হারের দিনে থাকল শাসিত হওয়ার যন্ত্রণা
শাহরুখ খান যখন ম্যাচ জিতে তাঁকে নিয়ে ইডেন চক্কর দিতে বেরোলেন তখন কী মনে হচ্ছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের? যে, এই ইডেনে কত ভিকট্রি ল্যাপ দিয়েছি! ২০০১-এর মার্চে ভারত অধিনায়ক হিসেবে স্টিভ ওয়ের টিমের বিরুদ্ধে সেই অমর টেস্ট জয়। কত স্মরণীয় মুহূর্ত রয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে অধরা টেস্ট সেঞ্চুরির স্বপ্নপূরণ। আর আজ প্রিয় ইডেন জীবনের আর একটা কঠিন যুদ্ধ জিতিয়ে দিতে দিতেও কেড়ে নিল!
ক্রিকেটারের আবেগ হেরে গেল। জিতে বেরিয়ে গেল ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের পেশাদারিত্ব!
শনিবার রাতের ইডেনে বসে আবার মনে হচ্ছে, আত্মজীবনী লিখলে সৌরভ এই লাইনগুলো কি শুধু কেকেআর মালিকের জন্যই নির্দিষ্ট রাখবেন? নাকি সাধারণ ভাবে সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তাদের নিয়ে একই কথা লিখতে হবে? ২০১১-র আইপিএল নিলাম যে দিন তাঁর নাম ধরে হাঁকাহাঁকি হওয়ার পরেও দশটা ফ্র্যাঞ্চাইজির কেউ তাঁকে কিনল না, কেকেআর ‘বিড’ করল না, তিনি থেকে গেলেন আনসোল্ড ক্রিকেটার সেই দিনটা যদি তাঁর ক্রিকেটজীবনের অন্ধকারতম দিনগুলোর একটা হয়, তা হলে ৫ মে, ২০১২ অধিনায়ক সৌরভের হতাশতম দিনগুলোর একটা।
সে দিনের মতো কোনও নিলামকারী হাতুড়ি পিটিয়ে বললেন না যে, ‘সৌরভ গাঙ্গুলিআনসোল্ড’। এ দিন হাতুড়ির ঘা চলল নিঃশব্দে। যখন পুণের একটার পর একটা উইকেট পড়তে থাকল। আর ডাগআউটে বিহ্বল হয়ে বসে থাকলেন সৌরভ। প্রিয় ইডেনে টিম হাসফাঁস করছে দেখেও যাঁর সাত নম্বরের আগে আজ প্যাড পরার লাইসেন্স নেই। আজ ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তাদের ইচ্ছের কাছে বশ্যতা স্বীকার করে নিয়ে তাঁকে শাসিত অধিনায়কের মতো কাটিয়ে যেতে হবে ইডেনে। না হলে সাত নম্বরে নামার বিচার তিনি গুরু গ্রেগের জমানাতেও পাননি।
তফাত হচ্ছে এ বার তিনি কেকেআরের ছিলেন না। ছিলেন পুণের জার্সি গায়ে কেকেআরের বিরুদ্ধে! সেই পুণে যেখানে গিয়ে প্রথম প্রথম তাঁর মনে হচ্ছিল, এখানে কেকেআরের গুমোট পরিবেশ নেই। ফুরফুরে হাওয়া আছে। ক্যাপ্টেন হিসেবে স্বাধীনতা আছে। ঘরের মাঠে দর্শকদের ভালবাসায় সিক্ত হতে হতে সৌরভ এ দিন আবিষ্কার করলেন, তিনি ভীষণ ভাবেই ভুল ভেবেছিলেন।
ইডেনের দর্শক আবেগে ভাসতে পারে। একই সঙ্গে তাঁরা ‘দাদা’-র নামে জয়ধ্বনি দিতে পারে, আবার নাইটদের জয়ে উৎসব করতে পারে। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি আবেগ চায় না। সাফল্য চায়। দুপুরে ম্যাচ শুরুর সময় আবেগের অংশটাই বেশি করে চোখে পড়ছিল। ক্লাব হাউসের লোয়ার টিয়ারে দেখা গেল ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় বসা। পাশে কন্য সানা। পুণে ওয়ারিয়র্সের জার্সি পরা। জার্সির পিঠে নামও লেখা সানা।
