চারটি চিকিৎসার কোনও সুযোগই দেয়নি। বাকি চারটিকে তড়িঘড়ি বেলগাছিয়া পশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।
কেনার এক মাসের মধ্যে পরপর আটটি ল্যাব্রাডর শাবকের মৃত্যু হয়েছে রেল পুলিশের হেফাজতে। তাই নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত।
প্রাথমিক ভাবে মৃত্যুর কারণ হিসেবে গোলকৃমির প্রকোপ ও ভাইরাল জ্বরের (ফিভার) কথা রেল পুলিশ জানালেও তাতে সন্তুষ্ট নয় রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর। এ নিয়ে একটি কমিটি তৈরির পাশাপাশি আরও বিশদে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে রেল পুলিশের এডিজি অমরকান্তি সরকারকে। রেল পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কী ভাবে কুকুরছানাগুলিকে রাখা হয়েছিল, চিকিৎসা ও পরিচর্যার হাল কেমন ছিল, কারও কর্তব্যে গাফিলতি ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |
কুকুরছানাগুলিকে রাখা হয়েছিল দমদম রোডে শিয়ালদহ রেল পুলিশের সদর দফতরে। সেখানকার একটি কোয়ার্টারকে ‘কেনেল’ (কুকুরের বাসা) হিসেবে ব্যবহার করা হলেও সুস্থ ভাবে কুকুরছানা বড় করার যথাযথ পরিকাঠামো ছিল না বলে জানতে পেরেছেন স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা। ব্যারাকপুরের পুলিশ ট্রেনিং কলেজের পশুচিকিৎসক প্রভাত সামন্ত বলেন, “শিশু অবস্থায় কুকুরের ভাইরাল জ্বর ও নানা ধরনের কৃমি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সংক্রমণ ঠেকাতে তাই প্রতিটি ছানাকে পৃথক ঘরে রাখা উচিত। কিন্তু দমদম রোডের একটা ছোট ঘরে আটটি বাচ্চাকে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছিল।’’ একাধিক পশুচিকিৎসক জানিয়েছেন, কুকুরছানাকে কখনওই ভিজে মেঝেতে রাখা উচিত নয়। তাতে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। ল্যাব্রাডরের মতো কুকুরকে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের মধ্যে রাখা উচিত। রেল পুলিশের ‘কেনেলে’ সেই পরিবেশ ছিল কি না, তদন্ত করে দেখছেন এডিজি।
ডগ স্কোয়াডকে শক্তিশালী করতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আটটি ল্যাব্রাডর ছানা কিনেছিল রেল পুলিশ। কথা ছিল হাওড়া, শিয়ালদহ, শিলিগুড়ি ও খড়্গপুরের এসআরপি-র অফিসে সেগুলি পাঠানো হবে। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “২০০৮-এ রেল পুলিশে ডগ স্কোয়াড তৈরি হয়। গড়ে দু’টি করে ‘স্নিফার ডগ’ আছে প্রতিটি এসআরপি অফিসে। কিন্তু রেলপথে যে হারে অপরাধ বাড়ছে তাতে আরও কুকুরের প্রয়োজন।” সেই কারণেই নোয়াপাড়ার মণ্ডলপাড়া লেনের এক বাসিন্দার কাছ থেকে ৭২ হাজার টাকা খরচ করে কুকুরছানাগুলি কিনেছিল রেল পুলিশ। অভিযোগ, এর জন্য টেন্ডার ডাকা হয়নি। কেনার আগে কুকুরছানাগুলির ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছিল কি না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
রেল পুলিশ জানাচ্ছে, কেনার সময় ছ’টি কুকুরছানার বয়স ছিল ৫৮ দিন এবং বাকি দু’টির ৬৫ দিন। পশুচিকিৎসকেরা বলছেন, সাধারণ ভাবে তিন মাসের আগে থেকেই কুকুরকে পোলিও এবং হেপাটাইটিসের প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হয়। দমদমের কোয়ার্টারে কুকুরছানাগুলি কী ধরনের চিকিৎসা পেয়েছিল, কোনও ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ মতো তাদের খাবার দেওয়া হত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন পুলিশকর্তারা।
রেল পুলিশের ‘কেনেলে’র দায়িত্বে আছেন যাঁরা, প্রশ্ন উঠেছে তাঁদের যোগ্যতা নিয়েও। তদন্তে জানা গিয়েছে, দমদম রোডে দু’জন এএসআই এবং চার জন কনস্টেবল কুকুরছানাগুলির দেখভাল করতেন। এমনকী এসআরপি অফিসগুলিতেও স্নিফার ডগের দায়িত্ব ওই পুলিশকর্মীদেরই হাতে। পশুচিকিৎসক প্রভাত সামন্ত বলেন, “কুকুর পরিচর্যার কোনও প্রশিক্ষণ এঁদের নেই। আর পাঁচটা থানায় পোস্টিংয়ের মতোই তাঁদের ‘কেনেলে’ পাঠানো হয়। আর সেখানেই গলদ থেকে যায়।” |