তফসিলি উপজাতিভুক্ত ‘প্রতারিত’ এক মহিলাকে অবিলম্বে আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিল আদালত।
তফসিলি জাতি-উপজাতি অত্যাচার নিরোধ আইন সংক্রান্ত বিশেষ আদালতের বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল শনিবার বর্ধমানের জেলাশাসককে এই নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশে তিনি জানিয়েছেন, নির্যাতিতাকে ওই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কি না, তা আগামী ১ জুনের মধ্যে জানাতে হবে তাঁকে।
সরকারি আইনজীবী কমলকৃষ্ণ তা জানান, ঘটনার সূত্রপাত ২০০৩ সালে। মহিলা মেমারির মেলা গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘ দিন প্রণয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার পরে, স্থানীয় কালী মন্দিরে গ্রামেরই যুবক শ্রীকান্ত ঘোষ ওই মহিলাকে সিঁদুর পরিয়ে ও মালা বদল করে বিয়ে করেন। এর পরে শ্রীকান্তবাবু প্রায় প্রতি দিনই তাঁর বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু পরে মহিলা গর্ভবতী হয়ে পড়লে তিনি যাতায়াত বন্ধ করে দেন। এমনকী, ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর বিবাহবন্ধনের কথাও অস্বীকার করেন শ্রীকান্তবাবু।
এর পরে বর্ধমান সিজেএম আদালতে মামলা দায়ের করেন ওই মহিলা। আদালতের নির্দেশে ঘটনার তদন্তে নেমে ২০০৪ সালের ৪ ডিসেম্বর শ্রীকান্তবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০০৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জামিন পান ধৃত ওই যুবক। কিন্তু তার আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি অভিযোগকারিণী এবং অভিযুক্তের সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়েছিল। ১৯ জুলাই ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায়, অভিযুক্তই ওই সন্তানের পিতা। এর পরে গত বছর ২৫ জানুয়ারি ঘটনার তদন্তকারী অফিসার ডিএসপি শম্ভুনাথ রায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেন।
জানা গিয়েছে, তফসিলি জাতি-উপজাতি অত্যাচার নিবারণ আইনের ১২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, তফশিলি জাতি বা উপজাতিভুক্ত কোনও ব্যক্তির উপরে অত্যাচার হলে পুলিশ আদালতে ঘটনার চার্জশিট জমা দেওয়া মাত্রই তাঁকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর মহিলার উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের ক্ষেত্রে মোট ক্ষতিপূরণের অর্ধেক দিতে হবে তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষার সময়েই। তার পরিমাণ ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু ক্ষতিপূরণের সেই টাকা তিনি পাননি বলে অভিযোগ মহিলার।
গত বছর ১৭ মে বর্ধমানের জেলাশাসককে আদালত নির্দেশ দেয়, ওই মহিলাকে যেন ক্ষতিপূরণের টাকার অর্ধেক দিয়ে দেওয়া হয়। ১৮ অগস্ট অতিরিক্ত জেলাশাসক একটি রিপোর্ট পেশ করে আদালতকে জানিয়েছিলেন, ওই অর্থের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু বছর ঘুরলেও ক্ষতিপূরণের সেই টাকা ওই মহিলা হাতে পাননি বলে দাবি সরকারি আইনজীবীর। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার অবশ্য দাবি, “আমরা খবর নিয়ে জেনেছি, মহিলা ইতিমধ্যেই অর্ধেক টাকা পেয়ে গিয়েছেন। তবু কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে চাপ দেওয়া হচ্ছে, তা দেখতে হবে।” |