আটকাবে সংবিধানে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
সরাসরি মুসলিম সংরক্ষণ চেয়ে বার্তা দিল তৃণমূল
র কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে রাজ্যে সরাসরি মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের দাবি তুলল তৃণমূল।
দলের সংখ্যালঘু নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুলতান আহমেদ শনিবার সংখ্যালঘুদের এক অনুষ্ঠানে যে দাবি তুলেছেন, তার মোদ্দা কথা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ‘মোড়কে’ নয়, সরাসরি ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিম সংরক্ষণ চালু করতে হবে রাজ্যে। সরকারি চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে ওই সংরক্ষণের দাবি তুলে সুলতান বলেন, ২০১১-র জনগণনার নিরিখে রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ২৬ শতাংশ। তাই সংরক্ষণ হতে হবে কমপক্ষে ১৮ শতাংশ (পশ্চিমবঙ্গে অতি অনগ্রসর ও অনগ্রসর শ্রেণি মিলিয়ে ১৭% সংরক্ষণের মধ্যে এখন ১০% মুসলিমদের জন্য বরাদ্দ)।
সুলতানের সঙ্গে এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক বার আলোচনা হয়েছে বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। কিন্তু সুলতান যে দাবি তুলেছেন, তা সংবিধানসম্মত নয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা সংবিধান-বিশেষজ্ঞ সলমন খুরশিদ যেমন বলেছেন, “সামাজিক এবং শিক্ষাগত অনগ্রসরতার নিরিখেই শুধু সংরক্ষণ সম্ভব। ধর্মের ভিত্তিতে নয়। দেশের সংবিধান তার অনুমতি দেয় না।” রাজ্য প্রশাসনের একাংশেরও বক্তব্য, সংবিধান অনুমোদন করে না বলেই পশ্চিমবঙ্গে এমন কিছু করা সম্ভব নয়।
তা হলে সুলতান কেন এই প্রসঙ্গ তুললেন?
তৃণমূল সূত্রের খবর, সুলতান নিজেও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। কিন্তু আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের কথা ভেবেই তিনি ওই দাবি তুলেছেন। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “রাজ্য সরকার যদি ওই সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে যে কেউ তার বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারেন। আদালত যে রায় দেবে, সরকার তা মানতে বাধ্য। কিন্তু আদালতের রায় বিরুদ্ধে গেলেও সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে বার্তা যথাস্থানে পৌঁছে যাবে।” উদাহরণ হিসেবে সিঙ্গুর আইনের প্রসঙ্গ তুলে তাঁর দাবি, “বিষয়টি আদালতে ঝুলে রয়েছে। কিন্তু মানুষ বুঝতে পারছেন যে, অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরানোর ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা কতটা।” তাঁর বক্তব্য, “আদালতের উপর তো কারও হাত নেই। ফলে সেই রায়ের জন্য অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।”
কিছু দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য জুড়ে মসজিদের ইমামদের মাসিক ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তার কিছু দিন পর আবার ঘোষণা করেছেন মসজিদে যাঁরা ‘আজান’ দেন, তাঁদের জন্য মাসোহারা। এ দিন সুলতান তার চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন।
এ দিন মৌলালি যুবকেন্দ্রে ‘সারা বাংলা সংখ্যালঘু কাউন্সিলে’র শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় পর্যটন প্রতিমন্ত্রী সুলতান জানিয়েছেন, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্নাটকে মুসলিম-সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এ রাজ্যের ক্ষেত্রেও সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সংখ্যালঘু কাউন্সিলের সদস্যদের উদ্দেশে সুলতান বলেন, “মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণ নিয়ে রাজ্য পর্যায়ে সম্মেলন করুন। সেই সম্মেলনে কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরলের প্রতিনিধিদের আনার ব্যবস্থা করুন। আপনাদের জানতে হবে, কী ভাবে তাঁরা নিজেদের রাজ্যে সরাসরি মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।”
রাজ্য প্রশাসনের একাংশ অবশ্য জানিয়েছে, কেরল এবং কর্নাটকের মতো রাজ্যে স্বাধীনতার আগে থেকেই এই ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ স্বীকৃত নয়। অন্ধ্রপ্রদেশে ওই ব্যবস্থা চালু করতে গিয়ে রাজ্য সরকারকে মামলার মুখে পড়তে হয়েছে।
সুলতানের ওই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, “সুলতান সাহেব কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী। এই কথা মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলছেন না কেন? তাঁরা সংসদে সরাসরি মুসলিম-সংরক্ষণের কথা বলুন। বামফ্রন্ট ওবিসি-র মধ্যে মুসলিমদের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ দিয়েছিল। তখন ওঁরা বলেছিলেন, ওটা ২০ শতাংশ হওয়া উচিত। ক্ষমতায় এলে তাঁরা সেটা করবেন। এখন তাঁরা সেই প্রতিশ্রুতি রাখুন।” সেলিমের মতে, সংরক্ষণ নিয়ে ধর্মের নামে ভাগাভাগি নয়, বরং পিছিয়ে-পড়া মানুষদের উন্নয়নকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সিপিএমের নেতার দাবি, কেরল-কর্নাটক ছাড়া অন্যত্র যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে, তার সবটাই করতে হয়েছে মুসলিমদের ‘ওবিসি’-র আওতায় এনে। বিগত বাম সরকারও একই ভাবে সংরক্ষণ করেছিল।
লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক গিয়েছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের দিকে। পঞ্চায়েত ভোটেও সেই ‘ধারা’ বজায় রাখতে চান মমতা। সুলতানের কথায়, “এ রাজ্যে ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট সরকার মুসলিমদের জন্য কিছু করেনি। তাই মুসলিমরা তাদের প্রত্যাখ্যান করল। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস মুসলিমদের জন্য সাড়ে চার শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলে প্রত্যাখ্যাত হল। তাই মুসলিমদের জন্য শুধু ঘোষণা নয়, কাজ করতে হবে।”
‘কাজ করা’র ব্যাপারে সুলতানের ‘বার্তা’ স্পষ্ট। সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মুসলিমদের ‘সার্বিক উন্নয়নে’ আগ্রহী। তাই ভাবনাচিন্তা করে রাজ্যের মুসলিমদের উন্নয়নের জন্য তথ্যভিত্তিক প্রস্তাব দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী সেগুলি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন। নাম না-করলেও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নেতা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে ‘কাটক্ষ’ করেছেন সুলতান। তাঁর বক্তব্য, অনেক মুসলিম প্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নিজেদের জন্য কোনও না কোনও সুবিধা পেতে দরবার করছেন। মন্ত্রীর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীকে মুসলিমদের সার্বিক উন্নয়নের প্রস্তাব দেওয়া হোক। মুসলিমদের জন্য আবাসন তৈরির জন্য তিনি জায়গা খুঁজছেন। মুসলিমদের নানা সমস্যা সমাধানেরও চেষ্টা করছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.