এক দিকে যেমন তীব্র করলেন চাপ, অন্য দিকে দিলেন সাহায্যের আশ্বাস।
ইরান আর পাকিস্তান নিয়ে আজ দ্বিমুখী কৌশল নিলেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। বস্তুত, ইরান থেকে তেল আমদানি কমাতে দিল্লির উপরে তিনি যে চাপ বাড়াবেন, সেটা কলকাতাতেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে আজ সকালে এক আলোচনাসভায় হিলারি জানান, ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে, সেটা দেখা ভারতের ‘দায়িত্বের’ মধ্যে পড়ে। আর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠকেও এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ইরানের থেকে তেল আমদানি কমানোর ব্যাপারে ভারত কিছু পদক্ষেপ করেছে। এটা প্রশংসনীয়। কিন্তু যথেষ্ট নয়। এ ব্যাপারে আরও কড়া হোক দিল্লি। রাতে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গেও বৈঠক করেন হিলারি। |
পরমাণু দায়বদ্ধতা বিল থেকে খুচরো ব্র্যান্ডে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বেশ কিছু বিষয়ে থমকে রয়েছে ভারত-আমেরিকার কৌশলগত সম্পর্ক। আজকেই পরমাণু দায়বদ্ধতা বিল নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ ব্যক্ত করে হিলারি বলেছেন, “আমরা দিল্লিকে পরিষ্কার করে দিয়েছি, যে চেহারায় বিল পাশ হয়েছে, তাতে মার্কিন সংস্থাগুলোর পক্ষে এখানে বিনিয়োগ করা মুশকিল। আশা করি কিছু পথ বেরোবে।”
এই অবস্থায় ইরান প্রশ্নে হিলারির এই আক্রমণাত্মক মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ঠিক এখনই দিল্লিতে উপস্থিত তেহরানের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল, যাদের স্পষ্ট বক্তব্য, ভারতের সঙ্গে তেল-বাণিজ্য বাড়ানোই তাদের লক্ষ্য।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, হিলারির সঙ্গে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শক্তি ক্ষেত্রে ভারতের বাধ্যবাধকতার দিকটিই তুলে ধরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভারত এর মধ্যেই ইরান থেকে তেল আমদানি ১৬ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে। এর থেকে কমানো হলে শক্তি ক্ষেত্রে যে ঘাটতি দেখা দেবে, তা পূরণ করার অবস্থা নেই ভারতের। সৌদি আরব বা ইরাকের সঙ্গে দৌত্য চললেও এখনই ইরানকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করার জায়গায় দিল্লি নেই। |
হিলারির যুক্তি, নিষেধাজ্ঞার চাপেই ইরান পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছে। চাপ বাড়াতেই তেল আমদানি কমানোটা জরুরি। সকালে কলকাতাতেও তিনি দিল্লিকে সতর্ক করে বলেন, “ভারত হয়তো মনে করে, ইরান অনেক দূরে। তাই স্বার্থ সরাসরি বিঘ্নিত হচ্ছে না। মনে রাখবেন, এ দেশেও ইরান জঙ্গি পাঠিয়ে ইজরায়েলের কূটনীতিকদের উপর হামলা চালিয়েছে।”
তবে পাকিস্তান প্রশ্নে কিন্তু ভারতকে সাহায্যের আশ্বাসই দিয়েছেন হিলারি। জানিয়েছেন, পাকিস্তানে যাতে হাফিজ সইদের বিচার হয়, সে জন্য যথাসম্ভব সাহায্য করবে ওয়াশিংটন। হিলারি স্বীকার করেছেন, জঙ্গি মোকাবিলায় ভারত এবং আমেরিকা যা চাইছে, পাকিস্তান তা করছে না। তিনি বলেন, “মুম্বই হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিচার চাই। আমরা না চাইলেও এ ব্যাপারে বেশি সময় লাগছে।”
ওসামা বিন লাদেনের পরে এ বার যে আল-কায়দা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি আমেরিকার লক্ষ্য, তা-ও হিলারি এ দিন স্পষ্ট করে দেন। পাকিস্তানের অস্বস্তি বাড়িয়ে তিনি বলেন, জাওয়াহিরিও পাকিস্তানে আছে বলেই আমেরিকার ধারণা। পাকিস্তান অবশ্য হিলারির এই দাবি অস্বীকার করেছে। |