আইপিএল-এ নতুন বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এ বার বিসিসিআইয়ের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায় মনমোহন সরকার। আইপিএল-এ কালো টাকার লেনদেন হচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখতে তদন্তেও নামছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব দফতর। ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেন সাফ জানিয়ে দিলেন, বিসিসিআইয়ের তদন্তে তাঁদের ভরসা নেই।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, কংগ্রেস সাংসদ রাজীব শুক্ল আইপিএল কমিটির চেয়ারম্যান। কিছু দিন আগেও ভারতীয়
|
ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেন |
ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থার মাথা ছিলেন ইউপিএ-রই শরিক মন্ত্রী শরদ পওয়ার। তবু যে কেন্দ্র কড়া পদক্ষেপের কথা ভাবছে, তার কারণ, বিতর্কে জেরবার আইপিএল গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে তাদের। বিসিসিআইকে আড়াল করা হচ্ছে বলে সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে বিরোধীরা।
এই পরিস্থিতিতে আজ লোকসভায় মুখ খোলেন মাকেন। তিনি পরিষ্কার জানান, সরকারের তৎপরতার পিছনে সুনির্দিষ্ট যুক্তি রয়েছে। প্রথমত, বিসিসিআই জাতীয় ক্রিকেট দল নির্বাচন করে। যে দলের হার-জিতের সঙ্গে দেশের গরিমার প্রশ্ন জড়িত। দ্বিতীয়ত, বিসিসিআই ও তার অধীন ক্রিকেট সংগঠনগুলি বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রায় বিনামূল্যে স্টেডিয়ামের জন্য বিপুল জমি পেয়েছে। তাই সরকারের প্রতি তাদের দায়বদ্ধ থাকা উচিত। সেই সঙ্গে মাকেনের দাবি, বিসিসিআই-কে তথ্যের অধিকার আইনের আওতায়ও থাকতে হবে, যাতে এই ক্রিকেট সংগঠন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য মানুষ চাইলেই পেতে পারে। |
সরকারের এই তৎপরতার যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ, বিজেপি সাংসদ তথা ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ কালই এ নিয়ে অনশনে বসেন। আজ আইপিএল-এ কালো টাকার লেনদেন নিয়ে লোকসভায় ফের সরব হন। তাঁর দাবি, বিসিসিআই ও আইপিএল-এর আয়-ব্যয়ের অডিট হওয়া উচিত। কোথা থেকে অর্থ আসছে আর কোথায় যাচ্ছে, দেশবাসীর তা জানার অধিকার রয়েছে। তাঁর আরও দাবি, বিসিসিআই-কে আর কর ছাড় দেওয়া উচিত নয়। বিসিসিআই-কে সরকার আড়াল করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। আইপিএল কর্তাদের তিনি সোমালিয়ার ডাকাতদের সঙ্গে তুলনা করেন। বলেন, “সোমালিয়ার ওই ডাকাতরা যেমন আইনের ধার ধারে না, আইপিএল-এর কর্তারাও কারও ধার ধারছে না। আইপিএলে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তাতে কর্তাদের কিছু যায়-আসে না। কালো টাকা দেদার আসছে, ম্যাচ ফিক্সিং, স্পট ফিক্সিং হচ্ছে। খেলোয়াড়রা মাদক নিচ্ছে, মহিলাদের শ্লীলতাহানি করছে। আইপিএল কর্তাদের দেখার সময় নেই। তাঁরা এর থেকে সহজেই হাত ধুয়ে ফেলছেন।” |
কিন্তু আজাদের বক্তব্য খারিজ করে মাকেন বলেন, বিসিসিআই-কে আড়াল করতে চায় না কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ক্রীড়ামন্ত্রী জানান, ১৯৯৬-’৯৭ আর্থিক বছর থেকে ২০০৬-’০৭ আর্থিক বছর পর্যন্ত এই ক্রিকেট সংস্থার কর বাবদ বকেয়া ৩৬৫ কোটি টাকা। সেই টাকা আদায়ে সরকার তৎপর। বিসিসিআই-এর থেকে সরকার ইতিমধ্যেই ১১৮ কোটি টাকা কর আদায় করেছে। ২০০৮-’০৯ এর জন্য ২৫১ কোটি টাকা কর দিতে হবে। এর মধ্যে ১৩১ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। বাকি টাকা আদায়ের জন্য ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে। সেই মামলাও পূর্ণ শক্তি দিয়ে লড়ছে সরকার। মাকেন জানান, এর আগে আইপিএল ও বিসিসিআই-কে ফেমা বা বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৯টি নোটিসও পাঠানো হয়েছে।
এর পরেই মাকেন জানান, আইপিএল-এ কালো টাকা লেনদেনের অভিযোগটি খতিয়ে দেখবে সরকার। তাঁর বক্তব্য, এ নিয়ে বিসিসিআই তদন্ত করছে ঠিকই। কিন্তু তাদের তদন্তে ভরসা করছে না সরকার। বরং কেন্দ্র নিরপক্ষে তদন্ত চাইছে। আর সেই কারণে ক্রীড়া মন্ত্রকের সচিব ইতিমধ্যেই রাজস্ব সচিবকে চিঠি লিখে তদন্ত শুরুর জন্য আবেদন জানিয়েছেন। |