বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী অস্থায়ী উপাচার্যের নাম প্রস্তাব করে রাজ্যপালের কাছে ফাইল পাঠিয়েও রাজ্যকে তা ফেরত নিতে হল।
উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ফাইলটি আচার্য তথা রাজ্যপালের বিবেচনার জন্য পাঠানোর প্রক্রিয়ার মধ্যেই বড় ধরনের ত্রুটি থেকে গিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্যপালের কাছে প্রস্তাব যাওয়ার কথা শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে। এ ক্ষেত্রেও তাই গিয়েছে, কিন্তু মাঝে জড়িয়েছে রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিতের নাম। যা কোনও ভাবেই হওয়ার কথা নয়।
কী ভাবে তা হল? সরকারি সূত্রের খবর, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব কাকে দেওয়া যেতে পারে, সেই ব্যাপারে উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান তাঁর প্যাডে তিনটি নাম পাঠান শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। ওই কাগজের উপরেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাঁর মন্তব্য লেখেন। তার পরে ফাইলবন্দি করে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, মন্ত্রীর মন্তব্য-সহ যে কাগজ রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়েছে, তাতে প্রস্তাবিত তিনটি নামের প্রথমটির নীচে লাল কালির দাগ দেওয়া। |
এই ধরনের একটি ফাইল রাজভবনে কী ভাবে পৌঁছতে পারে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন ওঠে। প্রথমত, রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য কে হবেন, তা ঠিক করতে উচ্চশিক্ষা দফতর উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের সাহায্য নেবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু নিলে তা নিতে হবে বেসরকারি ভাবে। কারণ, স্থায়ী বা অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের সরকারি প্রক্রিয়ায় উচ্চশিক্ষা সংসদের ভূমিকা নেই। তাই প্রশ্ন উঠেছে, উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের নিজের প্যাডে লেখা সুপারিশ সরকারি ফাইলের অন্তর্গত হয়ে রাজ্যপালের কাছে যায় কী ভাবে? দ্বিতীয়ত, তিনটি নামের একটির নীচে লাল কালির দাগ দিয়ে দেওয়া মানে হল, রাজ্যপালকে কার্যত ওই নামটিই বেছে নিতে বলা। সরকারি রীতি অনুযায়ী যা কখনও করা যায় না।
ফাইল যখন রাজভবনে পৌঁছয় রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন তখন কলকাতায় ছিলেন না। সচিবালয় মারফত বিষয়টি তাঁর কানে পৌঁছয়। তিনি কিছুটা ‘অসন্তুষ্ট’ হন বলেও সরকারি সূত্রের খবর। আর এর পরেই ফাইল ফিরিয়ে নেয় উচ্চশিক্ষা দফতর। রাজ্যের ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ন’টিতেই এখন অস্থায়ী উপাচার্যরা আছেন। আরও তিনটিতে উপাচার্যের পদ শূন্য হবে মাসখানেকের মধ্যেই। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ষোড়শীমোহন দাঁ-ও অস্থায়ী ভাবে ওই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। গত বছর নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহ-উপাচার্য ষোড়শীমোহনবাবুকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফাইল ফিরে আসায় উচ্চশিক্ষা দফতরেও চাপানউতোর শুরু হয়েছে। দফতরের এক কর্তার কথায়, ফাইল তৈরি বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তা পাঠানোর ব্যাপারে মন্ত্রীর নয়, আমলাদেরই দক্ষতা থাকে। ওই চেহারায় ফাইলটি যে রাজভবনে পাঠানো যায় না, সেটা আমলাদের নজর এড়াল কী করে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। |