অন্ধকারের উৎস হতে... |
রবীন্দ্রনাথকে প্রথম ‘স্বীকৃতি’ |
|
রবীন্দ্রনাথের লেখা ও গাওয়া গানে মুগ্ধ পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়ে একখানি পাঁচশো টাকার চেক উপহার দিয়েছিলেন। ওই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন “একবার মাঘোৎসবের সকালে ও বিকালে আমি অনেকগুলি গান তৈরি করেছিলাম। তাহার মধ্যে একটা গান ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে।’
পিতা তখন চুঁচুড়ায় ছিলেন। সেখানে আমার এবং জ্যোতিদাদার ডাক পড়িল। হারমোনিয়ামে জ্যোতিদাদাকে বসাইয়া আমাকে তিনি নূতন গান সব-কটি একে একে গাহিতে বলিলেন। কোনো কোনো গান দুবারও গাহিতে হইল।
গান গাওয়া যখন শেষ হইল তখন তিনি বলিলেন, ‘দেশের রাজা যদি দেশের ভাষা জানিত ও সাহিত্যের আদর বুঝিত, তবে কবিকে তো তাহারা পুরস্কার দিত। রাজার দিক হইতে যখন তাহার কোনো সম্ভাবনা নাই, তখন আমাকেই সে-কাজ করিতে হইবে।’ এই বলিয়া তিনি একখানি পাঁচশো টাকার চেক আমার হাতে দিলেন।”
|
শেলি সম্পর্কে |
“শেলিকে অন্যান্য অনেক বড়ো লোকের চেয়ে বিশেষরূপে কেন ভালো লাগে... ওর চরিত্রে কোনরকম দ্বিধা ছিল না, ও কখনও আপনাকে কিম্বা আর কাউকে বিশ্লেষণ করে দেখেনি ওর এক-রকম অখণ্ড প্রকৃতি।... শেলির স্বভাবের যে সৌন্দর্য তার মধ্যে তর্ক বিতর্ক আলোচনার লেশ নেই। সে যা হয়েছে, সে কেবল নিজের জন্যে নিজে কিছুমাত্র দায়ী নয় সে জানেও না সে কাকে কখন আঘাত দিচ্ছে, কাকে কখন সুখী করছে তাকেও কোনও বিষয়ে নিশ্চয়রূপে কারও জানবার যে নেই।” লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ।
|
কিটসের প্রতি অনুরাগ |
“আজকাল আমি আমার লেখা ও আলস্যের মাঝে মাঝে কবি কীট্সের একটি ক্ষুদ্র জীবনচরিত অল্প অল্প করে পাঠ করি। পাছে একদমে একেবারে শেষ হয়ে যায়; সেই জন্যে রেখে রেখে পড়ি পড়তে বেশ লাগে। আমি যত ইংরাজ কবি জানি সব চেয়ে কীট্সের সঙ্গে আমার আত্মীয়তা আমি বেশি করে অনুভব করি। কীট্সের লেখায় কবি হৃদয়ের স্বাভাবিক সুগভীর আনন্দ তার রচনার কলানৈপুণ্যের ভিতর থেকে একটা সজীব উজ্জ্বলতার সঙ্গে বিচ্ছুরিত হতে থাকে। সেইটে আমাকে ভারি আকর্ষণ করে।”
|
বোলপুরে রবীন্দ্রনাথ |
|
“পৈতা উপলক্ষে মাথা মুড়াইয়া ভয়ানক ভাবনা হইল, ইস্কুল যাইব কী করিয়া।... এমন দুশ্চিন্তার সময়ে একদিন তেতলার ঘরে ডাক পড়িল। পিতা জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি তাঁহার সঙ্গে হিমালয় যাইতে চাই কিনা। ‘চাই’ এই কথাটা যদি চিৎকার করিয়া আকাশ ফাটাইয়া বলিতে পারিতাম, তবে মনের ভাবের উপযুক্ত উত্তর হইত। কোথায় বেঙ্গল অ্যাকাডেমি আর কোথায় হিমালয়।... যাত্রার আরম্ভে প্রথমে কিছুদিন বোলপুরে থাকিবার কথা।... গাড়ি ছুটিয়া চলিল; তরু শ্রেণির সবুজ নীল পাড়-দেওয়া বিস্তীর্ণ মাঠ এবং ছায়াচ্ছন্ন গ্রামগুলি রেলগাড়ির দুই ধারে দুই ছবির ঝর্নার মত বেগে ছুটিতে লাগিল, যেন মরীচিকার বন্যা বহিয়া চলিয়াছে। সন্ধ্যার সময় বোলপুরে পৌঁছিলাম। পালকিতে চড়িয়া চোখ বুজিলাম। একেবারে কাল সকালবেলায় বোলপুরের সমস্ত বিস্ময় আমার জাগ্রত চোখের সম্মুখে খুলিয়া যাইবে, এই আমার ইচ্ছা--... ভোরে উঠিয়া বুক দুরুদুরু করিতে করিতেই বাহিরে আসিয়া দাঁড়াইলাম।... প্রান্তরলক্ষ্মী দিক্চক্রবালে একটি মাত্র নীল রেখার গণ্ডি আঁকিয়া রাখিয়াছিলেন, তাহাতে আমার অবাধ সঞ্চরণের কোনো ব্যাঘাত করিত না।”
|
সঙ্কলনে: অরুণ মুখোপাধ্যায়। |
|