পুরুলিয়ার স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও তাঁর স্ত্রীকে খুন করতে নিজের ভাগ্নে ও তার এক বন্ধুকে দিল্লি থেকে উড়িয়ে এনেছিল বিজয় অগ্রবাল। দম্পতি খুনে ধৃত ব্যবসায়ী বিজয়কে জেরা করে এমনই তথ্য মিলেছে বলে দাবি পুরুলিয়া জেলা পুলিশের।
ওই জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দিল্লির ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বিজয়ের ভাগ্নে বিনীত অগ্রবাল এবং তার বন্ধু ধীরজ অগ্রবালকে। দু’জনেরই গাড়ি ভাড়া দেওয়া, জমি কেনাবেচা-সহ নানা ধরনের কারবার রয়েছে। দিল্লি পুলিশের সাহায্যে রবিবার তাদের ধরা হয়। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর সোমবার বলেন, “ধৃত দু’জনকে ট্রানজিট রিমান্ডে পুরুলিয়ায় নিয়ে আসা হচ্ছে।”
গত ২৮ এপ্রিল পুরুলিয়া শহরে নিজের বাড়িতে খুন হন ব্যবসায়ী দম্পতি রামশঙ্কর ও সুশীলা কোঠারি। পরদিন দুপুরে পুলিশ দু’জনের দেহ উদ্ধার করে। খুনের অভিযোগে পুলিশ শনিবার গ্রেফতার করে পুরুলিয়ারই ব্যবসায়ী বিজয়কে। এখন সে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। তেজারতির ব্যবসায় বিজয়ের সঙ্গে সুদ নিয়ে বিবাদের জেরেই খুন হন ওই দম্পতি বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ সুপারের দাবি, বিজয়কে জেরা করেই জানা যায়, বিনীত ও ধীরজও খুনের ঘটনায় জড়িত। এর পরেই জেলা পুলিশের একটি দল দিল্লি গিয়ে তাদের ধরে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে বিজয় জানিয়েছে, সোনা বন্ধক রেখে সে রামশঙ্করবাবুর কাছ থেকে চড়া সুদে ৩০ লক্ষেরও বেশি টাকা ধার নিয়েছিল। কিন্তু, সে ঋণ শোধ করতে পারছিল না। সুদের টাকাও রামশঙ্কবাবুকে সে দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।
তদন্তে নেমে নিহত ব্যবসায়ীর ব্যবসার খাতাপত্র ও মোবাইলের ‘কললিস্ট’ খতিয়ে দেখার পরেই পুলিশ বিজয়কে গ্রেফতার করেছিল। পুলিশ সুপারের দাবি, “তদন্তে জানা গিয়েছে, রামশঙ্করবাবু বিজয়কে সুদের টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। এর পরেই তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করে বিজয়। ওই কাজে সে সাহায্য নেয় তার ভাগ্নে ও বন্ধুর। ঘটনার দিন সকালে বিনীত ও ধীরজ দিল্লি থেকে ফ্লাইটে রাঁচিতে নেমে গাড়ি করে পুরুলিয়ায় এসেছিল। পরিকল্পনা মাফিক রাতে তিন জনেই গিয়েছিল ওই দম্পতির বাড়িতে। খুন করে রাতটা পুরুলিয়ায় কাটিয়ে পরদিনই সকালেই রাঁচি হয়ে দিল্লি ফিরে যায় বিনীত আর ধীরজ।”
পুলিশের দাবি, বিজয়কে জেরা করে তারা জেনেছে, দম্পতিকে খুন করার ‘পারিশ্রমিক’ হিসাবে কয়েক লক্ষ টাকা বিনীত ও ধীরজকে দেওয়ার কথা ছিল। যে টাকা বিজয় রামশঙ্করবাবুর কাছ থেকে ধার নিয়েছিল, সেটি তিন ভাগ হওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি রামশঙ্করবাবুর বাড়ি থেকে গয়না লুঠ করে তা বিজয় রাখবে বলে ঠিক হয়েছিল। পুলিশ সুপারের কথায়, “বিজয়কে জেরা করে ঘটনার বিষয়ে অনেক তথ্যই মিলেছে। দিল্লি থেকে ধৃত দু’জনকে ট্রানজিট রিমান্ডে পুরুলিয়া নিয়ে আসার পরে তাদের জেরা করে আরও তথ্য ও সূত্র জানার চেষ্টা করা হবে।” পুলিশ এখন জানার চেষ্টা করছে, বিজয় যে সোনা বন্ধক রেখেছিল, তা কোথায় রয়েছে বা খুনের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না। পুলিশ সুপার বলেন “ধৃতদের জেরা করে ঘটনাটি আরও পরিষ্কার ভাবে জানা যাবে।” |