আসছে পুরভোট। ফিরছে রাজনীতির লড়াই। কিন্তু কেমন আছে দুর্গাপুর?
ওয়ার্ডে ঘুরে-ঘুরে খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। আজ ওয়ার্ড ৩৫ ও ৩৬। |
১২৬৫... ২১৬৫... ২৩৬৫...
যথাক্রমে পুরভোট (২০০৭), লোকসভা ভোট (২০০৯), বিধানসভা নির্বাচন (২০১১)...
ভোট থেকে ভোটে দিন গড়িয়েছে আর ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ধাপে ধাপে বেড়েছে তৃণমূলের ভোট। ‘ফলেন পরিচিয়তে’। অতএব তৃণমূল কাউন্সিলর কাঞ্চন চট্টোপাধ্যায় বুক ঠুকে বলছেন, “এতেই প্রমাণিত, ওয়ার্ডের বাসিন্দারা পুর পরিষেবা নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট!”
আদ্যন্ত লাল-শাসিত দুর্গাপুরে গত বার যে তিনটি ওয়ার্ডে ঘাসফুল ফুটেছিল, তার দু’টি ‘দাদা-বৌদি’র (বিশ্বনাথ পাড়িয়াল ও তাঁর স্ত্রী রুমা) ২৯-৩০। তৃতীয়টি এই কাঞ্চনবাবুর।
ডিএসপি তৈরির সময়ে ন’টি গ্রাম থেকে উৎখাত হওয়া মানুষের ঠাঁই হয়েছিল গোপালমাঠ এলাকায়। মূলত সেই গোপালমাঠ নিয়েই ৩৫ নম্বর তারই মধ্যে মেজেডিহি, নাগারবাঁধ, জগুরবাঁধ, বাগানপাড়া, ধুনুরা, ধুনুরা প্লট, পুনাবাঁধ, সুজোড়া, মোহনপুর, বনগ্রাম।
কাঞ্চনবাবুর দাবি, এলাকার ৯৯% রাস্তা পাকা। জাতীয় সড়ক থেকে গোপালমাঠ যাওয়ার প্রধান রাস্তা এখন দ্বিমুখী, মাঝে ডিভাইডার ও উজ্জ্বল আলো। কয়েক বছর আগেও যা ভাবা যেত না। প্রচুর পাকা নর্দমা হয়েছে। বিএসইউপি প্রকল্পে সাড়ে তিনশো বাড়ি। রাস্তার ধারে ১০টি পানীয় জলের সংযোগ। তিনটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ৫৫ জন বার্ধক্য ভাতা পেতেন। তা বেড়ে হয়েছে ১২০। বিধবা ভাতা পান ৫৪ জন। “সব মিলিয়ে তৃণমূল সমর্থকে সংখ্যা দিন-দিন বাড়ছে,” নিশ্চিত কাঞ্চনবাবু। |
৩৫ নম্বরে রাস্তার এই হাল। |
৩৬ নম্বরে মায়াবাজারে উপচে পড়ছে জঞ্জাল। |
|
সিপিএম নেতা মাধব মণ্ডলের পাল্টা দাবি, এর আগের দফায় তাঁদের কাউন্সিলরই জওহরলাল নেহেরু আরবান রিনিউয়াল মিশনের আওতায় অধিকাংশ কাজের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ বেরোতে দেরি হওয়ায় তাঁরা আর ‘কাজের বেলায় কাজি’ হয়ে উঠতে পারেননি। এর পরে ‘নেপোয় মারে দই’! সিপিএমের অভিযোগ, ইন্দিরা আবাস যোজনার ন্যায্য প্রাপকেরা ঘর পাননি। স্বজনপোষণ হয়েছে। খেলার মাঠ, কমিউনিটি হল, শিশু উদ্যান গড়ার উদ্যোগ হয়নি। এলাকার একটি পুকুরও সংস্কার করা হয়নি। প্রধান রাস্তাঘাট অপরিষ্কার। জঞ্জাল সাফাই হয় না নিয়মিত।
ওয়ার্ডবাসীও সন্তুষ্ট নন। সুজোড়া প্লটের চঞ্চল মিদ্যার খেদ, “পুনাবাঁধ ও জগুরবাঁধ এলাকায় রাস্তার অবস্থা খারাপ।” গোপালমাঠ মোড়ের ব্যবসায়ী চিন্টু ঘটক বলেন, “জলট্যাঙ্কের কাছে একটি শৌচাগার আছে। সেটি অপরিষ্কার, দরজা ভাঙা। বাজারে এসে মহিলারা সমস্যায় পড়েন।” ওই প্লটেরই অমিত মাজির আক্ষেপ, “দিনে আলো জ্বলে রাস্তায়।” জগুরবাঁধ বাঙালপাড়ার নিভা মণ্ডলের অভিযোগ, “প্রায় ৪০টি ঘর। কিন্তু রাস্তা বা নর্দমা হয়নি। বর্ষায় ঘরে জল ঢোকে।” ধুনুরা প্লটের উত্তম গড়াই বলেন, “নামুপাড়ায় নোংরা জল জমে। মশা মারার ওষুধ স্প্রে হয় না।”
কাজ না করায় বাম-ডান প্রভেদ নেই। অতএব ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের আরএসপি তুষারকান্তি ভট্টাচার্যও একই ‘অপরাধে’ কাঠগড়ায়।
