অব্যবহৃত পড়ে থাকা খনি থেকে কয়লা তুলে রাজ্যে ১৩০০ মেগাওয়াটের একটি সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব দিল প্রমোদ কুমার মিত্তলের সংস্থা গ্লোবাল অয়েল অ্যান্ড এনার্জি। বিশিষ্ট শিল্পপতি লক্ষ্মীনারায়ণ মিত্তলের ভাই প্রমোদ শনিবার নিজে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দিয়েছেন। যা গড়ে উঠলে রাজ্যে বিদ্যুৎ শিল্পে কমপক্ষে ৭,৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ আসবে।
মহাকরণ সূত্রে খবর, মিত্তলের প্রস্তাবের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছেন। পরিকল্পনাটি যাতে কার্যকর করা যায় তার জন্য তিনি বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তকে সব রকম সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রকল্পটি নিয়ে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও আলোচনা করতে বলেছেন মমতা। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে
|
প্রমোদ কুমার মিত্তল |
কয়লা খনি দেওয়ার সুপারিশ পাঠাতে হবে পার্থবাবুর শিল্প দফতরের অধীনস্থ পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমকেই।
ইস্পাত শিল্পে বিশ্বের প্রথম সারির সংস্থা আর্সেলর মিত্তলের প্রধান কর্তা লক্ষ্মীনারায়ণ মিত্তলের ভাই প্রমোদ মিত্তল কলকাতারই ছেলে। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে বাণিজ্য শাখায় পড়াশুনো করেছেন। প্রমোদের নিজেরও লিবিয়া, বসনিয়া, ফিলিপিন্স, নাইজিরিয়াতে ইস্পাত কারখানা রয়েছে। তিনি গ্লোবাল স্টিল হোল্ডিং নামে ওই সংস্থার চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, আসানসোল-রানিগঞ্জ এলাকায় বহু কয়লা খনি অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে। যার অনেকগুলিই এখন জলাধারে পরিণত হয়েছে। এই সব খনি থেকেই কয়লা তুলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ার পরিকল্পনা করছে প্রমোদ মিত্তলের সংস্থা। খনিগুলি অবশ্য পরিত্যক্ত বলতে যা বোঝায়, তেমন নয়। ইসিএল সূত্রে বলা হচ্ছে, এই সব খনি থেকে কয়লা তুলতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োজন। কিন্তু সেই প্রযুক্তি ইসিএলের নেই। আর্থিক ভাবে ধুঁকতে থাকার কারণে প্রযুক্তি আমদানি করাও সম্ভব হয়নি। ফলে খনিগুলি থেকে কয়লা তোলা বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই কয়লা তুলেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের অভিনব পরিকল্পনা করেছেন প্রমোদ মিত্তল।
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, আসানসোলের শীতলপুর এবং সোদপুর খনিতেই ছয় কোটি মেট্রিক টনের মতো কয়লা এখনও রয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও সংগ্রামগড় ও সালানপুর খনিতে দুই কোটি মেট্রিক টন, গিরমিন্তে প্রায় তিন মেট্রিক টন এবং শ্রীপুরে এক কোটি মেট্রিক টনের মতো কয়লা রয়েছে।” এই সব খনি ও তার সংলগ্ন জমি ঘিরেই প্রমোদ মিত্তল জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে মণীশবাবু জানান। খনিগুলি পাওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রকের সঙ্গে খুব শীঘ্রই কথা বলবে রাজ্য সরকার।
কিন্তু চাহিদা বাড়ছে না বলে আগামী বছর থেকে এ রাজ্যে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত হবে। সেখানে নতুন একটি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বেসরকারি ওই সংস্থাটির পক্ষে কতখানি লাভজনক হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিদ্যুৎমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে চললেও, প্রকল্পটি গড়ে উঠতে কমপক্ষে পাঁচ-সাত বছর সময় লেগে যাবে। তত দিনে এ রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা যেমন আরও বাড়বে, তেমনি অন্য রাজ্যগুলিও বিদ্যুৎ চাইবে। তা ছাড়া, রাজ্যের চালু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির বয়স ক্রমেই বাড়ছে। ফলে আগামী দিনে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা কমবে। এই জোড়া কারণকে সামনে রেখেই মিত্তলদের প্রকল্পকে রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মণীশবাবু জানান। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে রাজ্যের প্রয়োজন মেটাতে মিত্তলদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বাকি বিদ্যুৎ ওই সংস্থাটি জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করে দিতে পারবে। |