সম্পাদকীয় ১...
অনধিকারচর্চা
ংরাজিতে একটি কথা প্রচলিত আছে, নরকের পথ উত্তম অভিপ্রায় দিয়া নির্মিত। সম্প্রতি টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া (‘ট্রাই’) টেলিভিশন চ্যানেলগুলির বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের উপর যে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করিবার মন্ত্রণা দিয়াছে, তাহাতে এমন হিতে বিপরীতের শঙ্কা প্রবল। অনুষ্ঠানের মধ্যে ঘন ঘন বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে দর্শকদের বিরক্তির উদ্রেক হইতে পারে, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু সেই বিরক্তি অপনোদন করিতে গিয়া সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার উপর লাগাম পরানোর উদ্যোগ যুগপৎ অনৈতিক এবং অপরিণামদর্শী। একটি টি ভি চ্যানেল এক ঘন্টায় কত মিনিট বিজ্ঞাপন প্রচার করিতে পারে, পর্দার কতখানি জুড়িয়া বিজ্ঞাপন থাকিবে, কোন ধরনের অনুষ্ঠানের সহিত কত মিনিট অন্তর বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যাইতে পারে, তাহার বিস্তৃত এক বিবরণ ‘ট্রাই’ দিয়াছে। কোন বিচারে ইহা সঙ্গত? সংবাদে কী বলা হইবে, বিনোদন অনুষ্ঠানে কী দেখানো হইবে, সে বিষয়ে, আইনসাপেক্ষে, সিদ্ধান্ত লইবার অধিকার যেমন কেবলমাত্র চ্যানেলগুলিরই রহিয়াছে, তেমনই বিজ্ঞাপন ও অনুষ্ঠানের সময়ের অনুপাত স্থির করিবার এবং বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের সময়সূচি নির্ধারণ করিবার অধিকারও কেবল তাহাদেরই।
কিন্তু ইহা কেবল অধিকারের প্রশ্নও নহে। খোদার উপর খোদকারির এই প্রচেষ্টা অকারণ ক্ষমতাপ্রদর্শনের জন্যও আপত্তিকর। সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত বিষয়বস্তুর উপর কখনও কখনও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন হইতে পারে যেমন, দেশের নিরাপত্তা অথবা শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হইলে। কিন্তু এগুলি ব্যতিক্রম, একটি নির্দেশ জারি করিয়া সকল চ্যানেলের উপর কর্তৃত্ব করিবার সহিত এইরূপ নিয়ন্ত্রণ তুলনীয় নহে। দর্শক, শ্রোতা কিংবা পাঠককে লইয়াই সংবাদমাধ্যমের কারবার। দর্শকের পছন্দ-অপছন্দ বুঝিয়াই বিভিন্ন চ্যানেল বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের বিন্যাসও বদলাইয়া ফেলে। যখন তাহা গ্রহণযোগ্য হয় না, তখন দর্শকসংখ্যা কমিতে থাকে, ফলে বিজ্ঞাপনের সংখ্যাও কমিবার আশঙ্কা উপস্থিত হয়। ফলে বিন্যাস বদলাইতে হয়। গ্রহণ-বর্জনের এই ভারসাম্যের উপরেই সংবাদমাধ্যম চলিতেছে। ‘ট্রাই’ বাহির হইতে নিয়ন্ত্রণ করিয়া পরিস্থিতির উন্নতি করিবে, ইহা ধরিয়া লওয়া বাতুলতা। বরং ট্রাই কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করিতে হয়, তাঁহারা কোন সমীক্ষা, কোন তথ্য-পরিসংখ্যান হইতে জানিয়াছেন যে, সাধারণ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১৫ মিনিট এবং চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে ৩০ মিনিট অন্তর বিজ্ঞাপন প্রদর্শন সম্প্রচারের মান সর্বাধিক উন্নত করিবে? উহা যথাক্রমে ১৩ মিনিট এবং ৪৩ মিনিট নহে কেন? যুক্তিহীন এই সিদ্ধান্তের পরিণাম কী হইবে, তাহাও সম্ভবত ‘ট্রাই’ কর্তারা ভাবিয়া দেখেন নাই। বিজ্ঞাপনের পরিমাণ বাঁধিয়া দেওয়ার ফলে ক্ষতি কাহার হইবে? যেগুলি বৃহৎ বাণিজ্যিক সংস্থার চ্যানেল, প্রচুর পুঁজি ও প্রতিপত্তির কারণে সেগুলির বিজ্ঞাপনের সংখ্যা কমিলেও তাহারা বিজ্ঞাপনের মূল্য বাড়াইয়া ক্ষতি এড়াইতে পারিবে। কিন্তু ছোট, স্বতন্ত্র সংস্থাগুলি তাহা পারিবে না, তাহাদের ক্ষতির পরিমাণ বাড়িবে, অনেক সংস্থা বন্ধ হইতে বাধ্য। অর্থাৎ এই নির্দেশ যাইবে বৃহৎ সংবাদসংস্থার পক্ষে। সংবাদমাধ্যমের সংখ্যার বহুত্ব এবং বক্তব্যের বৈচিত্র নষ্ট হইবে। বাণিজ্যিক ঘাটতি পরিণত হইবে গণতন্ত্রের ঘাটতিতে। অপরিণামদর্শিতা এমনই বিষময় ফল প্রদান করে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.