নিঃসন্তান দম্পতির হাতে শিশুকন্যাকে দিয়ে আটক মহিলা
‘অভাবের তাড়না’য় এক মাত্র সন্তান সাত মাসের শিশুকন্যাকে তুলে দিয়েছিলেন নিঃসন্তান এক পরিবারের হাতে। কৃষ্ণনগরের স্টেশন লাগোয়া কুলি বস্তির বাসিন্দা ওই মহিলা অবশ্য পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতায় সপ্তাহ খানেকের মাথায় নিজের কন্যা স্নেহাকে ফিরে পেয়েছেন নিজের কোলে। পুলিশ অবশ্য ওই মহিলা ও তিনি যাঁর হাতে তাঁর সন্তানকে তুলে দিয়েছিলেন তাঁকে সহ মোট চার জনকে আটক করেছে। নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “অভাবের কারণে ওই মহিলা তাঁর সন্তানকে এক জনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। প্রাথমিক ভাবে আমরা জেনেছি, ওই মহিলা তাঁর সন্তানকে বিক্রি করেননি। তবে তিনি যাঁর হাতে সন্তানকে দিয়েছিলেন তাঁরা স্বেচ্ছায় ওই মহিলাকে দু’হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে। এই দিন ওই মহিলার কাছেই তাঁর সন্তানকে ফিরিয়েও দেওয়া হয়েছে।”
ওই মহিলার বাবা ছিলেন স্টেশনের কুলি। তিনি মারা গিয়েছেন বছর সাতেক আগে। মা বৃদ্ধা। স্বামীর খোঁজ নেই বছরখানেক। সংসার চলে বছর দশেকের ভাইয়ের রোজগারে। রাস্তা থেকে কাগজ কুড়িয়ে তা বিক্রি করে সে দিনে পনেরো টাকার মতো আয় করে। ওই মহিলা নিজে একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন।
নিজস্ব চিত্র।
তিনি বলেন, “আমার মেয়ে খুবই ছোট। মা বাইরে ঘুরে বেড়ায়। ভাই সকাল থেকেই বেরিয়ে যায়। তাই কার কাছে ওকে রেখে কাজ করতে যাব? তাই পরিচারিকার কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম।” পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে, সেই সময়েই ওই মহিলা চেয়েছিলেন তাঁর মেয়েকে অন্য কোনও সদাশয় দম্পতির হাতে তুলে দিতে। সে কথা তিনি তাঁর প্রতিবেশীদের বলেওছিলেন। সেই মতো তাঁর এক পরিচিত মহিলা তাঁকে নিয়ে যায় এক মাংস বিক্রেতার কাছে। সেই মাংস বিক্রেতাই উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার মদনপুরের বাসিন্দা এক নিঃসন্তান ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেই দম্পতি তারপরে গত ১৩ মে কৃষ্ণনগরে এসে ওই মহিলার কাছ থেকে তাঁর সন্তানকে নিয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন যে, শিশুকন্যাটিকে তিনি ও তাঁর স্ত্রী পিতামাতার স্নেহেই পালন করছিলেন। ওই মহিলা স্বেচ্ছায় তাঁদের হাতে ওই শিশুকন্যাকে তুলে দিয়েছেন। ওই মহিলা কোনও টাকা না চাইলেও তাঁরা স্বেচ্ছায় তাঁকে দু’হাজার টাকা দিয়েছেন।
তবে ওই মহিলা এত দুঃস্থ জেনেও প্রশাসন তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি কেন? পুরপ্রধান কংগ্রেসের অসীম সাহা বলেন, “আমার যখনই সুযোগ পেয়েছি, সরকারি ত্রাণ দিয়েছি ওই পরিবারকে। তবে নিয়মিত সাহায্য করতে পারিনি, কারণ সেই সুযোগ আমাদের নেই।” ওই মহিলার ভোটার তালিকায় নাম নেই, নেই রেশন কার্ডও। তাই সরকারি অন্য সুবিধাগুলি থেকেও তিনি ও তাঁর পরিবার বঞ্চিত। কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, “ওই ভদ্রমহিলা আদৌ রেশনকার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন কি? আমরা গোটা বিষয়টাই খতিয়ে দেখছি। যা যা সুযোগ-সুবিধা তাঁর প্রাপ্য, সেগুলো যাতে তিনি পান, তা আমরা দেখব।” স্থানীয় কাউন্সিলর কংগ্রেসের প্রদীপ দত্ত বলেন, “ওই পরিবার সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানতাম না। তবে এ বার থেকে তাঁদের খেয়াল রাখব।”
ওই মহিলা নিরক্ষর। স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে এ দিন পুলিশ ওই মহিলার বাড়িতে যায়। তার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খোঁজ মেলে অন্যদের। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির জেলা চেয়ারম্যান রিনা মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য বক্তব্য, “সন্তানকে বিক্রি তো দূরের কথা, আইনি ব্যবস্থা না করে অন্য কারও কাছে তাকে পালন করার ভার দেওয়া যায় না। ওই মহিলা নিরক্ষর বলেই সম্ভবত তা জানতেন না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.