কাজের এক্তিয়ার নিয়ে রাজ্যের দুই শীর্ষ বনকর্তার তিক্ততা ফের গড়াল আদালতে।
এ বার প্রধান মুখ্য বনপাল (সাধারণ) অতনু রাহা একা নন, রাজ্যের মুখ্য সচিব সমর ঘোষ এবং বন দফতরের সচিব সুবেশ দাসের বিরুদ্ধেও ‘আদালত অবমাননা’র অভিযোগ এনেছেন ‘হেড অফ ফরেস্ট’ মির্জা আসগর সুলতান। হাইকোর্টের নির্দেশে পুনর্বহালের পরেও সরকার তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতা ‘খর্ব’ করাতেই এই অবমাননা হয়েছে বলে সুলতান মনে করছেন। শুক্রবার, হাইকোর্টে বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি প্রতাপ ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। আগামী ৮ জুন মুখ্যসচিব, বন-সচিব এবং অতনুবাবুকে হলফনামা দিয়ে তাঁদের বক্তব্য জানাতে হবে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নির্দেশে তৎকালীন ‘হেড অফ ফরেস্ট’ অতনু রাহাকে সরিয়ে রাজ্য সরকার এম এ সুলতানকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে। কিন্তু বন দফতরের শীর্ষপদের দায়িত্ব নিয়েই রাজ্য জুড়ে করাত-কল বন্ধ করার ফরমান জারি করে বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের ‘কোপে’ পড়েন সুলতান। সেই সময়ে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগার অভিযোগে এম এ সুলতানকে ‘শো-কজের’ নোটিসও ধরানো হয়। পরের দিনই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ‘কমপালসারি ওয়েটিং’-এ থাকা অতনুবাবুকে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে আর ‘হেড অফ ফরেস্ট’ হিসাবে নয়। এম এ সুলতানের ক্ষমতা ঈষৎ ছেঁটে প্রধান মুখ্য বনপালের দায়িত্ব ভাগ করে, অর্থ সংক্রান্ত বিষয় ও প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হয় অতনুবাবুকে। সামগ্রিক ভাবে বন দফতরের নজরদারির দায়িত্ব বর্তায় সুলতানের উপরে।
সুলতান এখন ‘আদালত অবমাননা’র অভিযোগ তুললেও তাঁর ক্ষোভের কারণ ভিন্ন বলে বন দফতর সূত্রে খবর। গত বুধবার বন দফতরের বিভিন্ন ডিভিশনের ১০৬ জন রেঞ্জ ও বিট অফিসারের ‘নিয়মমাফিক’ বদলির নির্দেশ জারি করেছিলেন প্রধান মুখ্য বনপাল (সাধারণ) অতনু রাহা। তা জানতে পেরে সে দিনই ওই নির্দেশ ‘খারিজ’ করে দেন অন্য প্রধান মুখ্য বনপাল (হেড অফ ফরেস্ট) মির্জা আসগর সুলতান। কিন্তু বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন সচিব সুবেশ দাসকে ডেকে অতনুবাবুর জারি করা নির্দেশই বহাল রাখতে বলেন। এর পরেই আদালতের দ্বারস্থ হন সুলতান।
রাজ্য বন দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, তিনটি প্রধান মুখ্য বনপালের পদ আসীন এক জনকেই ‘হেড অফ ফরেস্ট’ করা হয়। অন্য দুই মুখ্য বনপাল তাঁর সমমর্যাদার হলেও কাগজে-কলমে তিনিই শীর্ষকর্তা। বাম জমানায় ওই পদে অতনুবাবু বহাল হওয়ার পরেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সুলতান। সরকার পরিবর্তনের পরে গত বছর ১৭ জুন হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন তিনি। অতনুবাবুও সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা মামলা করেন। সেই মামলা এখনও চলছে।
দফতরের দুই শীর্ষ কর্তার মধ্যে বেড়ে চলা বিবাদ প্রসঙ্গে শনিবার বনমন্ত্রী বলেন, “দুই শীর্ষকর্তার কাজের এক্তিয়ার তো আগেই নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে রাগ দেখিয়ে মামলা করার কী আছে, আর মুখ্যসচিব কিংবা বিভাগীয় সচিবের উপরেই বা কীসের ক্ষোভ, তাও বুঝতে পারছি না।” অতনুবাবুর বিরুদ্ধে সুলতানের ক্ষোভের কারণ কার্যত পরিষ্কার। কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ কীসের, তা নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। কথা বলত চাননি মুখ্যসচিব সমর ঘোষ, বন-সচিব সুবেশ দাস বা অতনু রাহাও। ১৫ জুন ওই মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। |