সম্পাদকীয় ১...
সুপবন
শ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে এক সুপবন বহিতেছে। গতি এখনও মৃদুমন্দ। কিন্তু অনুকূল পরিবেশের দাক্ষিণ্য পাইলে এক দিন তাহা বৃহৎ সামাজিক আন্দোলনের ঝঞ্ঝাবাত্যা আনিতে পারে। গ্রামবাংলার প্রত্যম্ত অঞ্চলে একের-পর-এক স্কুল-পড়ুয়া বালিকা বাবা-মা, অভিভাবক, পরিবার ও সমাজের চাপ উপেক্ষা করিয়া বাল্যবিবাহের অভিশাপ হইতে নিজেদের মুক্ত করিতেছে। অকুতোভয়ে তাহারা জানাইতেছেতাহারা পড়াশোনা করিতে চায়, এখনই বিবাহ করিতে চায় না। সমাজের মুখের উপর এই দুঃসাহস কেবল হিন্দু সমাজেই নয়, এমনকী অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর মুসলিম সমাজের মেয়েদের মধ্যেও দেখা যাইতেছে। দারিদ্রের বাধ্যতা, পরিবারের বাধা, সমাজের রক্তচক্ষু অগ্রাহ্য করিয়া এমনকী বিবাহ-বাসর হইতেও এই সাহসী কন্যারা উঠিয়া আসিতেছে, পড়াশোনা শিখিবার অদম্য আগ্রহে।
না, ইহার পিছনে কোনও সমাজ-সংস্কার আন্দোলন নাই, কোনও এনজিও-র প্ররোচনা বা প্রেরণাও নাই। আছে ওই কিশোরীদের তরফে স্বাবলম্বী হওয়ার দুর্মর তাগিদ, পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে বিকশিত হওয়ার দাবি। এ ব্যাপারে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ-প্রশাসন যে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করিতেছে, তাহা প্রশংসনীয়। বিদ্রোহী কন্যারা হয় নিজেরাই পুলিশকে নিজেদের বয়ঃপ্রাপ্তির পূর্বে বিবাহবাসরে বসিবার বাধ্যতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রেরণ করিয়া প্রতিকার চাহিতেছে, নতুবা অন্য কোনও শুভাকাঙ্ক্ষী মারফত থানায় পুলিশের কাছে ওই বেআইনি বাল্যবিবাহের খবর পৌঁছাইতেছে। পুলিশ কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনও গড়িমসি করিতেছে না। বরং পত্রপাঠ অকুস্থলে পৌঁছাইয়া বিবাহ ভণ্ডুল করিয়া দিতেছে। এ জন্য প্রায়শ পুলিশকে প্রতিবেশীদের রোষের সম্মুখীন হইতে হইতেছে। এমনকী কয়েকটি ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশ কনস্টেবলদের উত্তম-মধ্যম প্রহারও করিয়াছে। তথাপি পুলিশ আপন সামাজিক দায় এড়াইবার চেষ্টা করে নাই। পুলিশ প্রশাসনের এই সদর্থক ভূমিকা স্বভাবতই বিদ্রোহিনীদেরও উৎসাহিত করিতেছে। প্রতিবিধানের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হওয়াতেই ‘যাহাদের বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না’, সেই গ্রামীণ বঙ্গললনারাও আজ নিজেদের ভাগ্য নিজেদের হাতে তুলিয়া লইতেছে।
চারিপাশের সার্বিক নেতির মধ্যে এই একটি বর্ধমান প্রবণতা বাস্তবিকই পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে শ্লাঘনীয়। লক্ষণীয়, এই প্রবণতার মধ্যে রাজনীতি, বিশেষত রাজ্যের সংকীর্ণ ও যুযুধান দলীয় রাজনীতির কোনও পূতিগন্ধ লাগিয়া নাই। তাহা সৌভাগ্যজনক। কারণ সেই গন্ধ থাকিলে গোটা বিষয়টি রাজনীতির রঙ পাইয়া যাইত। লেখাপড়া শিখিয়া উন্নত মানুষ হওয়ার পরিবর্তে অপরিণত দেহে-মনে স্বামীর যৌন উৎপীড়ন ও অপুষ্ট শরীরে সন্তানধারণের গ্লানি লইয়া যাহাদের পূর্বনারীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী কাটাইয়া দিতে বাধ্য হইয়াছে, তাহারা আজ নিজেরাই সজাগ ও সচেতন হইয়া পাত্রস্থ হওয়ার প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করিতেছে, ইহা কম কথা নয়। রামমোহন-বিদ্যাসাগররা বহু চেষ্টায় সে দিন যাহা পারেন নাই, বঙ্গ-বালিকারা নিজেরাই আজ বাল্যবিবাহের সেই অভিশাপ হইতে মুক্ত হইয়া স্ত্রীশিক্ষায় শামিল হইতে আগ্রহী। ওই প্রাতঃস্মরণীয় মনীষীদের সাধনার অন্তঃসলিলা ভূমিকা নিশ্চয়ই থাকিয়াছে। দারিদ্র বা অন্য সামাজিক চাপে মুহ্যমান বাবা-মা, অভিভাবকরাও ক্রমশ বাল্যবিবাহে কন্যাসন্তানদের বলি দিবার ভ্রান্তি উপলব্ধি করিতেছেন। তাঁহাদের অনুতাপদগ্ধ হৃদয় এবং আত্মধিক্কারই বলিয়া দিতেছে, অন্তত ঊনবিংশ শতাব্দীর সেই ভিক্টোরীয় নৈতিকতা দিয়া তাঁহারা কন্যাসন্তানদের প্রতি বৈষম্যকে যুক্তিসিদ্ধ করিতে সচেষ্ট নন। সুপবন ছাড়া ইহাকে আর কী-ই বলা চলে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.