বসুন্ধরাকে ‘তুষ্ট’ করার কৌশল নিয়েও রাজস্থানে সঙ্কট মিটছে না বিজেপির।
প্রায় ৬০ জন অনুগামী বিধায়ক-নেতাকে নিয়ে দল ছাড়ার হুমকি দেওয়ার পর থেকেই অরুণ জেটলির মধ্যস্থতায় বিজেপি নেতৃত্ব বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তিনিই রাজস্থানের নেতা। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট নন ‘মহারানি’। তিনি চান, দল এখনই তাঁকে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রার্থী ঘোষণা করুক। রাজ্য বিজেপি সভাপতি অরুণ চতুর্বেদী এবং দলের তরফে রাজ্যের দায়িত্বে থাকা নেতা কাপ্তান সিংহ সোলাঙ্কিকে অবিলম্বে সরিয়ে তাঁর পছন্দের ব্যক্তিকে সেখানে বসানো হোক। রাজস্থানের ‘একচ্ছত্র’ ক্ষমতা এখনই তুলে দেওয়া হোক তাঁর হাতে। সেই বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দিল্লিতেও আসতে চাইছেন না বসুন্ধরা।
বসুন্ধরার ঘনিষ্ঠ নেত্রী কিরণ মহেশ্বরী আজ অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সাংবাদিক বৈঠকে দলের মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “রাজস্থানে বসুন্ধরাই দলের নেতা।” কিন্তু তিনিই কি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী? জবাবে প্রকাশ বলেন, “ভোট এলেই বিষয়টি ঘোষণা করা হবে।” দলের এক শীর্ষ নেতার দাবি, যেটুকু মনোমালিন্য হয়েছে, তা একেবারেই স্থানীয় স্তরে। এটিকে জাতীয় স্তরে টেনে আনার অর্থ হয় না। বসুন্ধরার আপত্তি দেখে বিজেপিতে তাঁর প্রতিপক্ষ গুলাবচাঁদ কাটারিয়া তৎক্ষণাৎ যাত্রা বাতিলের কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন। বসুন্ধরা রাজ্যের কোর কমিটির বৈঠকে দল ছাড়ার কথা না বললেও প্রকাশ্যে সেই মন্তব্য করে পরিস্থিতি অহেতুক জটিল করে তুলেছেন।
কিন্তু বসুন্ধরা শিবিরের অভিযোগ, আরএসএস এবং বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ অনেক দিন ধরেই তাঁদের নেত্রীর কর্তৃত্ব খর্বের চেষ্টা করছেন। দলের রাজ্য সভাপতি এবং কাপ্তান সিংহ সোলাঙ্কি আরএসএসের ইশারায় কাজ করছেন। গুলাবচাঁদ কাটারিয়াও আরএসএসের ঘনিষ্ঠ। আর তাঁদের প্রত্যক্ষ মদত দিয়ে যাচ্ছেন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী। আরএসএসের সঙ্গে বসুন্ধরার সম্পর্ক কোনও দিনই মধুর নয়। কিন্তু এখন যে ভাবে তাঁকে ‘অস্থির’ করার চেষ্টা করছে সঙ্ঘ, সেটিকে নির্মূল করতে চান বসুন্ধরা। তাই শুধু যাত্রা বাতিলের আশ্বাসে থেমে না থেকে এই সুযোগে রাজস্থানে তাঁর বিরোধীদের আধিপত্যও খর্ব করতে চাইছেন মহারানি।
কিন্তু গডকড়ী-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, বসুন্ধরাকে রাজ্যের নেত্রী হিসাবে ঘোষণা করতে দলের সমস্যা নেই। তাই বলে তাঁর চাপের রাজনীতির কাছে মাথা নোয়ানো হবে, তারও অর্থ নেই। সম্প্রতি কর্নাটকেও ইয়েদুরাপ্পা এ ভাবে চাপের রাজনীতি করেছেন। কিন্তু তাঁকেও গডকড়ী জানিয়েছেন, দলে সকলকেই শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। দলীয় নেতৃত্ব তাঁর গতিবিধিতে ‘সন্তুষ্ট’ হলে তবেই ইয়েদুরাপ্পাকে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর ব্যাপারে ভাবা হতে পারে। ইয়েদুরাপ্পার সঙ্গে সেই বৈঠক মাস খানেক আগে হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসাননি। দল-বিরোধী আচরণ যাতে তিনি না করেন, সেই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকেও। |