পথিক গুহর ‘আবিষ্কারের আবির্ষ্কতা’ (১৮-২) প্রসঙ্গে এই চিঠি।
প্রথমেই একটা অসুবিধার কথা বলি। বাংলায় ডিসকভারি, ইনভেনশন এবং ইনোভেশনের আলাদা আলাদা প্রতিশব্দ আছে বলে আমার জানা নেই। তাই সবই আবিষ্কার। তবু ইংরেজিতে তিনটে শব্দের ভিন্ন অর্থ। অবশ্য ‘উদ্ভাবনা’ শব্দটা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকি ইনোভেশনের প্রতিশব্দ হিসাবে।
ডিসকভারি এবং ইনভেনশনে মৌলিক বিজ্ঞানের গবেষণার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু ইনোভেশনে এর প্রয়োজন হয় না। তাই এডিসনের বিশ্বজোড়া খ্যাতি ইনোভেটর হিসাবে। অন্য কিছু ভাবে নয়।
আমার মূল বক্তব্যে আসি। এডিসনকে শ্রেষ্ঠ ইনোভেটর বলা হলেও আরও একজনের কথা আমরা উচ্চারণ করি না। তাঁর অপরাধ, তিনি পশ্চিমী জগতের লোক নন। তিনি জাপানি। আর এ জন্যই আমেরিকা, ইউরোপ তাঁকে কখনওই পাদপ্রদীপের আলোর সামনে আনতে চায় না। তাঁর নাম ড. ইওসিরো নাকামাতসু। জন্ম ২৬ জুন, ১৯২৮। এডিসনের আবিষ্কার-সংখ্যা ২৩৩০ আর নাকামাতসুর ৩২১৮ (উইকিপিডিয়া বলছে, ৪০০০-এরও বেশি)। তিনি ড. নাকামাতসু বলে পরিচিত ছিলেন। এত বিশাল সংখ্যক আবিষ্কারের জন্য পশ্চিমী জগৎ তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতে ছাড়েনি। ২০০৫ সালে তাঁকে আই জি নোবেল প্রাইজ (প্যারডি অব নোবেল প্রাইজ) দেওয়া হয়। কোন কাজের জন্য? তাঁর ৩৪ বছরের জীবনে তিনি যা যা খেয়েছেন, এবং তার প্রতিটির ছবি তুলে রাখা এবং ব্যাখ্যা করার জন্য (এখনও এটি চলছে)। |
ফ্লপি ডিস্ক, কমপ্যাক্ট ডিস্ক, ডিজিটাল ঘড়ি ইত্যাদি বহু কিছুর তিনি উদ্ভাবক। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে নাকামাতসু উদ্ভাবন করেছিলেন খেলনা উড়োজাহাজের জন্য স্বয়ংক্রিয় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির নিয়ামক যার হাত ধরে পরবর্তী কালে স্বয়ংক্রিয় প্লেন চালানো বাস্তবায়িত হয়। বয়স যখন ১৪, তখন বাজারে আনলেন কেরোসিন পাম্প, যা বহু কাল বাজারে বিকোয়। নাকামাতসুর খ্যাতি ছড়াল ১৯৪৮ সালেযখন উনি গ্রামোফোন রেকর্ডকে খুব ছোট করে ফেললেন এবং এর খসখসে শব্দ বন্ধ হয়ে নির্গত কণ্ঠের আওয়াজের মান উন্নত হল। ফ্লপি ডিস্কের জাপানি পেটেন্ট নিলেন ১৯৫২ সালে। যার ২০ বছর পর আইবিএম আমেরিকান পেটেন্ট পেয়েছিল এই একই জিনিসের জন্য। আজকের জ্বালানি-কোষের (ফুয়েল সেল) যা প্রাণভোমরা, সেই জলচালিত ইঞ্জিন উদ্ভাবন করলেন ১৯৯০ সালে। নাকামাতসু বিশ্বাস করতেন, সফল ইনোভেশনের চাবিকাঠি হল ‘চিন্তার স্বাধীনতা’। আর এ জন্যই তিনি তাঁর গবেষণার জন্য কারও কাছ থেকে কোনও আর্থিক অনুদান গ্রহণ করেননি। আইবিএম ছাড়া ওঁর উদ্ভাবনার পেটেন্ট ব্যবহারের অনুমতিও কাউকে দেননি। দিনে মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমোতেন এবং বলতেন, তাঁর জীবনধারা অনুসরণ করলে যে-কোনও মানুষ ১৪৪ বছর বাঁচতে পারে।
উদ্ভাবনার ব্যাপারে অদ্ভুত সব ধারণা তাঁর মাথায় খেলা করত। এর মধ্যে ছিল এমন এক সিগারেট, যা পান করলে মানুষকে আরও স্মার্ট দেখায়। এমন এক চেয়ার, যাতে বসলে মানুষের মাথা ঠান্ডা আর পা গরম থাকে। এর ফলে, মানুষের চিন্তায় স্বচ্ছতা আসে।
এডিসনকে কুর্নিশ করতেই হয়। এডিসনের মতো বিষয়ের ব্যাপ্তি নাকামাতসুর ছিল না। তবু নাকামাতসুকে বিস্মরণের পথে ঠেলে দেওয়া অন্যায়, ঘোরতর অন্যায়।
সুব্রত ঘোষ। কলকাতা-৬৮
|
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অলচিকি ভাষাকে মর্যাদা দিয়ে সাঁওতাল ছাত্রছাত্রীদের অনেক উপকার করেছেন। তাদের পড়াশোনায় সাহায্য করেছেন। কিন্তু পড়াশোনার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, যেটা এখনও পৌঁছয়নি বোলপুরের কামারপাড়ার (গাঁধী কলোনির) সাঁওতালপাড়ায়। দিনের পর দিন ‘ট্রান্সফর্মার বসানো হবে’ এই প্রতিশ্রুতিতে শুধু সাঁওতাল পল্লির বাসিন্দারা নন, আশেপাশে শিল্পী সাহিত্যিক সাংবাদিক মানুষজনেরাও তাঁদের কাজকর্ম সুষ্ঠু ভাবে করতে পারছেন না। শাশ্বতী দেব। কলকাতা-৯১ |