু কিছু প্রবাদপুরুষকে দেখে মনে হয়েছে তাঁরা টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছেন। লোকে তাঁদের দেখে বিদ্রূপ করেছে। না হলে বিষণ্ণ হয়েছে। আজ আপনি আইপিএলে ঝলমল করছেন। কিন্তু আপনারও তো একটা দিন আসতে পারে এ রকম।
গম্ভীর: অবশ্যই আসতে পারে। আগামী বছরই আসতে পারে। ভুল বললাম বোধহয়। তিন মাস পরেই আসতে পারে। আমি একটা কথা আজই ঘোষণা করছি। যে দিন বুঝব কোনও একটা ফর্ম্যাটে পারছি না, বোঝা হয়ে যাচ্ছি, দৌড়ে বেরিয়ে যাব। টিম আমার চেয়ে বড়। আমি পড়ে থেকে কারও করুণার পাত্র হতে চাই না। দলের পথেও কাঁটা হতে চাই না। সত্যিই তো। আজ বল ভাল হিট করছি তার মানে তিন মাস বাদেও করতে পারব তার কোনও গ্যারান্টি নেই।
প্র: বুকে হাত দিয়ে বলুন ৫ মে যখন সৌরভের সঙ্গে টস করতে যাচ্ছিলেন, ভেতরটা ভয়ে দুরদুর করছিল না? মনে হচ্ছিল না আজ হোম নয়, বাইরে বিপুল বিরোধী সমর্থনের মধ্যে খেলতে যাচ্ছি?
গম্ভীর: একটুও না। ক্রিকেট মাঠে নামলে আমার জেতা ছাড়া কিছু মাথায় থাকে না। ৫ মে অন্য দিনের মতোই আমার মনে হচ্ছিল দুটো সমান-সমান মানুষ মধ্যিখানে টস করতে যাচ্ছে!
একই সঙ্গে বলতে চাই কলকাতার ভালবাসার টানে আমি এমন আটকা পড়েছি যে কোটলায় নামলে আমার এখন দুরদুর মনে হয়। মনেই হয় না যে দিল্লি শহরটায় আমি থাকি। আপনি যে ম্যাচের কথা তুললেন তার আগে কলকাতায় হোটেলের রুম সার্ভিসের ছেলেরা খাবার দিতে এসে আমায় বলে গেছে, স্যর চিন্তা করবেন না। আপনার সঙ্গে আছি। আপনি কিনা আমাদের শহরের অধিনায়ক। আমার স্ত্রী এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সিতে হোটেলে আসছিল। সেখানে চালক পরিচয় জানতে পেরে বলেছে, ওনাকে বলে দেবেন প্রচুর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। পুরো শহর ওনার সঙ্গে আছে। এই ভালবাসা আমি দিল্লিতে কখনও দেখিনি। দিল্লির টিমকে ঘিরে এ জিনিস ঘটেও না।
প্র: ফাইনালের আগে কী বলতে চান এই সব সমর্থকদের?
গম্ভীর: প্রথমে বলতে চাই আপনাদের কাছে গভীর কৃতজ্ঞ। বলতে চাই আমাদের জন্য প্লিজ প্রার্থনা করবেন। একটা কথা জানবেন যে স্পোর্টসে কোনও গ্যারান্টি হয় না। তাই অধিনায়ক হয়েও এটা বলতে পারছি না যে জিতবই। আমি এটুকুই বলতে পারি যে আমাদের টিম আপনাদের ভালবাসার মর্যাদা দেওয়ার জন্য প্রাণপণ লড়বে। মনে রাখবেন এটা জাস্ট বলার জন্য বলছি না। ধরে নেবেন এটা আমার শপথ। আমাদের শপথ। |