পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
‘মুনাফা’ থাকলেই সরকার থাকবে না জমি অধিগ্রহণে
মি অধিগ্রহণ বিলকে আরও কঠোর করার পরামর্শ দিল সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির পরামর্শ, বেসরকারি শিল্প হোক বা সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে পরিকাঠামো প্রকল্প ‘মুনাফা’ করার উদ্দেশ্য থাকলেই জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকা থাকবে না সরকারের। সেই সঙ্গে কমিটির স্পষ্ট মত, বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা, পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প, খনি, জাতীয় সড়ক ইত্যাদি ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের জন্য পৃথক আইন রাখলে চলবে না। সব ধরনের জমি অধিগ্রহণকেই এক আইনের আওতায় আনতে হবে।
শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ইউপিএ সরকারের জমানাতেই শতাব্দী প্রাচীন আইনের সংশোধন চেয়ে একটি বিল সংসদে আনা হয়েছিল। সেই বিলটি খারিজ করে দিয়ে ‘জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন এবং পুনর্স্থাপন’ বিল নামে নতুন একটি বিল সংসদের গত বাদল অধিবেশনে পেশ করেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। কৃষকের স্বার্থ বজায় রাখতে ওই বিলকে যথাসম্ভব কঠোর করা হয়েছে বলে তখন মন্তব্য করেছিলেন জয়রাম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তাতে সন্তুষ্ট নয়।
সূত্রের খবর, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আগামিকাল তাদের রিপোর্ট সংসদে পেশ করতে পারে। ওই রিপোর্টে বলা হচ্ছে, বেসরকারি শিল্প স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকেই জমি নিতে হবে। উপরন্তু গ্রামীণ এলাকায় একশো একরের বেশি এবং শহর এলাকায় ৫০ একরের বেশি জমি নিলে পুনর্বাসন নীতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট শিল্প সংস্থাকে। প্রসঙ্গত, রাজ্যের জন্য যে জমি নীতি নির্ধারণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাতে এই ধরনের শর্তের কথা বলা নেই।
পাশাপাশি, কোনও শিল্প সংস্থা যাতে খুশি মতো বিপুল পরিমাণ জমি কিনতে না পারে সেই ব্যবস্থাও বিলে রাখার পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। সূত্রের বক্তব্য, কোনও এলাকায় একটি শিল্প সংস্থা সর্বোচ্চ কতটা জমি কিনতে পারবে তা নিধার্রণ করে দেওয়ার অধিকার রাজ্য সরকারের হাতে রাখার কথা বলা হচ্ছে কমিটির রিপোর্টে।
ওই সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা, জাতীয় সড়ক, পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদির জন্য জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে পৃথক আইন থাকায় এই ধরনের ১৬টি ক্ষেত্রকে বর্তমান জমি অধিগ্রহণ বিলের আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু কমিটির সদস্যের মতে ৯৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ এই সব প্রকল্পের জন্য করা হয়। ফলে বিলের আওতায় এই ক্ষেত্রগুলি না থাকলে নতুন আইনের কোনও অর্থই থাকে না। তাই সব ধরনের জমি অধিগ্রহণকে বর্তমান বিলের আওতায় রাখতে হবে।
এই সব কড়া শর্ত মেনে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ আদৌ সম্ভব কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক সদস্য আজ বলেন, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালে সিঙ্গুর-কাণ্ড থেকে। তার পর প্রস্তাবিত আইন কঠোর থেকে কঠোরতর করতে গিয়ে ছ’বছর অতিবাহিত। ইতিমধ্যে রাজ্যে রাজ্যে বেসরকারি শিল্প স্থাপন কার্যত থমকে গিয়েছে। এর পরেও বিলটি কবে পাশ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেন না, এই বিল নিয়ে সরকারের মধ্যেও অসন্তোষ কম নেই। তার ওপর কমিটির সুপারিশ মানতে হলে দেশে আর শিল্প হবে না।
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ারের বক্তব্য, এই বিল পাশ হলে দেশে বেসরকারি শিল্পের জন্য জমি পাওয়ার পথ আরও কঠিন পড়বে। এবং তা আখেরে শিল্পের বাতাবরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সংসদীয় এই স্থায়ী কমিটিতে তৃণমূলের দুই সাংসদ রয়েছেন। তাঁরা হলেন রাজ্যসভার সাংসদ দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও লোকসভার সাংসদ রত্না দে নাগ। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, বর্তমান বিলটির সংসদে পেশ করা আগে জয়রাম কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তার পর দেবব্রতবাবুর বাড়ি গিয়েও বৈঠক করেন তিনি। কিন্তু তার পরেও বিলটি নিয়ে তৃণমূলের কিছু আপত্তি ও বক্তব্য রয়েছে।
তার মধ্যে অন্যতম হল, বিলে ‘এক্সিট পলিসি’কে আরও সুনির্দিষ্ট করতে হবে। বর্তমান বিলে বলা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণের পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু না হলে জমি মূল মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু তৃণমূলের বক্তব্য, জমি ফেরত দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে স্পষ্টতা নেই। পাশাপাশি, যে কারণ দেখিয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সেটি ছাড়া অন্য কোনও কারণে তা ব্যবহার করা যাবে না বলেও দাবি জানিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে অধিগ্রহণের আগেই জমির মালিককে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিতে হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.