মাদ্রাসায় উজ্জ্বল উত্তর
বার মাদ্রাসা পরীক্ষায় রাজ্যে যুগ্ম ভাবে সম্ভাব্য প্রথম হয়েছে মালদহের যাত্রাডাঙা কে বি হাই মাদ্রাসার মনিকা বেগম ও সুজাপুর নয় মৌজা সুবানিয়া হাই মাদ্রাসার আহমতুল্লা শেখ। দুজনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৭৩২। মনিকা বেগম বড় হয়ে ইংরেজির শিক্ষিকা হতে চান। আহমতুল্লা হতে চান ডাক্তার। বিজ্ঞান বিভাগের সবকয়টি বিষয়ে লেটার পেলেও সায়েন্স নিয়ে পড়তে চান না মনিকা। তাঁর কথায়, “সায়েন্স আমার ভাল লাগে না। আমি ইংরাজি নিয়ে পড়াশুনা করে আদর্শ শিক্ষিকা হতে চাই। আর বাইরে নয়, যে স্কুল থেকে ভাল ফল করেছি উচ্চ মাধ্যমিকও সেই স্কুল থেকে পড়তে চাই।” এলাকার একটি স্থানীয় কোচিং ইন্সস্টিটিউটের পাশাপাশি ইংরেজির একজন গৃহশিক্ষক ছিল মনিকার। যাত্রাডাঙা কে বি হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আলি রেজা বলেন, “মনিকা আমাদের মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণি থেকেই প্রথম হত। আমাদের স্কুলের মুখ উজ্জল করেছে।” কালিয়াচকের সুজাপুর নয় মৌজা সুভানিয়া হাই মাদ্রাসার আহমতুল্লা শেখের বাবা ফাকরুদ্দিন শেখ মুদি দোকানের মালিক। পাঁচ ভাই ও এক দিদি। ভাইদের মধ্যে সেই বড়। বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায় বলে রেজাল্ট বের হওয়া আগেই আহমতুল্লা আলামিন মিশনে ভর্তি হয়েছে। বাবা ফকরুদ্দিন শেখ বলেন, “ছেলে নিজের চেষ্টা ও স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগিতায় ভাল ফল করেছে।” সুজাপুর নয় মৌজা সুভানিয়া হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আদিল হোসেন বলেন, “আমাদের স্কুলের ছাত্র এর আগেও অনেকবার রাজ্যে প্রথম হয়েছে।” মাদ্রাসা পরীক্ষায় রাজ্যে সম্ভাব্য চতুর্থ চাঁচলের থাহাঘাটি হাই মাদ্রাসার ছাত্র মহম্মদ হেলাল দিনমজুর পরিবারের ছেলে। ওই স্কুলের ছাত্র মহম্মদ সহিদুল্লা রাজ্যে সম্ভাব্য তৃতীয়। তাঁর বাবা মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক। ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাতে দিনরাত টিউশন করেন। সহিদুল্লার প্রাপ্ত নম্বর ৭২২। আর হেলাল পেয়েছে ৭১৯। ৮টি বিষয়েই লেটার নম্বর পেয়েছে দুজনেই।
মনিকা ও আহমতুল্লা। নিজস্ব চিত্র।
চাঁচলের উত্তর আসরাইল গ্রামে হেলালদের বাড়ি বলতে একটাই মাটির ঘর। বাবা-মা সহ দুই ভাইকে গাদাগাদি করে সেই ঘরেই থাকতে হয়। বাবা বানিজউদ্দিন দিনমজুরি করে সংসার চালান। সংসার সামলাতে মাঠে কাজ করতে হয় মা আজমিরা বিবিকেও। সকাল-বিকেল বাবার সঙ্গে মাঠে নিয়মিত কাজ করতে হয় হেলালকেও। তারপর সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছিল তার পড়ার সময়! তবে ওর মেধার কথা অজানা ছিল না শিক্ষকদেরও! তারাও যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন! ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়র হওয়ার ইচ্ছা হেলালের। কী ভাবে দিনমজুর বাবা পড়ার খরচ জোগাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না তার। হেলাল জানান, “এতদিন তো বাড়ি থেকেই স্কুলে যেতাম। এ বার কী হবে জানি না। বাবার পক্ষে তো বাইরে রেখে পড়ার খরচ চালানোর সাধ্য নেই।” সহিদুল্লার বাবা স্থানীয় একটি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক। সামান্য মাইনেয় সংসার চালাতেই হিমশিম অবস্থা। তাই ছেলের পড়াশুনার খরচ জোগাতে টিউশন করেন। নিজে বিজ্ঞান পড়ানোর পাশাপাশি ছেলের জন্য ইংরেজির শিক্ষকও রেখেছিলেন। সহিদুল্লা বলে, “ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার স্বপ্ন দেখি। বাবার যা অবস্থা কী হবে জানি না।”
আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যে পড়াশোনা করেও মাদ্রাসায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে দিনহাটার মুন্সিরহাট সাদেকিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্র শাহি ইমাম হোসেন। তার বাবা দিনহাটার নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালেক খন্দকার সামান্য কিছু জমিজমা চাষ করে কোনও মতে সংসার চালান। ছেলেকে পড়াশোনার জন্য তেমন সুযোগ সুবিধেও দিতে পারেননি। তার মধ্যেও অবশ্য শাহি পড়াশোনায় এতটুকু খামতি রাখেনি। সোমবার হাই মাদ্রাসা পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সেই শাহি সহপাঠীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬২৬ নম্বর পেয়েছে। মুন্সিরহাট সাদেকিয়া হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মোতিয়ার রহমান বলেন, “পঞ্চম শ্রেণি থেকে শাহি আমাদের মাদ্রাসায় পড়ছে। দরিদ্র পরিবারের ছেলে। কষ্ট করে পড়াশোনা করে ও সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে দেখে সত্যিই ভাল লাগছে। তবে প্রশাসন ওর পাশে না দাঁড়ালে ভবিষ্যতে শাহির শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন কতটা সফল হবে তা ভেবে উদ্বেগে আছি।”
মাদ্রাসার দ্বাদশ শ্রেণির ফাজিল পরীক্ষায় এ রাজ্যে সম্ভাব্য প্রথম স্থান পেয়েছে উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার সিরসি আই এম সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র মুজাম্মেল হক। সোমবার স্কুল কর্তৃপক্ষ ফল জানতে পারেন। মুজাম্মেলের বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার বেহাসোহা এলাকায়। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৫৩৯। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন খান জানান, মুজাম্মেলের বাবা আজমল হক পেষায় কৃষিজীবী। মা গৃহবধূ। মুজাম্মেল এদিন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফল প্রকাশের কথা জানতে পেরে চাকুলিয়ায় রওনা দিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.