সম্পাদকীয় ২...
নিষেধরাজ
কার্টুন বিতর্কের পর সংসদে এ বার শালীনতা বিতর্ক। এন সি ই আর টি-র পাঠ্যপুস্তকে নেহরু ও অম্বেডকরের ছয় দশকের পুরানো একটি ব্যঙ্গচিত্রের মুদ্রণ লইয়া সহসা সুপ্তোত্থিত সাংসদরা ‘দলিত আইকন’-এর মর্যাদা রক্ষায় এমনই খড়্গহস্ত হন যে, অনুতপ্ত মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সমস্ত সরকারি পাঠ্যবই হইতে যাবতীয় ব্যঙ্গচিত্রই নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত লন। সম্ভবত সরকারকে চাপ দিয়া নতজানু করার এই সাফল্যে আহ্লাদিত ও উৎসাহিত হইয়াই সরকারের শরিক ও বিরোধী দলের সাংসদরা সহসা গণমাধ্যমে ‘অশালীন বিজ্ঞাপন’ প্রচারের বিরুদ্ধে সমবেত প্রতিবাদে মুখর হইয়াছেন। মহিলাদের প্রতি অসম্মানজনক বিজ্ঞাপনের প্রচার অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তেও সরকারকে বাধ্য করেন। ইউপিএ-২ সরকার যে দুর্বল ও দ্বিধাগ্রস্ত, চাপের কাছে নতিস্বীকারে সতত উৎসুক, নিয়ত তাহা প্রমাণিত হইতেছে।
বিজ্ঞাপনে নারীশরীরকে যে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হইয়া থাকে, সে বিষয়ে কোনও সংশয় নাই। তাহা কাহারও বিচারে অশালীন ও আপত্তিকর হইতেই পারে। বিজ্ঞাপন নির্মাতা ও প্রদর্শক সংস্থা কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করিয়া থাকেন, তাহাও অস্বাভাবিক নহে। এই বিষয়ে সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে বিবিধ মত এবং বিশ্বাসের পারস্পরিক লেনদেন চলিতে পারে, বিতর্কও হয়তো জরুরি। কিন্তু সেন্সরশিপ বা নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়া ইহা বন্ধ করিয়া দেওয়া নীতি বা পদ্ধতি কোনও বিচারেই ঠিক নয়। কথায়-কথায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপন্থী। আজ পাঠ্যপুস্তক হইতে ব্যঙ্গচিত্র নিষিদ্ধ করিয়া দেওয়া হইল, আগামী কাল টেলিভিশন হইতে নারীশরীর প্রদর্শনকারী বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করিয়া দেওয়া হইল, পরশু অন্য কিছু নিষিদ্ধ করার দাবি উঠিবে। ভারতীয় গণতন্ত্র কি ক্রমশ নিষেধ-রাজ হইয়া উঠিতেছে?
সরকারি স্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়া কোনও অনভিপ্রেত বিষয়কে গণ-আলোচনা ও বিতর্কের মঞ্চ হইতে নির্বাসিত করার অর্থ হইল রুচি, চিন্তা, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি স্বৈরতন্ত্রী প্রবণতাকে উৎসাহিত করা। বিরোধী দলের সাংসদরাও যখন এই সব প্রশ্নে সরকারি অনুজ্ঞার মুখাপেক্ষী হইয়া পড়েন, তখন বুঝিতে হয়, তাঁহারাও আলোচনা, বিতর্ক, একাধিক মতের প্রতিদ্বন্দ্বিতার গণতান্ত্রিক পথটি সুকৌশলে এড়াইয়া যাইতেছেন। তাহা কি এই জন্য যে, ভবিষ্যতে তাঁহারা যদি ক্ষমতাসীন হন, তখনও সরকারি নির্দেশ বলেই বিভিন্ন বিষয় নিষিদ্ধ করিবেন? গ্রহণ-বর্জনের স্বাধীনতা থাকিলে জনরুচিই কিন্তু কালক্রমে যাহা অশালীন বা কুরুচিপূর্ণ, তাহাকে খারিজ করিয়া দেয়। অম্বেডকরের ব্যঙ্গচিত্র হউক কিংবা টেলিভিশনে নারীশরীরের বিজ্ঞাপনী বিপণন, পাঠক-দর্শকদের গণতান্ত্রিক অধিকার আছে সেগুলি দেখিবার, তাহা লইয়া আলোচনা ও তর্ক করিবার এবং অপছন্দ হইলে সেগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিবার। জনসাধারণের তরফে এগুলি লইয়া আপত্তি না উঠিলে কেবল দলীয় সাংসদদের রক্ষণশীল নৈতিক জ্যাঠামশায়গিরির কাছে সরকারের নত হওয়া ঠিক নয়। বরং এই সব প্রশ্নে আরও ধৈর্য, সংযম, সহিষ্ণুতা ও নমনীয়তা অবলম্বন করা দরকার। গণতন্ত্র এমন একটি ব্যবস্থা, যাহা উত্তরোত্তর খোলামেলা, উদার ও বহুমুখী হইতে থাকে। ইহাকে একমুখী বা একমাত্রিক করিয়া তোলার, সংকীর্ণ, অপরিসর ও শ্বাসরোধকর একটি বন্দোবস্তে পরিণত করার জন্য এক শ্রেণির রাজনীতিক সর্বদাই সচেষ্ট থাকেন। তাঁহাদের নিষেধ-রাজের বজ্রআঁটুনি হইতে গণতন্ত্রকে রক্ষা করা দরকার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.