সম্পাদকীয় ১...
সংকটে অভিষেক
ফ্রান্সও তবে এ বার পরিবর্তনের পথের পথিক। সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকোলাস সারকোজিকে হারাইয়া পদারূঢ় হইলেন সোশ্যালিস্ট দলের প্রার্থী ফ্রাঁসোয়া অল্যান্দ। ঘটনাটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত নহে, ইউরোপ তথা ফ্রান্সের বৃহত্তর আর্থ-সামাজিক ছবি এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সারকোজির ব্যক্তিজীবনের ক্ষুদ্রতর ছবি মিলিয়া যে চিত্রপটটি নির্মাণ করিয়া তুলিয়াছিল, তাহাতে ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হইয়া গিয়াছিল যে, সারকোজির পালা ফুরাইল বলিয়া। অল্যান্দের জয়ের গৌরব অবশ্য ইহাতে খাটো হয় না। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, স্মরণকালের মধ্যে তিনিই দ্বিতীয় ফরাসি প্রেসিডেন্ট, যিনি সোশ্যলিস্ট দলের সদস্য। প্রেসিডেন্ট মিতেরঁ তাঁহার একমাত্র পূর্বসূরি, যাঁহারও প্রথম নামটি একই, ফ্রাঁসোয়া। অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে মিতেরঁ-যুগের অবসান হইবার পর এই আবার দ্বিতীয় বার সমাজবাদী আদর্শে দীক্ষিত প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সের হাল ধরিলেন। স্বভাবতই, ইউরোপের বাম মহল রীতিমত উচ্ছ্বসিত। তাঁহারা সম্ভবত ভুলিয়া যাইতেছেন যে, এই জয় যতটা না সোশ্যালিজম-এর জয়, তাহার অপেক্ষা অনেক বেশি করিয়া স্থিতাবস্থার পরাজয়।
স্থিতাবস্থা যে পরাজয়ের খাদের ধারে বিপন্ন ভাবে অপেক্ষমাণ, তাহা কেবল ফ্রান্সের বাস্তব নহে, এই মুহূর্তে বহু ইউরোপীয় দেশেরই বাস্তব। প্রায় একই সময়ে গ্রিসের নির্বাচনের সংবাদও বলিতেছে, ক্ষমতাসীন দলকে গদি ছাড়িতে হইবে। জার্মানি ব্যতিরেকে ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশের ক্রমান্বিত অর্থনৈতিক দুরবস্থাই সেই সব দেশের ক্ষমতাসীনদের দুর্গতির কারণ। শ্রমিক ছাঁটাই, বেকারত্ব, সরকারি পরিষেবার তীব্র ব্যয়হ্রাস, সব মিলাইয়া সংকট ক্রমশই চরম আকার ধারণ করিতেছে। ইহারই মধ্যে চালু হইয়াছে জার্মানির নেতৃত্বে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবিত ‘অস্টারিটি মেজার্স’ অর্থাৎ তীক্ষ্ণ ব্যয়-কর্তনের রূপরেখা। এই নীতিরই বিরুদ্ধে উত্তাল হইয়া উঠিয়াছে ইউরোপের জনসমুদ্র, তাঁহাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন কঠিন হইতে কঠিনতর হইয়া উঠিতেছে ‘অস্টারিটি মেজার্স’-এর তাড়নায়। কিন্তু অন্যতর সমাধানের রাস্তা কি আছে? অন্য কোনও আর্থিক নীতি প্রণয়ন কি সম্ভব? জানা নাই। ফ্রান্সের নূতন প্রেসিডেন্ট তাই যতই স্লোগান দিন, ভোটযুদ্ধের পর এ বার সামনে অস্টারিটি মেজার্স-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ এই অজানা সমাধানকে কি তিনি দৃশ্যগোচর করিতে পারিবেন? তাঁহার প্রাক্-নির্বাচনী বক্তব্য ও প্রচার কিন্তু বিশেষ আশা জোগায় না। ফ্রান্সের বার্ষিক বাজেট ঘাটতি এই মুহূর্তে দশ হাজার কোটি, মোট ঋণের পরিমাণ জাতীয় আয়ের ৯০ শতাংশে পৌঁছাইয়াছে। ইউরোপের মধ্যে এ দেশেই আবার আয়কর-হার সর্বাপেক্ষা উচ্চ। এই পরিস্থিতিতে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় ব্যাপক সরকারি ব্যয়হ্রাস। কিন্তু উপায়ের আলোচনা তো দূরস্থান, সংকটের আলোচনাও অল্যান্দের নির্বাচনী প্রচারে সন্তোষজনক আকারে পাওয়া গেল না।
আরও একটি গুরুতর সমস্যাও এই বাস্তবের মধ্যে নিহিত। যে সোশ্যালিস্ট দলের তকমায় অল্যান্দ আপাত-গৌরবে গরীয়ান্, যে সোশ্যালিস্ট দলের নেতাকে সতেরো বছর পর ফরাসি জনসাধারণ ৫২ শতাংশ ভোট দিয়া জিতাইয়া আনিয়াছেন, সেই সোশ্যালিস্ট আদর্শ বা নীতি দিয়া কী ভাবে এই সংকটময় পরিস্থিতির মোকাবিলা হইবে, তাহা অল্যান্দ কেন, পৃথিবীর কোনও রাজনীতিকেরই পক্ষে সমাধান করা সহজ নহে। ইতিহাসের নিদারুণ পরিহাস যে সময় দেশের সরকারি ব্যয় যথাশীঘ্র কমানোই ফ্রান্সের জাতীয় অর্থনৈতিক ভরাডুবি হইতে রক্ষার একমাত্র পথ, তেমনই এক সময় বিস্তৃততর কল্যাণমুখী অর্থনীতির অ্যাজেন্ডা-শোভিত সোশ্যালিস্ট দলনেতা দেশের হাল ধরিলেন। তাঁহার সামনে বস্তুত এখন দুইটি পথ দুই দিকে বাঁকিয়া গিয়াছে: এক, তাঁহার ভোটদাতা জনসাধারণের মন রক্ষা, অথবা দেশ রক্ষা। নূতন প্রেসিডেন্ট স্পষ্টতই সুখে নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.