রাত দশটা নাগাদ নীল জার্সি পরা যিনি প্রবল ‘দাদা দাদা’ ধ্বনির মধ্যে দিয়ে ইডেন থেকে বেরোলেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করা গেল, ব্যাটিং অর্ডারে এত পরে নামলেন কেন? অটোগ্রাফ আর ছবি তোলার হুড়োহুড়ির মধ্যে সৌরভ বললেন, “আমি এটা নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না।” একটু আগে পুণে ওয়ারিয়র্সের সহকারি কোচ দীপ দাশগুপ্ত সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে গিয়েছেন, “ব্যাটিং অর্ডার টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত।” পড়তে হবে ম্যানেজমেন্ট। কারণ টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে অধিনায়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আর অধিনায়ক ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না মানে বুঝে নিতে হবে তিনি বলে দিতে চাইছেন, ভাই এটা আমার ব্যাটিং অর্ডার নয়। আমাকে একটা স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি নাম আউড়ে গিয়েছি।
আবার ফ্র্যাঞ্চাইজিদের পাল্টা যুক্তিও থাকছে। এটা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড নয় যে, টানা আটটা টেস্টে হারলেও বিপর্যয়ের কোনও ময়নাতদন্ত হবে না। আর ক্রিকেটীয় বিপর্যয়ের মুখে যে তাঁর টিম পড়েছিল তা পুণে অধিনায়কও অস্বীকার করতে পারবেন না। এই নিয়ে পরপর পাঁচটা ম্যাচে হার। কার্যত আইপিএল সেমিফাইনালের রাস্তা থেকে ছিটকেই গেলেন তাঁরা। সৌরভের কাছে এর ব্যাখ্যা অতি সরল। “আমরা বাজে খেলছি। এ রকম খেললে আর জিতব কী করে! রোজ শুরুর দিকে টপাটপ উইকেট পড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রান তাড়া করার সময় শুরুতে অতগুলো উইকেট পড়ে গেলে জেতা খুব কঠিন হয়ে যায়।” ইডেন নিয়ে বললেন, “ইডেন সব সময়ই স্পেশ্যাল। আমার নিজের মাঠ। সারা জীবন এখানে ক্রিকেট খেলেছি। ইডেনে পা দিলেই আমার একটা অন্য রকম অনুভূতি হয়। আজও সেটা হচ্ছিল।”
এক-এক সময় মনে হচ্ছে, দাদা বনাম খান কোথায়? দাদা বনাম কেকেআর-ও নয়। লড়াইটা আসলে ছিল সাধারণ ভাবে সৌরভ বনাম ফ্র্যাঞ্চাইজি ফর্মুলা। আবেগ বনাম পেশাদারিত্বের। এমন একটা দিনে সৌরভের স্কোরকার্ডে হতাশাই লেখা থাকল বেশি। প্রাক্তন টিমের বিরুদ্ধে জিততে পারলেন না। নিজের টিমের ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তাদের নির্দেশ মেনে নিতে হল। ব্যাটসম্যান সৌরভেরও যে সঙ্গী আফশোস। ৩৫ বলে ৩৬-টা যদি ম্যাচ জেতাতে পারত!
ম্যাচের পর শাহরুখ তাঁকে টেনে নিয়ে গেলেন মাঠ প্রদক্ষিণ করতে। হয়তো সেটাই প্রিয় ইডেনে ক্রিকেটার সৌরভের শেষ দৃশ্য হয়ে থাকল। এর পর আর ফ্র্যাঞ্চাইজি দুনিয়ায় লড়াই করার জন্য পড়ে থাকবেন কি? আইপিএল নামক আধুনিক ক্রিকেট-দানব যে তাঁকে রিমোট কন্ট্রোল অধিনায়ক বানিয়েই ছাড়ল!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.