রাজ্যের প্রতিটি থানায় এক সপ্তাহ ধরে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করতে হবে। বিভিন্ন জেলা পুলিশ সুপারের দফতর থেকে ওই লিখিত নির্দেশ পেয়েই থানায় থানায় রবীন্দ্র-সপ্তাহ পালনের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। কিন্তু অনুষ্ঠান বাবদ যা খরচ হবে, তা কোন খাত থেকে দেওয়া হবে সেই প্রশ্নে কিছুটা ধন্দে রয়েছেন সংশ্লিষ্টদের অনেকে। কারণ, নির্দেশিকায় ওই সংক্রান্ত টাকা কোথা থেকে মিলবে, তার কোনও উল্লেখ নেই। টাকার সংস্থান করে খরচ মেটানো হলেও পরে তার অনুমোদন মিলবে কি না তা নিয়েও পুলিশ মহলে চলছে নানা জল্পনা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, থানায় একটি মালা ও ফুল-সহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি রাখতে হবে। এলাকার স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে প্রভাতফেরি-সহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। থানার ভবন সাজাতে হবে টুনি বাল্ব দিয়ে। এলাকার বিশিষ্টজনদের নিয়ে আলোচনাসভাও করতে হবে। |
রবীন্দ্রজয়ন্তীর প্রস্তুতি এসপি অফিসে। মেদিনীপুর শহরে সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি। |
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কয়েকজন পদস্থ অফিসার বলছেন, “এ ধরনের খরচের ব্যাপারে সংশয়ের অবকাশ নেই। থানার আইসি বা ওসিদের একটি নিজস্ব তহবিল আছে। সেই তহবিল থেকেই টাকা খরচ করতে হবে।” পাশাপাশি, রাজ্য পুলিশের একাধিক শীর্ষ অফিসার জানান, প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস-সহ নানা অনুষ্ঠান করার জন্য বিবিধ খাত থেকে থানা খরচ করতে পারে। আবার অনেক সময়ে থানার পুলিশকর্মীরাও নিজেরা চাঁদা তুলে ছোটখাট অনুষ্ঠান করে থাকেন। রবীন্দ্র-সপ্তাহ পালনের ক্ষেত্রে বেশি খরচ হলে নির্দেশিকার উল্লেখ করে পুলিশ সুপারের দফতরের মাধ্যমে হিসেব দাখিল করলে, স্বরাষ্ট্র দফতর তা বরাদ্দ করবে বলে ওই অফিসারদের অভিমত।
কিন্তু বিপরীত বক্তব্য মিলেছে পুলিশ মহল থেকেই। রাজ্যে মোট থানার সংখ্যা ৪৩২টি। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে পুলিশ মহলের একাংশের বক্তব্য, রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করতে গড়ে রোজ ৩ হাজার টাকা খরচ হলে সাত দিনে অন্তত ২০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। অর্থাৎ, রাজ্যের সব থানায় ওই অনুষ্ঠান হলে প্রায় ৮৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যাবে। রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের জন্য একলপ্তে পুলিশ ওই পরিমাণ ব্যয় করে ফেললে পরবর্তী কালে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে কি না, তা নিয়েই রয়েছে সংশয়। কিছু পুলিশ আধিকারিক আবার বলেছেন, “আইসি বা ওসি-দের তহবিল থেকে এক দিনের অনুষ্ঠানের জন্য খরচ করা যেতে পারে। টানা সাত দিন অনুষ্ঠান করার খরচ কি ওই তহবিল থেকে দেওয়া যাবে?”
পাশাপাশি, পুলিশেরই একটি মহল বলছে, পরিকাঠামো-সমস্যায় পুলিশ যেখানে ভুগছে, সেখানে এ ধরনের খরচ করা বিশেষ ‘সুবিধাজনক’ নয়। রাজ্য পুলিশের সদর দফতর থেকে জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষকে বছরে যা বরাদ্দ করার কথা, আর্থিক সঙ্কটের কারণে বর্তমানে তা পুরোপুরি করা হচ্ছে না দাবি করে রাজ্য পুলিশের কিছু পদস্থ অফিসার বলেছেন, “দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়ার মতো একাধিক জেলায় প্রত্যন্ত এলাকার একাধিক থানার পরিকাঠামো বেহাল। কোথাও থানায় ঠিকমতো আলো জ্বলে না। বৃষ্টির সময় ছাদ থেকে জল চুঁইয়ে পড়ে। আবার কোনও থানায় মশার উপদ্রব। সেগুলোও তো দেখতে হবে, না কি?”
সব মিলিয়ে ওই নির্দেশিকা নিয়ে নিয়ে ‘জল্পনা’র রসদ যে রয়েছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার কথায়। তিনি বলেছেন, “এই প্রথম রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করার জন্য সব জেলার পুলিশ সুপারের অফিস থেকে লিখিত নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। এত দিন কোনও থানায় সরকারি ভাবে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করা হত না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যখন সে নির্দেশ দিয়েছেন, তখন নিশ্চয়ই খরচও অনুমোদন করবেন।” |