মমতা-সচিন ‘যুগলবন্দি’, হাঁসফাঁস মহানগর
প্তাহান্তের কলকাতা-দুপুরের ‘দখল’ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সচিন তেন্ডুলকর!
বাম-বিতাড়নের ও তাঁর সরকারের ‘সাফল্যে’ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শনিবার দুপুরে প্রথমজনের জন্য শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বিশাল মিছিল। আর তার কিছু পরে দ্বিতীয়জনকে ইডেনে সংবর্ধনা এবং তাঁকে ব্যাট-হাতে বাইশ গজে দেখতে পাওয়ার তাড়না। প্রথমজনের জন্য দূরদুরান্ত থেকে আসা কাতারে কাতারে মানুষের ভিড়ে শনিবারের দুপুরে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে-পড়া যানজটে কার্যত স্তব্ধ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা। আর সেই সময়েই মুম্বই ইন্ডিয়ানস-কলকাতা নাইট রাইডার্স ম্যাচে দ্বিতীয় জনকে দেখতে পাতাল রেলে ইডেন-মুখো বেদম ভিড় উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলি থেকে। যে কারণে গন্তব্যে পৌঁছোতে সাধারণ মেট্রোযাত্রীরা প্রায় ‘বাদুড়ঝোলা’।
ঘটনাচক্রে, মমতা-সচিন একই সঙ্গে এ দিন ইডেনে ছিলেন। সচিনের সংবর্ধনার জন্য মমতা ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে।
গত বছরের ১৩ মে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণায় সিপিএমকে হারিয়ে রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ আনার কাজ শুরু করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। ওই দিনটির বর্ষপূর্তিতে রাজ্য সরকারকে ‘ধন্যবাদ’ জ্ঞাপনে যুব তৃণমূলের রাস্তা-জোড়া ‘সংগঠিত’ মিছিলে পা মেলান নেতা-কর্মীরা। মানুষের ভিড়ে মিশে মিছিলে হাঁটেন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম প্রমুখ। বেলা ১ টায় শ্যামবাজারে মিছিল শুরুর সময় ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিলে পা-মেলাতে অগুন্তি মানুষের পাশাপাশি ছিলেন সবুজপাড় সাদা শাড়ির সাঁওতাল রমণীরা। ধামসা-মাদলের তালে তালে মাথায় পিতলের ঘট, কোলে শিশু নিয়ে পথ চলেছেন তাঁরাও। ছিলেন মাথায় ফেট্টি-বাঁধা গামছা আর ধুতি পরা পুরুষরাও। রণ-পা চড়ে। মাদলের তালে। ছিল বিভিন্ন ট্যাবলোও। যাতে সরকারের বিভিন্ন ‘স্মরণীয়’ মুহূর্তের ছবির কোলাজ।
রাজ্যে জোট সরকারের ‘সাফল্যের’ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহরের রাস্তায়
তৃণমূলের মিছিল। শনিবার প্রদীপ আদকের তোলা ছবি।
যুব তৃণমূল সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী আগাগোড়া মিছিলের পুরোভাগে থেকে ‘সুশৃঙ্খল’ভাবে মিছিল এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কারণ সহজবোধ্য দলনেত্রী স্বয়ং মানুষের ভোগান্তি করে পথ আটকে মিটিং-মিছিলের বিরুদ্ধে। কিন্তু মিছিল-পথের কোথাওই আমজনতার জন্য রাস্তার সিঁকি ভাগও ছাড়েননি উৎসাহী সমর্থকেরা। বিধান সরণি, কলেজ স্ট্রিট, নির্মল চন্দ্র স্ট্রিট, গণেশ অ্যাভিনিউ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে ধর্মতলার মোড়ে সওয়া ঘণ্টার মিছিল শেষে (ইডেনে যাওয়ার তাড়া চিল সকলের। তাই স্বাভাবিকের চেয়েও হাঁটার গতি দ্রুত ছিল) শুভেন্দু রাজ্য সরকারকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে বলেন, “মিছিলে অংশ নেওয়া লক্ষাধিক ছাত্র-যুব আবার প্রমাণ করে দিলেন, তাঁরা মা-মাটি-মানুষের সরকারের পাশে রয়েছেন।
প্রথম বছরেই ছাত্র-যুবদের কর্মসংস্থান-সহ বিভিন্ন প্রকল্প এবং রাজ্যে উন্নয়ন কাজের জন্য এই সরকারকে আমাদের তরফে ধন্যবাদ। মিছিলে আসার জন্য আপনাদেরও ধন্যবাদ।”
সরকার দরাজ ‘ধন্যবাদ’ পেয়েছে। কিন্তু মিছিলে আটকে পড়ে ঘুরপথে গন্তব্যে যেতে বাধ্য জনতা বিরক্তিতে হাঁসফাঁস করেছে। তীব্র গরমে অবস্থা আরও দুর্বিসহ। মিছিল শেষ না-হওয়া পর্যন্ত উত্তর থেকে মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে রাখতে হয়েছে পুলিশকে। মিছিলের শেষে লোক নিয়ে ট্রাক-ম্যাটাডর ফিরতি পথে আরও যানজট বাড়িয়েছে। যে জট ছনিয়েছে দক্ষিণ কলকাতাতেও।
দুপুরের গরম আর মিছিলের জট এড়াতে অন্যান্য শনিবারের দুপুরের তুলনায় পাতালরেলে ভিড় বাড়তে শুরু করেছিল। কিন্তু সেখানেও রেহাই মেলেনি। ইডেনমুখো ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা মেলেনি। প্রায় সকলেরই গন্তব্য এসপ্ল্যানেড স্টেশন। ভিড় ঠাসা মেট্রোয় ওঠা-নামার সময় ধস্তাধস্তিও হয় কিছু স্টেশনে। ভিড়ের চাপে দরজা বন্ধ হতে দেরি হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে খানিকটা বিলম্বে চলে মেট্রো। বিকেলের পর পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হয়। তবে কলকাতাবাসীর ভোগান্তি এদিন বিকেলে শেষ হয়নি। সন্ধের পর ইডেনে কলকাতা ধরাশায়ী হয়েছে সচিনের মুম্বইয়ের কাছে। আর আজ, রবিবার ছুটির দিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরও একটি মিছিলের অপেক্ষা রয়েছে। দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূলের উদ্যোগে ফল ঘোষণার বর্ষপূর্তি উদ্যাপনে মিছিল হাজরা থেকে রাজাবাজার পর্যন্ত।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.