লগ্নির পথ খুঁজতে রাজ্যের দল যাচ্ছে বেজিংয়ে
কেই কি বলে ভারসাম্যের কূটনীতি!
আগামিকাল কলকাতায় আসছেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। আর ঠিক তার পরেই চিনের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দলকে বেজিংয়ে পাঠাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গে চিনা বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা।
গত ২০ এপ্রিল ভারতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং ইয়ান মহাকরণে প্রায় আধ ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই মমতাকে বেজিং সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানান তিনি। মমতা এখনই নিজে যেতে পারছেন না। তবে প্রতিনিধি দল পাঠাতে সম্মত হয়েছেন তিনি। জুনের মাঝামাঝি প্রতিনিধি দলটি বেজিং যাবে।
চিনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা প্রকাশ কারাট তথা সিপিএমের ঘনিষ্ঠ হলেও মমতা সম্পর্কে তাঁদের আগ্রহ অনেক দিনের। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতায় চিনা কনসাল জেনারেল ঝ্যাং লি জং মমতার সঙ্গে দেখা করেন। রবীন্দ্রনাথ থেকে পর্যটন, শিল্প থেকে টেলিকম এমন বহু বিষয়ে চিনের আগ্রহের কথা মমতাকে জানান তিনি। মমতার বাম-বিরোধী ভাবমূর্তি সত্ত্বেও তাঁর সম্পর্কে কোনও ছুৎমার্গ রাখতে চায়নি চিন। নতুন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে কলকাতা থেকে ভারতের ‘পূবে তাকাও’ নীতির কী সুফল পাওয়া সম্ভব, তা খতিয়ে দেখতে চেয়েছে তারা। তেমনই মমতাও চিন সম্পর্কে অনীহা পোষণ করেননি।
চিন এবং আমেরিকার কূটনৈতিক সংঘাতের সম্পর্ক মমতার অজানা নয়। সেই সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে হেনরি কিসিংগারের সাহায্যে প্রথম বরফ গলিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। কিন্তু তার পরেও এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নানা টানাপোড়েন চলেছে। তবে তাদের যে পরস্পরকে প্রয়োজন, সেটাও আমেরিকা ও চিন, দুই দেশই বোঝে। এই হিলারিই কলকাতা আসছেন চিন ছুঁয়ে। সেখানে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন তিনি।
একই ভাবে ভারত ও চিনের সম্পর্ক ভালবাসা এবং ঘৃণার ওঠাপড়া। কিন্তু সম্পর্কের সেই টানাপোড়েনের কথা মাথায় না-রেখে মমতা চাইছেন শিল্প ক্ষেত্রে চিনের চমকপ্রদ সাফল্যের রহস্য কী সেটা জানতে। বেজিংয়ে প্রতিনিধি দল পাঠানোর সেটাও একটা কারণ। ওই প্রতিনিধি দলে মণীশ গুপ্তের সঙ্গে থাকছেন আইটিসি-র চেয়ারম্যান ওয়াই সি দেবেশ্বর এবং আরও দুই সদস্য। টেলিকম, পর্যটন, কৃষি, ব্যাঙ্কিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে কলকাতাকে প্রভূত সাহায্য করতে পারে চিন। সে দেশের রাষ্ট্রদূত মমতাকে জানিয়েছেন, দক্ষিণ চিনের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ খুবই সহজসাধ্য। বস্তুত, কলকাতা ও কুনমিংয়ের দৈনিক যোগাযোগ রয়েছে। নিয়মিত সম্পর্ক রয়েছে সেনঝেন এলাকার সঙ্গেও। এই যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের কৃষি ও শিল্পের নানা ক্ষেত্রে অনায়াসে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে চিন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কেও তাদের আগ্রহের কথা মমতাকে জানিয়েছে বেজিং। ১৯২৪ সালে চিন গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তার পর থেকেই সে দেশে তাঁর সঙ্গে আগ্রহ তৈরি হয়। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে সম্পর্কের সেতু তৈরি হয় চিনের। চিনা ভাষায় রবীন্দ্রনাথের প্রচুর সাহিত্যকর্ম অনুবাদ হয়েছে। চিনের বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র-সাহিত্য পড়ানোও হয়। বেজিংয়ের তরফে মমতাকে বলা হয়েছে, চিন-কলকাতা সম্পর্ক গড়ে তুলতে রবীন্দ্রনাথ কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেন। পাশাপাশি, চিনের বৌদ্ধরা প্রায়ই নালন্দা ও বুদ্ধগয়াতে আসেন। এর সঙ্গে দার্জিলিংকে যুক্ত করে একটি পর্যটন সার্কিট গড়ে তোলা যেতে পারে। এ ব্যাপারেও সক্রিয় ভূমিকা নিতে আগ্রহী চিন।
আপাতত ঠিক হয়েছে, প্রতিনিধি দল ফিরে রিপোর্ট দিলে তার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন মমতা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.