এক সময়ে বিজেপির ‘গড়’ বলে পরিচিত এই এলাকায় জিতে রাতারাতি প্রচারে চলে এসেছিলেন তুষারবাবু। তাঁকে ক্রীড়া ও পরিবেশ দফতরের মেয়র পারিষদ করে বামফ্রন্ট। কিন্তু পাঁচ বছরের শেষে এলাকার মানুষ তাঁর উপরে তেমন খুশি নন।
ওয়ারিয়া মানা, মুঙ্গের বস্তি, নয়াবাজার, অঙ্কুরপাড়া, মায়াবাজার, পুরষা গ্রাম, ডিটিপিএস কলোনির একাংশ নিয়ে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড। ডিভিসি-ডিটিপিএসের বিদ্যুৎ বিভাগের ঠিকাকর্মী তুষারবাবুর দাবি, “মেয়র পারিষদ হিসেবে অনেক কাজ করেছি। আমরাই গ্রামে নেতাজি সঙ্ঘের মাঠ সংস্কার, পলাশডিহা খেলার মাঠে সীমানা পাঁচিল ও দু’টি ড্রেসিংরুম নির্মাণ, বীরভানপুর গ্রামে ক্লাবের মাঠে শৌচাগার, রাতুরিয়া অ্যাথলেটিক্স প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দু’টি ড্রেসিং রুম নির্মাণ উল্লেখযোগ্য।” নিজের ওয়ার্ডের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর কৈফিয়ত, “আগের দশ বছরে এখানে কোনও উন্নয়নই হয়নি। আমি আসার পরে মায়াবাজার সব্জি বাজার সংস্কার, ওয়ারিয়ার মুঙ্গের বস্তিতে কমিউনিটি সেন্টার, দিওয়ারি বস্তি ও কোলডিপোয় রাস্তার কাজ, টিউবওয়েল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ এলাকায়। কয়েকটি স্কুলবাড়ির সংস্কার করা হয়েছে।”
ওয়ার্ডবাসী বলছেন, ‘আশানুরূপ’ উন্নয়ন হয়নি। মায়াবাজারের ব্যবসায়ী জয়রাম পান্ডে বলেন, “বাজারে একটি মাত্র শৌচাগার। সেটিও জলের অভাবে ব্যবহার করা যায় না।” মায়াবাজার বাজার কমিটির সম্পাদক অসিতবরণ দাঁ জানান, নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হয় না। কাছ দিয়েই গিয়েছে ডিটিপিএসের প্রধান জলের লাইন। অথচ বাজারে কোনও সংযোগ নেই। তাঁর আক্ষেপ, “দু’টি টিউবওয়েল আছে। কিন্তু জল পড়ে না।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বিজয়নগর ও পদ্মপুকুর বস্তি অঞ্চলে কমিউনিটি শৌচাগার নেই। রেললাইনের ধারে প্রাতঃকৃত্য সারতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গিয়েছেন অনেকে। কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় কিছু দিনের মধ্যেই ফের তা বেহাল হয়ে পড়েছে। ওয়ারিয়া মানার শিবমন্দির সংলগ্ন প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা বসার জায়গা পায় না। বিজয়নগর ও পদ্মপুকুর বস্তিতে তীব্র জলকষ্ট।
কাউন্সিলর অবশ্য দাবি করেন, “পানীয় জলের সমস্যা দূর করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অধিকাংশ এলাকা ডিভিসি-র অন্তর্গত হওয়ায় কাজ করার অনুমতি পাইনি।”
তবে মন্দের ভাল, তুষারবাবুকে আর দাঁড়াতে হচ্ছে না।
|
নজরে নগর |
ওয়ার্ড ৩৫ |
ওয়ার্ড ৩৬ |
• পানীয় জলের সঙ্কট
• রাস্তা বেহাল
• জঞ্জাল সাফাই অনিয়মিত |
• পানীয় জলের সমস্যা
• রাস্তা নির্মাণে নিম্ন মানের সামগ্রী
• নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হয় না |
বেশ বড় এলাকা। সাধ্যমতো
উন্নয়নের কাজ করেছি।
কাঞ্চন বাউরি, তৃণমূল কাউন্সিলর |
অধিকাংশ বস্তি ডিভিসি-র
আওতায়। তাই কাজ করা যায়নি।
তুষারকান্তি ভট্টাচার্য, আরএসপি কাউন্সিলর |
আমাদের শুরু হওয়া কাজই
উনি রূপায়ণ করেছেন।
মাধব মণ্ডল, সিপিএম নেতা |
অনুন্নয়ন প্রকট। চাইলে
অনেক কাজই করা যেত।
কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপি নেতা |
|